বিএনপির ‘কেয়ারলেস’ তিন ভাইস চেয়ারম্যান

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৪৩

জিয়া পরিবার, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে তিন ভাইস চেয়ারম্যানের বক্তব্যে বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বিশেষ করে তৃণমূল নেতৃবৃন্দ বিএনপির এই তিন শীর্ষ নেতার ‘বক্তব্যে’ ক্ষুব্ধ। তারা মনে করছেন তিন ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শাহজাহান ওমর অনেকটা কেয়ারলেস। কেনন তারা প্রায়শই ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য দিচ্ছেন। এর পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি-না তা খতিয়ে দেখার দাবিও উঠছে বিএনপিতে।

সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে দলের এই তিন ভাইস চেয়ারম্যান সরাসরি খালেদা জিয়া ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে তাদের ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তারা মনে করেন, সরকারের সঙ্গে এক ধরণের আপোষের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও মামলাগত জটিলতা ও অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এছাড়াও লন্ডনে থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঠিকভাবে দল পরিচালনা করা কঠিন বলে তারা মনে করেন।

এমন বক্তব্য নিয়ে নেতাকর্মীরা যখন ক্ষোভে ফুঁসছে তখন তিন শীর্ষ এই তিন নেতার ভাষ্য- যৌক্তিক ও সত্য কথা বললেও তা গণমাধ্যমে ভুলভাবে প্রচার হয়েছে। ফলে নেতাকর্মীরা তাদের ভুল বুঝছেন। যত যাই কিছু হোক তারা বিএনপির সঙ্গেই আছেন এবং থাকবেন বলেও জোরালো বক্তব্য তাদের।

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দায়িত্বশীল পদে থেকে তিন নেতা জিয়া পরিবার ও দলের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মাঠ পর্যায়ের কোনো নেতাকর্মী গ্রহণ করেনি। ভালোভাবে নেয়নি। আমরা যারা বিএনপি করি তাদের অস্তিত্বের জায়গা হলো জিয়া পরিবার। এ ব্যাপারে কোনো আপোষ করার সুযোগ নেই।’

তাদের বক্তব্য বিএনপিকে খাটো করছে অভিযোগ করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যদি দলের ভেতরের কেউ খাটো করে কথা বলে হাই কমান্ডের উচিত হবে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া।’

যে তিন নেতার বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় তাদের নিয়ে অবশ্য মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ বহুদিনের। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা শাহ মোয়াজ্জেমকে নিয়ে নেতাকর্মীদের ভাষ্য, তিনি বিএনপিতে থাকলেও সরকারি দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। আর এক-এগারোর সময়ে সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে এখনও নেতাকর্মীদের সন্দেহ-সংশয় কাটেনি। অন্যদিকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমরও বিভিন্ন সময় দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলায় নেতৃবৃন্দের অনেকের ক্ষোভ রয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া এসব নেতারও দলের প্রতি ক্ষোভ আছে। দীর্ঘদিন ধরে জোরালো আলোচনা ছিল দলের স্থায়ী কমিটিতে এদের অন্তত দুজন জায়গা পাচ্ছেন। কিন্তু ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর বর্তমান কমিটির মেয়াদ ফুরালেও এখনো ফাঁকা রয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক পদ। কেউ কেউ বলছেন, ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে এসব কথা বার্তা বলতে পারেন নেতারা।

যদিও শাহ মোয়াজ্জেম ইতিমধ্যে তার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে দাবি করে দলের কাছে চিঠি দিয়েছেন। বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠনের প্রভাবশালী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, অন্যান্য বিষয় নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করতে এই তিনজনসহ আরও কয়েকজন নেতা পটু। ব্যক্তিগত চাওয়া পূরণ না হওয়ায় এমনটা বলতে পারেন। তবে তাদের কথার খুব গুরুত্ব নেতাকর্মীদের কাছে নেই।’

দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বক্তব্য নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সবাই দলের প্রবীণ নেতা হওয়ায় এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো ধরণের কথাবার্তাও বলতে অনীহা তাদের।

ঢাকা টাইমসের পক্ষ থেকে তিন ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গেই কথা বলা হয়। শাহ মোয়াজ্জেম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যেভাবে বলা হচ্ছে আমার কথাগুলো তেমন ছিল না। আমি লিখিতভাবে সেটা দলকে জানিয়েছি। তারপরও যারা নানা কথা বলছেন তাদের বলবো- আমি দলেই আছি। দলেই থাকবো। বেগম খালেদা জিয়া আমাদের নেত্রী। এটাই শেষ কথা।’

খালেদা জিয়া আপোষ করে মুক্তি পেয়েছেন- এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারাগারে থাকলে সে মানুষ তো কিছু করতে পারে না। সেক্ষেত্রে দলের কেউ বা পরিবার করলে কিছু করেছে আমি সেটা বলতে চেয়েছি। আর জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচার করতে না পারা, খালেদা জিয়ার জীবন রাজনীতির মধ্য দিয়ে শুরু না হওয়ার বিষয়টি তো মিথ্যা না। এটা বলা অন্যায় হলে আমি প্রয়োজনে একদম চুপ হয়ে যাবো।’

আর একই প্রশ্নে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি চারবার রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছি। তারপরও যদি কেউ সন্দেহ করে মনে করি তারা দলের ভালো চায় না। কিন্তু একথা তো মিথ্যা নয়, সরকার এতবড় ভোট চুরি করলো অথচ একটা মৌন মিছিলও করতে পারলাম না। আঁতাত না করলে তো সামান্য হলেও প্রতিবাদ করতে পারতাম।’ নেতৃত্বের প্রশ্নে খালেদা জিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি বিউটিফুল লেডি। তার প্রতি সবসময় শ্রদ্ধা। যতদিন বেঁচে আছেন তিনিই নেতা।’

অন্যদিকে নিজের বক্তব্যে অনড় শাহজাহান ওমর। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘যা বলেছি সত্য বলেছি। চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুজনের সাজা হয়েছে। তারপর একজন অসুস্থ, অন্যজন লন্ডনে। তাহলে কিভাবে তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। কাউকে আহত করতে না বাস্তবতা তুলে ধরেছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অনেক বিষয় বাস্তব হলেও দায়িত্বশীল পদে থেকে বলা কঠিন। তিন নেতার দুজন অনেকটা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। এটা আসলেই দুঃখজনক। বিএনপির তৃণমূলে তাদের এখন ‘কেয়ারলেস’ ভাবা হচ্ছে।’

(ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বাংলাদেশে একদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেই, তখন আ. লীগ থাকবে না: আমিনুল হক

উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল আ.লীগে বাড়ছে দ্বন্দ্ব

সরকারের এমপিরা ঘোষণা দিয়ে লুটপাট শুরু করেছে: এবি পার্টি

বদরের চেতনায় লড়াই অব্যাহত রাখার আহ্বান ছাত্রশিবির সভাপতির

আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ফখরুলের

বিএনপির ভারত বিরোধিতা মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ: নাছিম

ভোট ডাকাত সরকারকে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জন ন্যায়সঙ্গত: রিজভী

১১ মামলায় আগাম জামিন পেলেন বিএনপি নেতা বকুল

বর্তমান সরকার ভারতের অনুগ্রহে ক্ষমতায় বসে আছে: সাকি

জিয়াউর রহমান উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে: ওবায়দুল কাদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :