সিলেটকে সিস্টার সিটি করার প্রস্তাব

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৫২ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৫৯

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ বাংলাদেশ ও ইরানের দুই শহর সিলেট ও লাহিজানকে সিস্টার সিটি করার ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেছেন উভয় সিটি করপোরেশনের মেয়র। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে ইরানের গিলান প্রদেশের লাহিজান সিটি করপোরেশনের মেয়র ইউসুফ ক্বিয়ামাতিয়ুনের এক অনলাইন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।এতে লাহিজান সিটি করপোরেশনের মেয়র ইউসুফ ক্বিয়ামাতিয়ুনের পক্ষ থেকে শহরদুটিকে সিস্টার সিটিতে পরিণত করার প্রস্তাব দেয়া হলে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।

বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে বারোটায় সালাম ও কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত উভয় মেয়রকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ দুই সিটি মেয়রের মধ্যে জুম কনফারেন্সের আয়োজন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।

লাহিজান সিটি মেয়র জনাব ক্বিয়ামাতিয়ুন এ ধরনের একটি আলোচনার আয়োজন করার জন্য ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পারস্পরিক আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এমন কাজ করতে পারব যাতে উভয় সিটির অধিবাসীরা উপকৃত হতে পারবে। দুটি সিটির মধ্যে কৃষি, সংস্কৃতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও হাতে হাত রেখে সহযোগিতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। আমরা যদি সুন্দর একটি সূচনা করতে পারি তবে পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে পারি।

সিলেট সিটি মেয়র জনাব আরিফুল হক চৌধুরী বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত জনাব রেযা নাফার ও কালচারাল কাউন্সেলর ড. হাসান সেহাতকে ধন্যবাদ জানান। তিনি সিলেট নগরবাসীর পক্ষ থেকে লাহিজানের মেয়রকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ৩৬০ আউলিয়ার মাযারের শহর সিলেট। এটি চায়ের নগরী, পর্যটনের নগরী হিসেবে প্রসিদ্ধ। তিনি আরো বলেন, দুই সিটি যৌথভাবে পর্যটন নিয়ে কাজ করতে পারে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়েও কাজ করতে পারে। পর্যটন স্পট ও রিসোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আদান-প্রদান করা যেতে পারে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইরান অনেক উন্নত। তাই ইরানের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা পেলে সিলেটের ছয় লক্ষ অধিবাসী উপকৃত হতে পারবে। তিনি লাহিজান মেয়রকে বাংলাদেশে আসার জন্য আমন্ত্রন জানান। 

লাহিজান মেয়র বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রন দেয়ার জন্য সিলেট সিটি মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর প্রথম সুযোগেই আমি সিলেটে আসার ইচ্ছা পোষণ করছি। আমিও আপনাকে লাহিজানে সফরের জন্য আমন্ত্রন জানাচ্ছি। তবে এ সময়েও আমরা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে চাই। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আমরা চিহ্ণিত করতে পারি এবং বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পারি। যেহেতু সিলেটের আউলিয়াগণের প্রসঙ্গ এসেছে সেজন্য বলতে চাই যে, লাহিজানেও বেশ কিছু আউলিয়ার মাযার রয়েছে। সেক্ষেত্রে ধর্মীয় ক্ষেত্রেও সহযোগিতার দিকগুলো আমরা আলোচনা করতে পারি। লাহিজানের মেয়র দুই সিটিকে সিস্টার সিটি হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানান।

জনাব আরিফুল হক বলেন, হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাযারে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আগমন করে। তাই সিলেটে ইসলামি রিসার্চ সেন্টার বা ইসলামি সেন্টার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করছি। তিনি বলেন, সিলেটে একটি মিউজিয়াম গড়ে তোলা যেতে পারে যেখানে লাহিজানের জিনিসপত্র থাকবে। একইভাবে লাহিজানেও একটি মিউজিয়াম থাকবে যেখানে সিলেটের জিনিসপত্র থাকবে। তিনি ‍সিলেট ও লাহিজানকে সিস্টার সিটিতে পরিণত করার ব্যাপরে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেটের সন্তান তাই তিনি ও তাঁর মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ভালো ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি পরবর্তী কনফারেন্সে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ড. সেহাত ইরানি রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে ঘোষণা করেন যে, আলোচনায় যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন। যেহেতু উভয় সিটির চায়ের জন্য খ্যাতি রয়েছে তাই চা উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও রপ্তানি সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যেতে পারে। ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সহযোগিতাও একটি ভালো কর্মসূচি হতে পারে। ড. সেহাত সর্বক্ষেত্রে তাঁর সহযোগিতার কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, উভয় সিটির মেয়রের সফরের ব্যাপারটিতে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন।

সিলেট সিটি মেয়র আলোচনাকে যথার্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, চা-গবেষণা, উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দক্ষ চা-শ্রমিক রয়েছে যারা বিদেশে গিয়ে কাজ করতে সক্ষম। লাহিজান এদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক নেয়ার চিন্তা করতে পারে।

জনাব আরিফুল হক লাহিজান সিটি কর্পোরেশনের সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ইরান দূতাবাস ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানান।

জনাব ক্বিয়ামাতিয়ুন বলেন, আমাদের উভয় পক্ষের আলোচনায় সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত হবে বলে আশা করছি। লাহিজানে বড় বড় চা বাজারজাত কেন্দ্র রয়েছে। চা উন্নয়ন সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতার কর্মসূচি রয়েছে। এর পাশাপাশি লাহিজানে বড় বড় হাসপাতাল রয়েছে। তাই আমরা স্বাস্থ্যখাতেও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হব।

ড. সেহাত উভয় সিটি মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো তিনি ভূমিকা রাখার কথা ব্যক্ত করেন। পারস্পরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে আলোচনা সভা সমাপ্ত হয়। -বিজ্ঞপ্তি 

(ঢাকাটাইমস/১৩অক্টোবর/কেএম)