সাক্ষাৎকারে ডিএনসিসি কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ

‘জনপ্রতিনিধি না জনগণের সেবক হিসেবে থাকতে চাই’ (পর্ব-১)

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০২০, ০৮:২২ | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২০, ০৮:২৬

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ। চলতি বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। সম্প্রতি ঢাকাটাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেছেন,  জনগণের সেবার ব্রত নিয়ে রাজনীতিতে আগমন করেছিলেন তিনি। কাজ করে চলেছেন আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে। লক্ষ্য- সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা। সে জন্য তিনি নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন।

কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ বলেন, শুধু জনপ্রতিনিধি হিসেবে নয়, তিনি তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের সেবক হিসেবে থাকতে চান। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন তিনি।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার কাজী রফিক

আপনার রাজনীতিতে আসার কারণ কী?

রাজনীতিতে আসার একটা বড় কারণ হলো, আমরা পারিবারিকভাবে অনেক দিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। আমার চাচারা অনেক দিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন, এখনো আছেন। তাদের দেখাদেখি রাজনীতিতে আসার একটা একটা শখের জায়গা তো তৈরি হয়ে ছিলই। সেই সঙ্গে সমাজসেবামূলক কিছু কাজ করা, দেশের উন্নতির কাজে কন্ট্রিবিউশন করা এবং স্থানীয় অনেক বিষয় আছে, যেমন- অনেকে অন্যায় এবং অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তাদের সঙ্গে থেকে কাজ করা আর জনগণের সেবা করার উদ্দেশ্য নিয়ে মূলত আমার রাজনীতিতে আসা।

জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর কী ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন এবং এখন কী নিয়ে কাজ করছেন?

আমার ওয়ার্ডটা ঢাকার একটি বৃহত্তম ওয়ার্ড। এখানে অনেক সমস্যা আছে। ইতিমধ্যে আমি মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমি এটা বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে যেভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, আমরা যদি তারই দলের কর্মী হয়ে তাকে একটু সহযোগিতা করতে পারি; সহযোগিতা বলতে আমি যদি আমার ওয়ার্ডটাকে ‘নিট অ্যান্ড ক্লিন’ রাখতে পারি, সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত রাখতে পারি, তাহলে এটা আমার দলের জন্য সুনাম হবে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনেক দায়িত্ব থাকে। দায়িত্বগুলো যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি সে চেষ্টা আমার মূল লক্ষ্য। জনগণের পাশে থেকে তাদের সেবা ও তাদের জন্য যেন কাজ করে যেতে পারি। দলের ভাবমূর্তি যাতে ঠিক থাকে, সেটাই আমার মূল উদ্দেশ্য।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিলেন। বর্তমানে আপনার ওয়ার্ডে মাদকের অবস্থা কী?

আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে নেমেছিলাম, সেখানে একটা সমস্যা হচ্ছে। আইনের ফাঁকফোকর আছে। যার জন্য আমরা এখন অনেকটা কাজ কমিয়ে দিয়েছি। আমি মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে ধরে পুলিশে দিচ্ছি। কিন্তু তারা দুই দিন পরে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। আমি এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ ও র‌্যাব যথেষ্ট কাজ করছি। কিন্তু আইনের ফাঁক থাকে, যার কারণে তারা ছাড়া পেয়ে যায়। যে পরিমাণ মাদক আমরা তাদের কাছে পাই, সে পরিমাণ মাদক দিয়ে তাদের বেশি দিন আটকে রাখা যায় না। দুই দিন পরে দেখা যাচ্ছে সে মাদকের সঙ্গে জড়িত হয়ে যাচ্ছে। একই লোককে যখন আমি বারবার ধরতে যাবে, সে একটু উৎসাহ পেয়ে যাচ্ছে। সে ভাবছে- পুলিশ, প্রশাসন, কাউন্সিলর সবাই আমার বিরুদ্ধে কাজ করেও কিছু করতে পারছে না। তারা ব্যবসা বড় করে ফেলছে। আমাদের মাননীয় আইনমন্ত্রী যদি আইনগুলো একটু পরিবর্তন করে দেন, তাহলে আমাদের জন্য ‘নিট অ্যান্ড ক্লিন’ করতে সুবিধা হয়। এখনো আমার মাদকবিরোধী কার্যক্রম চলছে।

মোহাম্মদপুরের ৫ দশমিক ৫৯২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডটি আয়তনে অনেকটা বড়। এত বড় ওয়ার্ড সামাল দিতে কোনো সমস্যা পোহাতে হচ্ছে কি না?

আমি একটি কর্পোরেট সিস্টেম চালু করেছি। আমার ফেসবুক পেইজে দেখবেন, যেটা আমার প্রধান কাজ মশক নিধন, বর্জ্য অপসারণ, এলাকার লাইট স্থাপন ও তদারক এবং উন্নয়ন করা। এ জন্য আমি একটা আলাদা সেক্টর করে দিয়েছি। আলাদা আলাদা ফোন নম্বর দিয়েছি। আমার নম্বর থেকে শুরু করে মশকের জন্য আলাদা, বর্জ্যের জন্য আলাদা, ইলেকট্রিক ম্যানের জন্য আলাদা নম্বর দেওয়া আছে। আমি যাদের দায়িত্ব দিয়েছি, তাদের ফোন করবেন। তাদের যদি না পান তাহলে আমাকে জানাবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল মাধ্যমের ওপরে খুব মনোযোগ দিয়েছেন। দেশকে ডিজিটালাইজড করতে কাজ করছেন। আমিও নির্বাচনের আগে কথা দিয়েছিলাম, ডিজিটাল ওয়ার্ড করব। সে ক্ষেত্রে আমি সবাইকে বলি হোয়াটসঅ্যাপসহ সোশ্যাল সাইটগুলো ব্যবহার করতে। কোথাও যদি কোনো কাজ না হয় সেটা সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিব। আপনার বাসার সামনে ময়লা পড়ে আছে। আপনি আমাকে ছবিটা পাঠালে আমি ব্যবস্থা নিব। আমি লোক পাঠাব। তারা যদি না যায় বা তারা কি কাজ করল আমি দুই দিন পরে সেটা ফলোআপ করব।

কাজটা আমি খুব সহজভাবে করে ফেলেছি। বিভিন্ন জোন তৈরি করে ফেলেছি। এর মধ্যে বছিলা, কাদেরাবাদ এবং মোহাম্মদীয়া হাউজিং-চাঁদ হাউজিং এলাকা মিলিয়ে একটা জোন করেছি। এভাবে আমি কাজগুলো ব্যবস্থাপনা করছি। খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার শুরুতেই করোনাকাল এবং লকডাউন পেয়েছেন। কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন?

আমি নিজেও একটি বড় অঙ্কের ত্রাণ দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের মেয়র মহোদয় আমাকে অনেক আলু, পেঁয়াজ এবং চাল দিয়ে সাহায্য করেছেন। আমাদের সিটি করপোরেশন থেকে ভোটার অনুযায়ী ত্রাণটা আসে। আমার পাশের ওয়ার্ডে একটা অ্যামাউন্ট আসবে। তার থেকে বেশি আসবে আমার ওয়ার্ডে। কারণ আমার ওয়ার্ডটা বড়। সে ক্ষেত্রে আমি ৩৪ হাজারের বেশি পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছে। কেবল রোজার ঈদের আগের দিন সকাল ১১টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার মানুষকে ত্রাণ দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে আমি ত্রাণটা দিয়েছি। আমি চেষ্টা করেছি একবার করে হলেও যেন সবাই ত্রাণটা পায়। একজন যেন একাধিকবার না পায়। স্কুল, মাদ্রাসাসহ যখন যেখানে দরকার ছিল সেখানে ত্রাণ দিয়েছি।

অনেক সামাজিক লোক আছেন, যারা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন, কেউ চাল দিয়ে গেছেন। আল্লাহর রহমতে আমি সহজভাবে কাজ করে যেতে পেরেছি। ৩০ দিন আমি টানা ত্রাণ দিয়ে যেতে পেরেছি। এটার জন্য আমি অশেষ ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, আমার মেয়র মহোদয়কে এবং আমার এমপি মহোদয়কে। তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। যেহেতু আমার এলাকাটা বড় ওয়ার্ড, আমি বলার সঙ্গে সঙ্গে তারা সহযোগিতা করেছেন। আমাদের বরাদ্দের একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। তাদের অনুরোধ করেছি। তারা অনুরোধটা সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করেছেন।

নাগরিকরা নাগরিক সুবিধা চায়, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের নাগরিক দায়িত্বগুলো পালন করেন না। এ বিষয়ে কী বলবেন?

আমি কর্পোরেট সিস্টেমে নম্বর দিয়েছি। যার মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের সেবা পাবেন। কিন্তু তারা কখনোই ওই নম্বরগুলোতে ফোন করেনি। আমি নিয়মিত খবর নিই। কিন্তু কর্মীরা জানান, তাদের কোনো ফোন করা হয়নি। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার করি, এছাড়া যেভাবে প্রচারটা করা যায় আমরা করছি। কিন্তু নাগরিকরা খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। তাদের আগ্রহ তৈরির জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা যদি আগ্রহটা না দেখায়, আমরা পুরোপুরি কাজ করতে পারব না।

নাগরিকদের অনেকে বলেন, রাস্তা পরিষ্কার হয় না। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বলেন, ‘স্যার, রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়ে আসি। কিন্তু তারপরও ময়লা ফেলে।’ তখন আমি আমার কর্মীদের বলি, ‘দেখো তারা ময়লা ফেলে এটা দোষের না। আমরা ময়লা না তুললে সেটা দোষ।’ এখন কথা হচ্ছে, ময়লাটা রাস্তায় ফেলে তারপর বলবেন এই যে কাউন্সিলররা কাজ করেন না, এমনটা হলে তো রাস্তা পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন। ময়লাটা ডাস্টবিনে ফেলুন। প্রতিদিন দুবার আপনার বাসা থেকে ময়লা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আপনি যদি সচেতন না হন আমার পক্ষে তো আপনাকে সচেতন করা সম্ভব না। বেশি সচেতন করতে গেলে আপনি বলবেন, কাউন্সিলর আমাদেরকে শাসন করতে যাচ্ছে। কিন্তু শাসন তো আমি করতে যাচ্ছি না।

(ঢাকাটাইমস/০৯অক্টোবর/মোআ)