যে পদ্ধতিতে আড়াই মাসে ২৬ কেজি ওজন কমিয়েছেন সাকিব

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০২০, ০৭:৪৯ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০, ১৩:১২

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

অনেকেই এখন ওজন বেশি হওয়ার সমস্যাই ভুগছেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ না করার ফলে ওজন কমাতে পারেন না। আবার অনেকেই আছেন যারা ওজন কমাতে চাইলেও সে বিষয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেন। কারণ ওজন কমানোর যাত্রা বেশ কঠিন।

তবে এমন অনেক লোক রয়েছেন যারা এই সমস্যার সমাধানে শুধু ইচ্ছা পোষণ করেই বসে থাকেন না। তারা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদের উদ্দেশ্য সফল করেন। শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন তাদেরই একজন। তিনি ঢাকা টাইমসে লিখেছেন তার ওজন কমানোর গল্প। যারা ওজন কমাতে চান তারা সাকিবের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পারেন।

পরিচয়: সাকিব হোসেন, শেরপুর সদর, শেরপুর।

পেশা: শিক্ষার্থী।

সর্বাধিক ওজন: ৯৬ কেজি।

বর্তমান ওজন: ৭০ কেজি।

ওজন কমেছে: ২৬ কেজি।

সময় লেগেছে: আড়াই মাস।

টার্নিং পয়েন্ট: ওজন বেশি থাকার কারণে ছোট থেকেই নানা সমস্যায় পড়তে হতো। শপিংমলে শার্ট-প্যান্ট কিনতে গেলে পছন্দ হলেও মোটা হওয়ার কারণে মাপে পারফেক্ট হতো না। গণ-পরিবহনে যাতায়াত করার সময় সংকোচবোধ হতো, লজ্জা লাগতো। মানুষে নানা কথা বলতো, সব মুখ বন্ধ করে শুনতাম। ফেসবুকে একদিন  আব্দুল্লাহ আল নোমান ভাইয়ের ফিরে আসার গল্পটা পড়ে অনুপ্রাণিত হই। সেসময় মনে একটা জিদ চাপল যে, নোমান ভাই ১১৯ কেজি থেকে ৭৫ কেজিতে আসতে পারলে আমি কেন পারব না। তারপরই ওজন কমানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করি।

খাবার:

শুরুর ৭ দিন: ২৫-০৭-২০২০ রাতে সর্বশেষ ভাত খেয়ে পরের দিন ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের পরামর্শ ফলো করা শুরু করি। সকালে ফজর নামাজের পর উঠে ২ কিলোমিটার হেঁটে এসে লেবু ও আদার রস কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খেয়েছি। সকালে ২০ মিনিট রোদে থেকেছি। সকালে খাটি সরিষার তেল দিয়ে ডিম ভাজি, মাছ, শাক সবজি রান্না খেয়েছি। দুপুরে সবুজ শাক-সবজি, মাছ ৩০ গ্রামের মতো এবং চিনা বাদাম সরিষার তেলে হালকা ভেজে খেয়েছি। রাতে সালাদ, মাছ, বেগুন ভাজি ও সবজি খেয়েছি। এভাবে ৭ দিন আমি প্রাথমিকভাবে শুরু করি।

পরের ৩ দিন: পরের ৩ দিন আমি ওয়াটার ফাস্টিং করি। মানে সারাদিনে ২০ ঘণ্টা লেবু পানি,  পিংক সল্ট মেশানো  পানি,  গ্রিন টি,  এই সব খেয়েছি। সন্ধ্যার দিকে ডিম, মাছ, সবুজ শাক-সবজি, সালাদ, বাদাম, কচি ডাব, ইসব গুলের ভুসি ও তোকমা দানার শরবত খেয়েছি।

১০ দিন পার হলে আমি ড্রাই ফাস্টিং শুরু করি। ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেছেন, ১৬ ঘণ্টার বেশি না খেয়ে থাকলে অটোফেজি শুরু হয়, তাই আমি অটোফেজির বেনিফিট পাওয়ার জন্য প্রথম দিকে ১৬-১৮ ঘণ্টা ড্রাই ফাস্টিং করেছি। এই সময়ের মধ্যে কোনো খাবার গ্রহণ করিনি।

এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর আমি হাতেনাতে ফল পেতে শুরু করলাম। ওজন কমা দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম। এভাবে আস্তে আস্তে আমি ড্রাই ফাস্টিং এর সময় বাড়াতে থাকি। ২০ তারপর ২১ তারপর ২২ ঘণ্টা, এখন আমি ২৩ ঘণ্টা ড্রাই ফাস্টিং করি। সন্ধ্যা ৬ থেকে ৭ টা। এই এক ঘণ্টার মধ্যে কচি ডাব, পিংক সল্ট মেশানো পানি, ইসব গুলের ভুসি ও তোকমা দানা মিশ্রিত শরবত খাই। ১৫ মিনিট পর লেবু ও আদার রস কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খাই।

৩০ মিনিট পরে আমি একবেলা খাবার খায়, ডিম, মাছ, শাক-সবজি, বেগুন ভাজি, তরকারী, সপ্তাহে একবার মাংস, টমেটো,শসা, সালাদ ও বাদাম ৩০ গ্রাম করে খাই।

এভাবে সন্ধ্যা সাতটার পর আর কোনো খাবার খাই না। আবার পরের দিন সন্ধ্যা ৬-৭টা পর্যন্ত খাবার খাই।

এখন আমি প্রতি সপ্তাহে ৭ দিনই ড্রাই ফাস্টিং করি। দুই মাস ধরে এটা করছি। আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যা হয়নি। প্রতিদিন ১০-১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি এবং ৭-৮ ঘণ্টার মতো ঘুমাই।

আমার উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। এখন ওজন ৭০ কেজি। আরও দশ কেজি ওজন কমিয়ে ৬০ কেজিতে আসার পর আমি মেইনটেইন শুরু করবো। আশা করি আমি দ্রুতই এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।

ব্যায়াম: কোমরের সাইজ ৪২+ থাকার কারণে আমি লোয়ার এবস ওয়ার্ক আউট করা শুরু করি, যেমন স্কুয়াটস, প্লাংক, বাইসাইকেল ক্রাঞ্চ, লেগ রাইজ, হাই প্লাংক, স্টার ক্রাঞ্চ, বারপিস। প্রথমদিকে প্রতিদিন ২ কিলোমিটার সকালে আর ২ কিলোমিটার রাতে হাঁটতাম এবং ৩০ মিনিট সাঁতার কাটতাম। এভাবে আস্তে আস্তে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দিই।

ফিটনেস সিক্রেট: লোয়ার এবস ওয়ার্ক আউট, সাঁতার, বেশি বেশি ড্রাই ফাস্টিং করার ফলেই এতো দ্রুততম সময়ে এতোটা ভালো রেজাল্ট পেয়েছি। এই সিক্রেটগুলোর জন্য এতো তাড়াতাড়ি এমন পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।

আগের ও পরের অনুভুতি: মাত্রাতিরিক্ত ওজন থাকার কারণে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারতাম না। কোনো কাজ করতে গেলেই হাঁপিয়ে উঠতাম। শরীর দুর্বল লাগতো। ওজন কমানোর পর একটানা ১০ কিলোমিটারের বেশি হাঁটলেও হাঁপিয়ে উঠি না। প্রতিদিন এক ঘণ্টা ২০ মিনিট ব্যায়াম করার পর ৫ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি করি, তবুও হাঁপিয়ে যাই  না।  আমার অনুভুতি ভাষায় বোঝানোর মতো নয়, আমার কোমর সাইজ ছিলো ৪২+ এখন কোমর ৩১। ৫ বছর আগের শার্ট-প্যান্ট গুলো অনায়াসেই পরতে পারি।

পরামর্শ: যারা ওজন কমাতে চান তারা প্রথম নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন যে আমি ওজন কমাতে পারব। মানসিকভাবে শক্তি হোন। ধৈর্য ধারণ করুন এবং শুরু করুন। বিভিন্ন মানুষের কথা শুনে হাল ছেড়ে দিলে ওজন কমাতে পারবেন না। তাই কে কি বলল তাতে কান দিয়ে নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকুন। তাহলেই আপনি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।

ওজন কমানোর এমন গল্প যদি আপনার থাকে, তাহলে আপনিও লিখতে পারেন ঢাকা টাইমসে। ছবিসহ আপনার লেখা পাঠিয়ে দিন [email protected] এই ঠিকানায়।

ঢাকা টাইমস/১১অক্টোবর/একে