হিজল গাছের প্রেমে...

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০২০, ১৫:১২ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২০, ১৫:২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আড়িয়ল বিল। ঢেউহীন পানির রাজ্য, টলটলে জলে আকাশের প্রতিবিম্ব। মেঘদের সাথে পাল্লা দিয়ে সাদা খেয়ালি বকের ওড়াউড়ি। বিলের জলে গোধূলির ছায়া। জলে ঠায় দাঁড়িয়ে হিজলগাছ। কাঁদা মাখা শৈশবে এরকম একটা হিজল গাছের প্রেমে পড়ছিলাম। বহুকাল গাছটাকে দেখি না। পরে অবশ্য শুনেছিলাম সেটা দিয়ে আব্বা নৌকা বানাইছে। ভাদ্র মাসে মাঠ থেকে ধান আনতে।

তবে বিলের হিজলগাছ একটু আলাদা। গম্ভীর। মনে হয় অদ্ভুত ব্যাখ্যাহীন আবেশে জলের সঙ্গে সংসার করছে অনাদিকাল ধরে। গাছের ওপর একটা ভুবন চিল পাখা গুটিয়ে বসে আছে। আমার সঙ্গে চোখাচোখি। কিছু বলতে চায়। কিংবা চায় না। ওর সারা গায়ে গোধূলির গন্ধ। কত দূর থেকে উড়ে এসেছে জানি না। বেশ ক্লান্ত।

বহুদূর থেকে ভেসে আসে তোমার গন্ধ। মাছের আঁশটে গন্ধ, মৃত পাখির ডানার গন্ধ, হাওয়ার গন্ধ। সন্ধ্যার আলো নিভে আসে। বিলের পানিতে কাগজের নৌকা ভাসাই। ছেড়ে দেয়া নৌকা ভাসতে ভাসতে কোন দিগন্তে যায় জানি না। বেশি দূর নয়। কয়েক হাত দূরে হয়তো। কিন্তু আমি ভাবি বহুদূর। বহুদূরের মধ্যে একটা হাহাকার আছে। কাছের হাহাকার। দূরের হাহাকার। বিলের জলে হাহাকার আইঢাই করে।

আমি বাবার তৈরি সেই নৌকার গলুইয়ের গন্ধ পাই। অতীতের গায় হাত দেই। নাক ছোঁয়াই। সিদ্ধ ধানের ভ্যাপসা গন্ধ পাই। গোধূলি নিভে আসে।

বহুদিন আগে এমন আশ্বিনের গোধূলিতে কেউ একজন বলেছিল, কিছু কথা আছে। কী কথা? কী কথা? সে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটিতে দাগ কাটছিল। শেষ বিকেলের নরম আলো তার মুখে। নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, কী কথা? কী কথা? সে বলেছিল, জানি না...

ছবির লোকেশন: গাদিঘাট বড় ব্রিজ, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ

লেখক: সজল মাহমুদ, সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/এসকেএস