ওষুধ হিসেবে ম্যাজিকের মতো কাজ করে নারিকেলের দুধ
নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী উদ্ভিদ। যার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে কোকোস নিউসিফেরা। এটা এমন এক বৃক্ষ যার প্রতিটি অঙ্গ জনজীবনে কোন না কোন ভাবে কাজে আসে। এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, কান্ড, শিকড় সব কিছুই বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্পের কাঁচামাল, হরেক রকম মুখরোচক নানা পদের সুস্বাদু খাবার তৈরির উপকরণ, নারিকেল তেল, পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, সুস্বাদু পানীয়, রোগীর পথ্য, এতসব গুণে গুণাম্বিত পৃথিবীর অপূর্ব গাছ।
নারিকেল খেতে খুবই সুস্বাদু। কাঁচা অবস্থায় একে ডাব বলা হয়, যার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। পাকার পর এটাকে ঝুনা নারিকেল বলা হয়। উৎসবে নাড়ু, ছাপ সন্দেশ, পায়েস, ফিরনি, জর্দা থেকে শুরু করে নারিকেলের নানা পদ বেশ লোভনীয়।
নারিকেলের গুণ জানলে লোভ আরও বাড়বে। প্রতি ১০০ গ্রাম নারিকেলে আছে ৩৫৪ ক্যালরি, ৩৩ গ্রাম ফ্যাট, ২০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৩৫৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ৩.৩ গ্রাম প্রোটিন আছে। এছাড়াও ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি-৬ ও বি-১২ আছে।
নারিকেল বিশেষ কিছু ভাইরাস ধ্বংস করে। যে সব ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, হার্পিস, মামস ইত্যাদি রোগ জন্ম দেয়, নারিকেল সেসব ভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম। ফলে এ ধরনের অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আলসার, গলার ইনফেকশন, ইউরিন ইনফেকশন, মাড়ির রোগ, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করতেও নারিকেলের ভূমিকা অপরিসীম।
হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। নারকেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহা বা আয়রন পাওয়া যায় যা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে ও অ্যানিমিয়ার সমস্যা রোধ করে। নারিকেলে মজুত ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যকে দূরে সরিয়ে রেখে হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
শরীরের প্রোটিন গঠনে মোট ২০টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ১৭টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের জোগান দেয় নারিকেল। এর মধ্যে থ্রিওনাইন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়, যা লিভার, স্নায়ুতন্ত্র ও কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেকে ঠিক রাখে।
ফলেট যা কিনা এক ধরনের বি ভিটামিন। যা হজম ক্ষমতা ঠিক রাখে। নিয়মিত নারিকেল খেলে দিনে ২০ শতাংশ ফলেট শরীরে পৌঁছে যায়।
নিয়মিত নারিকেল খেলে ত্বক কোমল ও সুন্দর হয়। এছাড়াও নিয়মিত নারিকেল খেলে ত্বকে সহজে বয়সজনিত বলিরেখা পড়ে না।
নারিকেলের দুধে ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ থাকায় তা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেশির চাপ কমিয়ে রক্ত চলাচলকে স্বাভাবিক রাখে।
নারকেলের দুধে ট্রাইগ্লিসারাইডস থাকায় তা মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। রোজ ২০০ গ্রাম নারকেল খেলে মাত্র ৩ মাসেই কমে পেটের মেদ।
নারিকেল দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সর্দি-কাশির সমস্যা কমায়।
রোদে পোড়া ত্বকের উপর নারিকেলের দুধ লাগিয়ে রাখলে চার সপ্তাহেই ফল পাওয়া যায়।
শরীরে কোনও জায়গায় ব্যথা হলে বা ত্বকের কোথাও ফুলে গেলে নারিকেলের দুধ দিয়ে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। নারিকেলের দুধে থাকা ফ্যাট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
বাজার চলতি রিমুভার না কিনে মেকআপ তুলতে দুই চামচ নারিকেলের দুধ মুখে লাগিয়ে নিন। এরপর হালকাভাবে হাত দিয়ে মালিশ করে তুলো দিয়ে মুছে ফেলুন। নারিকেলের পানিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালশিয়াম যা হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক।
সাইটোকাইনিন নামক হরমোন নারিকেলে থাকায় ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
(ঢাকাটাইমস/৭অক্টোবর/আরজেড/এজেড)