যাদুকাটা নদীতে রাঘব বোয়ালদের থাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক সুনামগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৩২

নদী তীরবর্তী সরকারি ভূমি সিন্ডিকেডের মাধ্যমে দখল করে সরকারের রাজস্ব বঞ্চিত করে যাদুকাটা নদীতে রাতে রাগব বোয়ালদের থাবায় বালি নিয়ে চলছে হরিলুট। সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এলাকার প্রভাবশালীরা তৈরি করেছেন বালি ও পাথর উত্তোলনের কোয়ারি নামক গভীর গর্ত। সেই সঙ্গে নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার কারণে কয়েকহাজার পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে ইতিমধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অসহায় গ্রামবাসী বাধা দিয়েও তাদের বাড়িঘর রক্ষা করতে পারছে না।

যুগযুগ ধরে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পরও ক্ষান্ত হয়নি বালি খেকোরা। প্রশাসনের সঠিক নজরধারি না থাকার কারণে রাজস্ববিহীন ২০টি অবৈধ কোয়ারি থেকে বালি নিয়ে চলছে হরিলুট। এর ফলে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আর অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে প্রভাবশালীরা। কিন্তু এই অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন দেখার কেউ নাই।

এই চিত্র দেখা গেছে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর দুই কিলোমিটার এলাকায়। তাই অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকারী প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নদী তীরবর্তী লাখ লাখ অসহায় জনসাধারণ।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গাগটিয়া জালরটেক হতে অদৈত মহাপ্রভুর বাড়ির পশ্চিমপাড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শিমুল বাগান হয়ে মানিগাঁও, মাহারাম, শান্তিপুর, চাঁনপুর পর্যন্ত আরো দুই কিলোমিটারসহ কলাগাঁও, চাঁরাগাঁও এলাকায় চলছে অবৈধভাবে বালি বিক্রির মহোৎসব।

এসব এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত শতাধিক ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে প্রায় ১৫ লাখ টাকার বালি অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি নৌকায় বোঝাই করা হয় ৭০০ থেকে এক হাজার ফুট বালি। আর অবৈধ বালি বোঝাই ইঞ্জিনের নৌকাগুলো যাদুকাটা নদী হয়ে রক্তি, পাটলাই ও সুরমা নদীপথ দিয়ে জামালগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকায় যাচ্ছে।

গোপন সূত্রে ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইঞ্জিনের নৌকায় অবৈধভাবে বালি বোঝাই করার সময়-বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয় দিয়ে, গাগটিয়া গ্রামের আলীম উদ্দিন অবৈধ কোয়ারি থেকে, কামড়াবন্দ গ্রামের ইব্রাহিম মিয়া যাদুকাটা নদীর অবৈধ বালি থেকে এবং মানিগাঁও গ্রামের জালাল মিয়া প্রতিফুট বালি থেকে এক টাকা করে চাঁদা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়ে প্রতিফুট বালি থেকে দুই টাকা চাঁদা নিচ্ছে স্থানীয় সংবাদকর্মী নামধারী একজন। তার বিরুদ্ধে মাদক ও চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কখনোই পদক্ষেপ না নিলেও উল্লেখিত ব্যক্তিদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এই বিষয়ে অভিযুক্তদের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

উপজেলা প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালি বোঝাই নৌকা আটক করলেও বালি খেকো এলাকার চিহ্নিত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কখনোই আইনগত পদক্ষেপ নেয় না। যার ফলে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও বিক্রি আজ পর্যন্ত বন্ধ হয়নি।

চাঁদা উত্তোলনকারী সোর্সদের ব্যাপারে বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্পের ইনর্চাজ এসআই মাহমুদুল বলেন, অবৈধভাবে বালি-পাথর বিক্রি কিংবা চাঁদা উত্তোলনের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা এবং আমার ক্যাম্পের কোনো সোর্স নাই, এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখব। অন্যায়কারীদের ছাড় দেয়া হবে না। আমি আমার অবস্থা থেকে কঠোর নজরদারি রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা অবৈধভাবে বালি ও পাথর উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৫অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :