‘মসজিদ মিশন একাডেমিতে স্বাধীনতাবিরোধীদের অস্তানা থাকবে না’

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০২০, ২১:৪৩

রাজশাহীর নগরীর মসজিদ মিশন একাডেমিকে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে রাজশাহী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এই সমাবেশের আয়োজন করে।

এতে বক্তারা বলেন, এখন থেকে মসজিদ মিশন একাডেমিতে দেশের জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাঠদান করতে হবে এবং এই প্রতিষ্ঠানে সকল ধর্মের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করবে। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বাধীনতাবিরোধী ও নাশকতা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অতীতে এই প্রতিষ্ঠান থেকে জামায়াত-শিবিরকে বোমা বানাতে ১১ কোটি টাকা সরবরাহ করা হয়েছে। এখানে আর স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্তানা করতে দেওয়া হবে না।

জামায়াত নিয়ন্ত্রিত মসজিদ মিশন সংস্থা পরিচালিত মসজিদ মিশন একাডেমিতে ১১ কোটি টাকার অধিক দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আয়োজিত এই সংহতি সমাবেশ প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।

অনুষ্ঠানে মেয়র খায়রুজ্জামান বলেন, ধর্ষণের প্রতিবাদের আন্দোলনের ওছিলায় রাজশাহীতে শিবির মিছিল বের করেছে।

তিনি বলেন, তারাও ধর্ষণকে সমর্থন করেন না। কিন্তু জামায়াত-শিবির এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে মাঠে নামার বিষয়ে তিনি পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

তিনি বলেন, মসজিদ মিশন একাডেমিকে স্বাধীনতাবিরোধীরা আস্তানা গড়েছিল। এই আস্তানা আর থাকতে দেওয়া যাবে না। তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজশাহীতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তিনি তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

সমাবেশে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এই মসজিদ মিশন একাডেমি বন্ধ করা হচ্ছে- এই ধোঁয়া তুলে জামায়াত মাঠে নামার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, তারা এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করতে চান না। বরং সরকার যদি এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারিকরণ করে তাহলে তারাই সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন। তখন এই প্রতিষ্ঠানে সকল ধর্মের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারবে। এখানে জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে। জাতীয় পতাকা উঠবে। অতীতে যা করা হয়নি।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ক্ষমতায় আসার পরে তাদের এই প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শিক্ষকেরা সরকারের বেতন নিবেন আর সেখানে স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্তানা গড়ে তুলবেন এটা হতে দেওয়া যাবে না। অতীতে এখান থেকে বাংলা ভাইয়ের মিছিলে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। এখন দিন বদলেছে।

তিনি বলেন, তারা চোর। দুর্নীতি করেছে, এটা হাজারবার প্রমাণ করা যাবে। তাদের দুর্নীতির তদন্তের গতি যেন ধীর না হয় তার জন্য তিনি প্রশাসনকে আহবান জানান।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজশাহী মহানগর শাখার সাবেক কমান্ডার আব্দুল মান্নান, ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক, রাজশাহী মহানগর জাসদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ শিবলী, সিপিবির রাজশাহী জেলার সভাপতি এনামুল হক, ন্যাপের রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান খান।

সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ।

প্রসঙ্গত, মসজিদ মিশন একাডেমি ১৯৭৬ সালে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নেয়। পরে তারা রাজশাহীতে একে একে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। নিবন্ধন নেওয়ার পর মসজিদ মিশন সংস্থা কোন দিন অডিট করায়নি। নিজেদের ইচ্ছে মতোই কমিটি করা হয়। মসজিদ মিশন ও তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত।

প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ১১ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির ১১ কোটি টাকার কোন হদিস নেই। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মসজিদ মিশন একাডেমির প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এসব জানাজানির পর প্রতিষ্ঠানটিকে এখন ঢেলে সাজানোর দাবি উঠেছে। এ নিয়ে একাট্টা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজশাহীর সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংষ্কৃতিক সংগঠন। তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

(ঢাকাটাইমস/৮অক্টোবর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :