পাঁচ বছরেও গতি পেল না প্রতিযোগিতা কমিশন

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০২০, ১০:২৭ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০, ১০:৪৬

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস

বাজারে পণ্যের দামে কারসাজি নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ প্রতিযোগিতা রক্ষা করতে গঠিত ‘প্রতিযোগিতা কমিশন’ পাঁচ বছরেও গতি পায়নি। জনবল সংকট আর পণ্যের দামের কারসাজি রুখতে গোয়েন্দা ইউনিট না থাকায় বর্তমানে এই কমিশন কেবল নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবেই টিকে আছে।

প্রায় সময় বাজারে পণ্যের অযৌক্তিক দাম বাড়ানো ও অস্থিরতার জন্য অসাধু ব্যবসায়ী তথা সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ডকে দায়ী করা হয়। বাজারে কারসাজি নিয়ন্ত্রণে ‘প্রতিযোগিতা কমিশন’ গঠন করা হয়। কমিশনের আদেশ লঙ্ঘনে কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ উৎসাহিত করতে ষড়যন্ত্রমূলক, যোগসাজশ (কল্যুশন), মনোপলি ও ওলিগপলি অবস্থা, জোটবদ্ধতা অথবা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিযোগিতাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা রক্ষা করাই কমিশনের লক্ষ্য।

প্রায় আট বছর আগে প্রতিযোগিতা কমিশন আইন হয়। আর ২০১৬ সালে গড়ে ওঠে প্রতিযোগিতা কমিশন। তবে যেসকল লক্ষ্য নিয়ে কমিশন গড়ে তোলা হয় তা পূরণ দূরের কথা এখনও প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের গোছানোর কাজই শেষ করতে পারেনি।

গত বছরের শেষের দিকে সাবেক বাণিজ্য সচিব (সিনিয়র সচিব) মো. মফিজুল ইসলামকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পেলেও আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী চার জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠন করতে সময় লেগে যায় আরও চারমাস। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি গত মার্চে পূর্ণাঙ্গ কমিশন পায়। কিন্তু মার্চে দেশে করোনা মহামারী শুরু হলে কাজে আর গতি আনতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের ভাষ্য, তারা করোনা মহামারীর পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু কাজ করার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে কারসাজি করা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ব্যবসা খাতেও প্রতিষ্ঠানটি তদারকি অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে কমিশনের কাজে গতি আনতে বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্তের এক বছর পার হলেও জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও শেষ করা যায়নি। তবে খুব শিগরিই কমিশনের বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট তাদের কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে। মূলত এই গোয়েন্দা ইউনিট বাজার মনিটরিং করা। তিন সদস্যের এই ইউনিটের কাজ হবে বাজারের কোথাও অসুস্থ প্রতিযোগিতা হচ্ছে কিনা সেটা খুঁজে বের করা।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন মো. মফিজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কমিশনের কাজ হচ্ছে, একচেটিয়া ব্যবসা, যোগসাজশ বা সিন্ডিকেট হচ্ছে কিনা সেটার তদারকি করা। যে উদ্দেশে প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছে তা পূরণ করতে আমরা কাজ করছি।’

গত মার্চে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু তার মধ্যে দেশে করোনা আসে। যেটা আমাদের কাজের গতি কিছুটা কমিয়ে দেয়। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা কিছু কাজ করেছি, আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।’

দেশের বাজারে পণ্যের দাম নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের কারসাজি বাজারকে অস্থির করে তোলে। এতে ক্রেতাসাধারণের বিপাকে পড়ার পাশাপাশি সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও কম ঝামেলা পোহাতে হয় না। উন্নত বিশে^র অনেক দেশেই বাজারে পণ্যের দামে সুস্থ প্রতিযোগিতা রক্ষা করতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করে।

এমন তিনটি লক্ষ্য রেখেই বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হয়। প্রথমত, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করে তা বজায় রাখা। দ্বিতীয়ত, বাজারে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড, এককভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণচেষ্টা ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠানের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ রাখা কিংবা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিযোগিতাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা। আর এমন কিছু হলে তা নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করা।

এদিকে লোকবল সংকটের পাশাপাশি সেই অর্থে প্রতিষ্ঠানটির প্রচার-প্রচারণা তেমন একটা হয়নি বা এই প্রতিষ্ঠানটি কি নিয়ে কাজ করছে সেটাই জানে না অনেকেই। যদিও জনগণ যেন জানতে পারে সেজন্য প্রচার-প্রচারণার বৃদ্ধি করার কথা বলছেন কমিশন প্রধান।

মো. মফিজুল ইসলাম ঢাকা টাইমস বলেন, ‘আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। সেটা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এতে আমাদের কাজের সক্ষমতা বাড়বে। আর আমাদের কাজের বা কি উদ্দেশ্যে কমিশন করা হয়েছে সেটার প্রচার-প্রচারণাও বাড়ানো হবে।’

সম্প্রতি পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি শুরু হলে বাজার ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ ক্রেতার অসন্তোষ বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও অসেব ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্যের এই অযৌক্তিক দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

এই পরিস্থিতির সমাধানে প্রতিযোগিতা কমিশন কি ধরনের কাজ করছে জানতে চাইলে কমিশন প্রধান জানান, প্রতিযোগিতা কমিশন মাঠ পর্যায়ে আপাতত কোনও কাজ করছে না। কমিশন এখন শুধুমাত্র বাজার ব্যবস্থা কারসাজি বা সিন্ডিকেট হচ্ছে কি-না সেটার তদারকি করছে। যদিও সেই তদারকির প্রক্রিয়া ভোক্তা অধিকারের মতো তৎক্ষনাত হয় না বলেই প্রতিযোগিতা কমিশন প্রধানের ভাষ্য।

কমিশনের ক্ষমতার বিষয়ে ‘প্রতিযোগিতা আইনে’ বলা হয়েছে, কোড অব সিভিল প্রডিউসর-১৯০৮ (অ্যাক্ট-৫ অব ১৯০৮)-এর অধীনে একটি দেওয়ানি আদালত যে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন, প্রতিযোগিতা কমিশনও সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।

(ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/ডিএম)