প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই নিজ পক্ষের লোককে হত্যা: পিবিআই

নরসিংদী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২০, ২২:৩৪ | প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর ২০২০, ২২:৩২

নরসিংদীর চরাঞ্চলে মোহাম্মদ আলী হত্যার দুই বছর দুই মাস পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টগেশন (পিবিআই)। প্রতিপক্ষকে মামলায় ফাঁসাতেই নিজ পক্ষের লোকজন মোহাম্মদ আলীকে লোহা ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

হত্যার শিকার মোহাম্মদ আলী নরসিংদীর মাধবদী থানার চরাঞ্চলীয় চরদীঘলদী ইউনিয়নের অনন্তরামপুর গ্রামের মোসলেম মিয়ার ছেলে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনন্তরামপুর গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছে আলমগীর, আমির বাদশা ও হারিছ মিয়া এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছে রাজা মিয়া, নেওয়াজ আলী ও ফরহাদ। পূর্ববিরোধের জের ধরে প্রায়ই দুই পক্ষের লোকজন টেঁটা বল্লমসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় পক্ষে-বিপক্ষে প্রায় এক ডজন বিচারাধীন মামলা রয়েছে।

২০১৮ সালের ২১ আগস্ট (কোরবানির ঈদের আগের দিন) সকাল ৬টার দিকে আলমগীর পক্ষের লোকজন তার পক্ষের জনৈক বারেক মিয়ার বাড়িতে দলীয়করণ ও কোরবানি সংক্রান্ত মিটিং করছিল। মিটিং চলাকালে প্রতিপক্ষ রাজা মিয়ার লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের অর্ধশত লোকজন আহত হয় এবং হামলার শিকার লোকজন বিভিন্ন ঘরে লুকিয়ে থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। এসময় ভিকটিম মোহাম্মদ আলী এবং আব্দুর রহমান, আমীর বাদশা, ইউনুস আলী, শাহ আলম বারেক মিয়ার ঘরে আশ্রয় নেয়। বিপক্ষের লোকজন বারেকের ঘরের সামনে এসে চিৎকার করে আলমগীর পক্ষের লোকদের খুঁজছিল। তাদের ভয়ে বারেকের ঘরে লুকিয়ে থাকা আমির বাদশা, আব্দুর রহমান, ইউনুস আলী এবং ভিকটিম মোহাম্মদ আলী ওই ঘরের সিলিংয়ের উপর উঠে। একপর্যায়ে মারামারি থামলে ও প্রতিপক্ষের লোকজন চলে গেলে বারেকের ঘরে লুকিয়ে থাকা আহত সকলে বেরিয়ে আসে। সকলে কান্নাকাটি করে প্রচার করে প্রতিপক্ষের রাজা গ্রুপের লোকজন মোহাম্মদ আলীকে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে মাধবদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং মোহাম্মদ আলীর মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে নিহত মোহাম্মদ আলীর ভাই বাদশা বাদী হয়ে রাজা মিয়া গ্রুপের ৫৩ জন ও অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামি করে মাধবদী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আমীর বাদশাকে জখমি সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে মাধবদী থানায় দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে নারাজিরভিত্তিতে মামলাটি পিবিআই নরসিংদীতে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ৮ জুলাই পিবিআই নরসিংদী জেলা তদন্তভার গ্রহণ করে হত্যার প্রকৃত রহস্য ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্তে নামে।

হত্যার ঘটনাস্থল বারেকের ঘরের সিলিংয়ের উপরে ঘটনার সময় যারা উপস্থিত ছিল, তাদের খোঁজা হলে রহস্যের গন্ধ পায় পিবিআই-এর তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলায় উল্লিখিত সাক্ষী এবং স্থানীয় দলের নেতৃত্বদানকারী আমির বাদশাসহ শাহ আলম ও আব্দুর রহমানদের কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়।

মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে গ্রেপ্তারের পর আমির বাদশা নিজ দলকে জেতানোর জন্য এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ভিকটিম মোহাম্মদ আলীকে লোহা ও কাঠের বাটাম দিয়ে আঘাত করে মাথার খুলি বের করে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করে। হত্যাকারী আমির বাদশা ও প্রত্যক্ষদর্শী দুজন সাক্ষীসহ মোট তিনজন বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

(ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :