কৃত্রিম প্রজননে গরুর বাচ্চা উৎপাদন: ৭৬ সালের ২৬ হাজার এখন ১৪ লাখে

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২০, ১৮:২১ | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০২০, ১২:৩৯
মূল সিমেন সরবরাহ হয় সাভারের কেন্দ্রীয় কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার থেকে। এরপর যে ২১টি জেলায় কেন্দ্র আছে সেখানকার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট আছে। আগামীতে ৬০ জেলায় সিমেন সরবরাহের কেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

দেশে কৃত্রিম প্রজননে গরুর বাচ্চা উৎপাদন দিনেদিনে আরও আশার আলো ছড়াচ্ছে খামারিদের মনে। ১৯৭৬ সালে নেয়া এই কার্যক্রম দেশে গরুর চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি অবদান রাখছে গবাদিপশু পালনেও। শুরুর বছরে কৃত্রিম প্রজননে ২৬ হাজার বাচ্চা উৎপাদন হলেও চার দশকেরও বেশি সময় পরে এসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখে।

কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নত জাতের ষাঁড়ের শুক্রাণু ব্যবহার করে সুস্থ গাভীর মাধ্যমে প্রজনন করে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। দেশের গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার’ জাতীয় গো-প্রজনন কেন্দ্র হিসাবে এ কার্যক্রম চালাচ্ছে। সাভারে ৭৯২ দশমিক ৮৭ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে এ খামার।

সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখানে বিভিন্ন জাতের মোট ব্রিডিং ষাঁড় রয়েছে ১৫৬টি। একটি ষাঁড় থেকে সাধারণত একবারে ৫০০ ডোজ সিমেন সংগ্রহ করা হয়। দেশীয় গবাদি পশুর জাতের ক্রমোন্নয়নের লক্ষ্যে ‘সুপিরিয়র বুল কাফ’ পালনের মাধ্যমে উন্নত প্রজনন ষাঁড় থেকে ‘সিমেন’ সংগ্রহ করা হয়। পর্যায়ক্রমে চাহিদা অনুযায়ী সারাদেশে খামারিদের নিকট এ সিমেন সরবরাহ করা হয়। এই পদ্ধতিতে ১৯৭৬-১৯৭৭ অর্থবছরে ২৬ হাজার ৭৮২টি গরুর বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। আর ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৮টি বাচ্চা উৎপাদন হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ ঢাকা টাইমসকে বলেন, দেশ এখন মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন ভারতীয় গরু ছাড়াই কোরবানির চাহিদা মিটে যায়। এর প্রধান কারণ দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের বিশাল উন্নয়ন।

‘এখান থেকে সারাদেশে উন্নত জাতের গরু ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে মাংস ও দুধ উৎপাদন বেড়েছে, এটা সরকারের সফলতা। যতটুকু গ্যাপ আছে সেটা পূরণ করতে কাজ করছে সরকার। কৃত্রিম প্রজনন মাধ্যমে দেশের গো-সম্পদ উন্নয়নে আমরা ডেইরি ফার্ম করার জন্য সাপোর্ট দিচ্ছি। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে যে গরু যে বাচ্চা দিবে তার আকারও অনেক বড় হবে।’

জাকির হোসেন আকন্দ আরও বলেন, ‘দেশের গো-সম্পদ উন্নয়নে দুইটি জিনিস দরকার। একটা মাংসর উৎপাদন বাড়ানো আর একটা হলো দুধ। দুধ উৎপাদনে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। ভারত কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে তাদের জাত উন্নয়ন এমনভাবে করেছে যে তাদের প্রতিটি গাভি গড়ে ১০ থেকে ১২ লিটার দুধ দেয়। অথচ আমরা এখনও তিন লিটারে আটকে আছি। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে আমরা সেই টার্গেটে পৌঁছাতে চাই।

‘আমরা মাংস উৎপাদন অনেক বাড়াচ্ছি। সাধারণত দেশি ষাঁড়ের ওজন বড়জোর ৫ থেকে ছয় মন হয়। কিন্তু আমাদের খামারে ২৫ মন পর্যন্ত ওজনের ষাঁড় আছে। আমরা এসব উন্নত জাতের ষাঁড়ের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন করাচ্ছি।’

বাংলাদেশ এখন মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন। মাথাপিছু দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে ১২৬ দশমিক ২০ গ্রাম মাংসের যোগান নিশ্চিত সম্ভব হয়েছে। আর দেশে বার্ষিক দুধ উৎপাদন ১০৬ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে দেশে মাথাপিছু দৈনিক দুধের চাহিদা ২৫০ মিলিলিটারের বিপরীতে মানুষ পান করছে ১৭৫ দশমিক ৬৩ মিলিলিটার।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আব্দুল জব্বার শিকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিশ্বের নানা দেশ থেকে উন্নত জাতের ষাঁড় সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ষাঁড়ের জাত কৃষক ও খামারি পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আলী ঢাকা টাইমসকে জানান, খামারে উৎপাদিত উন্নত প্রজনন ষাঁড় থেকে কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগারে সিমেন সংগ্রহ করা হয় এর পর প্রক্রিয়াজতকরণ ও সংরক্ষণ করে জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়। ২১ জেলায় এখন সেন্টার আছে। সেখান থেকে চাহিদার মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়। দেশব্যপী কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ অব্যহত রয়েছে।

সিমেন উৎপাদনের তথ্য জানিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩৬ সিসি তরল সিমেন উৎপাদন হয়েছে। আর হিমায়িত সিমেন উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ৩৭ হাজার ২৬০ সিসি।’

কোনও খামারির সিমেন সংগ্রহের প্রয়োজন হলে উপজেলা পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্টে যোগাযোগ কারার আহবান জানিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মূল সিমেন সরবরাহ হয় সাভারের কেন্দ্রীয় কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার থেকে। এরপর যে ২১টি জেলায় কেন্দ্র আছে সেখানকার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট আছে। আগামীতে ৬০ জেলায় সিমেন সরবরাহের কেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।’

(ঢাকাটাইমস/০৮অক্টোবর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :