বেহাল বাজারে মধ্যবিত্তের হা-হুতাশ

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০২০, ১৩:০৬ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২০, ১৩:৫১

আল-আমিন রাজু

সাম্প্রতিক সময়ে করোনা আর আগাম বন্যায় এলোমেলো দেশের কৃষিখাত। করোনার সময়ে গাড়ির অভাবে কৃষকের পণ্য বাজারে আসতে পারেনি। ফলে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই পচে গেছে। নিরূপায় কৃষক অসহায়ের চোখে চেয়ে চেয়ে দেখেছেন। আবার যখন গাড়ি চলা শুরু হলো তখন এলো উজানের বান। তলিয়ে গেল কৃষকের ঘামে ভেজা ফসলের মাঠ। লাভের স্বপ্ন পানির স্রোতে হারিয়ে গেল। এখানেও অসহায় কৃষকের চেয়ে দেখা ছাড়া করার কিছুই ছিল না। সবার জানা কথা, এদেশে কৃষকের ভাগ্য নির্ধারণ হয় পাইকার আর আড়ৎদারদের টালি খাতায়। ফলে সারাজীবনেও কৃষক সুখের মুখ দেখে না। দেখে না লাভ নামক সোনার হরিণের মুখ। পাইকার আর আড়ৎদার দিনে দিনে হয়ে ওঠেন কৃষকের মহাজন। কারণ নিঃস্ব কৃষক পরের বছর ক্ষেতে ফসল বুনতে সুদের জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন। আর মহাজনরা সুদ নামক শক্ত জাল নিয়ে সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন।

সাধারণ কৃষকের উৎপাদিত ফসলের এমন জটিল বিপণনব্যবস্থায় লাভের গুড় পাইকার আর আড়ৎদারদেররে পকেটে। তারা আকাশের আবহাওয়া আর বাজারের চাহিদা দেখে দাম বাড়ান। কিন্তু বাড়তি দামের ছিটে-ফোঁটাও কৃষক পর্যন্ত যায় না।

সপ্তাহের ব্যবধানে শহুরে চাকরিজীবীরা বাজারে গিয়ে হা-হুতাশ করেন। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ছিল না? এ সপ্তাহে ১০০ হলো কী করে! বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ে আমাদের তো বেতন বাড়ে না। আরও কত কী! হা-হুতাশ করলেও জীবনের প্রয়োজনে ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাগভর্তি করে বাসায় ফেরেন। এরপর ভুলে যান বাজার আর দামের কথা। ব্যস্ত হয়ে যান নিজের করপোরেট জীবনে। ফলে ভুলে যাওয়ার এই সুযোগ শুধু ব্যবসায়ীদের লাভের ভাগটাই বাড়ায়।

এদিকে করোনার ধাক্কায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবন সড়কের বেহাল দশা। কেউ চাকরি হারিয়ে বেকার, কেউ ব্যবসায় লস খেয়ে দেউলিয়া, আবার অনেকের ভবিষ্যতের সঞ্চয় করোনাকালেই শেষ। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্তদের চোখের সামনে শুধুই কালো অন্ধকার। এমনিতেই মধ্যবিত্ত শ্রেণিটাই সমাজের একটি গোলক ধাঁধাঁর নাম। বিশেষ করে শহুরে মধ্যবিত্তদের এখন জীবন যায় যায় অবস্থা। তার মধ্যে বাজারে চাল থেকে ডাল, পেঁয়াজ থেকে কাঁচা সবজি সবকিছুর দাম এখন লাগাম ছাড়া। সপ্তাহের ব্যবধানে সবকিছুরই দাম বেড়ে যাচ্ছে। ১০০ টাকায় এখন শুধু যেকোনো একটি সবজি কেনা যায়। কাঁচা মরিচের দাম তো লাগামছাড়া পাগলা ঘোড়া। বেড়েই চলেছে। পেঁয়াজের দাম আবারও সেঞ্চুরি করেছে। তবে এবার আর চায়ের কাপে স্থান পায়নি। নীরবে এমন শতকের ঘরে গেছে বেশ কিছু সবজি। বেগুন, করলা, টামাটো, শশার দাম এখন সেঞ্চুরির ঘরে। ব্যবসায়ীদের দাবি পেছনে পেছনে আরও কিছু সবজির দাম শতকের দিকে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ ক্রেতারা বাজারে এসে সবজির দাম শুনে চমকে যাচ্ছেন। প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা কম কিনে ফিরছেন সরকারকে গালি দিতে দিতে।

আর বাজারের দাম নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মুখস্থবিদ্যার মতো বুলি আউড়ান বাজার মনিটরিং, বাজার মনিটরিং করে। কে সামলাবে বাজার? মন্ত্রী নাকি সরকার। নাকি সরকারি প্রতিষ্ঠান। মাঝে মাঝে দু একটি অভিযান আর সাধারণ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেই বাজারের লাগাম টানতে চান সরকারি কর্তারা। পকেট কাটা যায় সাধারণ মানুষের। আর দিন শেষে শুনতে হয় বাজারের বাজে অবস্থা।

লেখক: সংবাদকর্মী