যমুনা পারের অসহায় মানুষের কান্না!

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ১০ অক্টোবর ২০২০, ১৯:২১

করোনা-বৃষ্টি-বন্যা এই তিন দুর্যোগে সিরাজগঞ্জের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন বন্যায় ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একদিকে কাজ না থাকায় আয়ের পথ বন্ধ। অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় একেকজনের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জেলার প্রায় ৩০ হাজার পরিবার এমন ক্ষতির শিকার। যমুনার পানি কমতে থাকায় ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও ঘর-বাড়ি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে যমুনা পাড়ের মানুষ। তাদের কান্না শোনার যেন কেউ নেই।

শনিবার দুপুরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার সীমলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাঁচ ঠাকুরী গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে ভাঙনে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি, বসতভিটা, গাছপালা, ফসলি জমি ও বৈদ্যুতিক খুঁটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন ভাঙন কবলিত মানুষগুলো। ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা নিক্ষেপ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ভাঙন কবলিতদের অভিযোগ, চলতি বন্যায় পাঁচ ঠাকুরী এলাকায় চতুর্থবারের মতো এই ভাঙন দেখা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে এই এলাকায় বারবার ভাঙন দেখা দিচ্ছে। দ্রুত ভাঙন রোধ করা না হলে হুমকির মুখে পড়বে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আশপাশের ২০টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।

ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অবস্থান করা জুরান আলী (৫৫) বলেন, কাওয়াকোনা ইউনিয়নের শয়াশিখা গ্রামের বাড়িতে পানি ওঠায় প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বাঁধে রয়েছি। বর্তমানে ঘর-বাড়িতে পানি নেমে গেছে। কিন্তু ঘরের ভিতরে থাকা জিনিসপত্রসহ ধান, চাল সব নষ্ট হয়ে গেছে।

জুরান আলী বলেন, এখন ঘরে পানি নেই। কিন্তু ঘর-বাড়িতে ওঠে বসবাস করার উপযোগী করতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাগবে। এখন টাকা পাবো কোথায়। পানিতে তলিয়ে ফসল ও ঘর-বাড়ির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঋণ বা কিস্তি নিতে হবে। এবারের বন্যায় আমাদের নিঃস্ব করে ফেলেছে।

পাঁচ ঠাকুরী গ্রামের মোমেন আলী ও জুরান মিয়াসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, পানি কমতে শুরু করেছে, এটা দেখে ভালই লাগল। কিন্তু পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পলকে প্রায় ২০/৩০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেল। যথা সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করলে এই বাড়িগুলো নদীগর্ভে যেত না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে আজ আমাদের এত ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, পাঁচ ঠাকুরীতে ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলা শুরু করা হয়েছে। যমুনায় পানি কমতে থাকায় এ ভাঙনের তীব্রতা অনেকটা বাড়ছে। তবে পাঁচ ঠাকুরীতে ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প অনুমোদনে পাঠানো হয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এই নিয়ে যমুনা নদীর তীরবর্তী শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও কাজিপুর উপজেলার অনেক স্থানে এই ভাঙন শুরু হয়েছে। গত চার দিনে এসব এলাকার শতাধিক ঘর-বাড়ি ও বহু জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী সেরাজুল ইসলাম জানান, যমুনার পানি কমতে থাকায় চৌহালীর বিভিন্ন স্থানে আবারো ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। এ ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ, ব্লক ও বালুর বস্তা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। তবে এখনও ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/১০অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :