সাক্ষাৎকারে ডিএনসিসি কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ

‘আজন্ম মানুষের সেবা দেয়াই আমার অঙ্গীকার’ পর্ব-২

প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৪১ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০, ১৫:৩২

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ। চলতি বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। সম্প্রতি ঢাকাটাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেছেন,  জনগণের সেবার ব্রত নিয়ে রাজনীতিতে আগমন করেছিলেন তিনি। কাজ করে চলেছেন আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে। লক্ষ্য- সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা। সে জন্য তিনি নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন।

কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ বলেন, শুধু জনপ্রতিনিধি হিসেবে নয়, তিনি তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের সেবক হিসেবে থাকতে চান। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন তিনি।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার কাজী রফিক

তারুণ্যের কাউন্সিলর হিসেবে আপনি সুপরিচিত। তরুণদের নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী কাউন্সিলর আমি। মাঠে থেকে কাজ করতে পছন্দ করি এবং আমি নিজে কাজ করতে পছন্দ করি। অনেকেই আমার এ বিষয়টা পছন্দ করেছেন, সাদরে গ্রহণ করেছেন। আমি একেক সময় সিডিউল করে একসময় ছাত্রলীগকে নিয়ে বের হই, কখনো যুবলীগকে নিয়ে বের হই। কেন? এর একটি কারণ হলো তাদের সক্রিয় রাখা।

তরুণ প্রজন্মের যারা আছেন, যারা রাজনীতিতে জড়িত নন, তাদের আমি বলি, তোমরা কেন রাজনীতিকে নিরুৎসাহিত করো? তুমি আসো। তুমি যদি একজন রাজনীতিবিদ হতে পারো, তুমি যদি একজন সৎ মানুষ হতে পারো, তোমাকে দেখে আর দশজন শিখবে। অনেকে আছেন অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। তাদের টাকা-পয়সা দরকার পড়ে না। তাদের আমি বেশি করে বোঝাই। তুমি যদি আসো তাহলে তুমি আর দশটা ছেলে তোমাকে দেখে শিখবে যে এরা কাজ করে, দুর্নীতি করে না। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলা। এটার জন্য যা যা করা দরকার আমি সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

ডিএনসিসির হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় কার্যক্রম ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শুরু হয়েছিল। এ বিষয়ে কাউন্সিলর হিসেবে আপনি কী ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন?

আমি উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম কাউন্সিলর যে সিস্টেম চালু করেছি ট্যাক্সের পেপার কাউন্সিলর অফিসে জমা দিতে হবে। সেটা আপডেট থাকুক বা না থাকুক। আমি এই ট্যাক্সের বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ২৫ বছর ধরে আছেন অথচ সে কোনো হোল্ডিং ট্যাক্স দেয় না। এমনও অভিযোগ শুনেছি যে, পাঁচতলা ভবন, অথচ কাগজে-কলমে দেখানো আছে সেটা খালি প্লট।

মেয়র মহোদয় আমাদের কাউন্সিলরদের সম্মান করে একটি কথা বলেছেন যে, ‘তুমি যে টাকা আমার জন্য নিয়ে আসবা, সেই টাকা আমি তোমাকে দিব তোমার ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য।’ এর চাইতে ভালো কথা তো আর হতে পারে না। ট্যাক্স কালেকশনে আমার অভিযান সারা বছর চলবে। এ কার্যক্রমে আমি যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। পাশাপাশি সাইনবোর্ডের বিষয়ে অনেক ব্যবসায়ী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমি তাদের কাজটা করে দিচ্ছি। আমি পুরো ক্রেডিটটা আমাদের মেয়র মহোদয়কে দিব।

সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকায় কী কাজ করা হচ্ছে এবং কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?

বেড়িবাঁধ সড়কের পশ্চিম পাশে যে এলাকাগুলো রয়েছে, সেখানে এখনো রাস্তাঘাট সেভাবে গড়ে ওঠেনি। সেখানে ময়লা কালেকশনের ব্যবস্থা করেছি, লাইটের ব্যবস্থা করেছি। একটা সমস্যা আছে, আমার জনবল কম। আমার গোডাউনে লাইট আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে লাইটগুলো লাগাতে পারছি না। নতুন করে নিয়োগ হচ্ছে। নিয়োগ হলে এই সমস্যাগুলো সমাধান হবে।

নবীনগর নামে একটি এলাকা আছে। ঢাকা শহরের মধ্যে এ রকম একটা কাদাযুক্ত, অনুন্নত এলাকা থাকার কথা না। ইতিমধ্যে আমরা সার্ভে করা শুরু করেছি। এখানে অনেকে মনে করছে যে সিটি করপোরেশন রাস্তার কাজ করছে না। কিন্তু হাউজিং কোম্পানি আমাদের রাস্তা বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছে না। কোনো একটা কারণে তারা এটা দিতে যাচ্ছে না। আমরা তাদের জোর করতে পারব না। আমি অনেকগুলো সভা করেছি, তারা শুধু আশ্বাস দেয়। এভাবে আশ্বাস দিতে দিতে অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে। এবার আমি খুব শক্ত হাতে এগুলোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আমি বছিলার এমন একটি জায়গায় মশার ওষুধ স্প্রে করেছি সেখানে একজন বৃদ্ধ লোক আমার হাত ধরে কেঁদে দিয়েছে। কারণ ৪০ বছরে ওখানে মশার ওষুধ স্প্রে করা হয়নি। আমি আমার বাসার নিচে মশার ওষুধ এবং তেলটা রাখি। কারণ হলো বেড়িবাঁধের পশ্চিম দিকে যে এলাকাগুলো আছে সেগুলো আমার ওয়ার্ডের, কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়। কিন্তু তারপরও আমি সে এলাকায় সেবা দিচ্ছি। আমি বছিলা ও বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে যে হাউজিংগুলো আছে, সেখানে কমবেশি করে সপ্তাহে এক দিন মশার ওষুধ দিচ্ছি। আমি কিন্তু জনগণকে বুঝতে দিচ্ছি না যে, তাদের এলাকাটা আমার টেরিটরির ভেতরে, কিন্তু সিটি করপোরেশনে অধিভুক্ত না। তারপরেও অনেকেই কম-বেশি আশা করে। কারণ আমি তাদের কাউন্সিলর। তাই যতটুকু সেবা দেওয়া দরকার, আমি ততটুকু সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। আজন্ম মানুষের সেবা দিতে চাই। আর এটাই আমার অঙ্গীকার।

বর্ধিত এলাকাগুলোতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তিতাসের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে পুনরায় সংযোগ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

গ্যাস আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে কখনো চাই না রাষ্ট্র ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হোক বা রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি হোক। সরকার যখন মনে করবে যে গ্যাসের সংযোগ দেবে, তখন তারা গ্যাসের লাইন নেবে। এ ছাড়া সরকার তো ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যারা চোরাই লাইন ব্যবহার করছে, সেগুলো বদলে এলপিজি ব্যবহার করুক। অনেক বাসাবাড়িতে এলপিজির ব্যবহার করা হচ্ছে। কতিপয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় কিছু লোক অবৈধ সংযোগের কাজটা করছে।

নাগরিকদের উদ্দেশে কী বলবেন?

আপনারা আমাদের ট্যাক্স দিন। আপনারা আমাদের আপনাদের সমস্যা জানান। যেন আমরা কাজ করতে পারি। আপনার ঘরের ভেতরে কী হবে আমি জানি না। কিন্তু আপনি যদি বলেন, আপনার ঘরে মশা কামড়াচ্ছে বা কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে আমাদের জানান। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমাদের সুযোগ দিন। আমরা জনগণের হয়ে কাজ করছি। আমার জনগণের কাছে একটাই অনুরোধ- আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। সহযোগিতা করে আমাদের কাজ করার সুযোগ দিন। দেখুন, আমি জনপ্রতিনিধি না জনগণের সেবক হিসেবে থাকতে চাই। 

ঢাকাটাইমস/১০অক্টোবর/কারই