রায়হানকে আটকের কী কারণ ছিল!

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২০, ০৯:২৪

সিলেট ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- কী কারণে সেই রাতে তাকে আটক করা হয়েছিলো। এ বিষয়ে এখনো কিছু জানে না রায়হানের পরিবার।

৩৪ বছর বয়সী রায়হান আহমেদ শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের অ্যাটেনড্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। শহরের যে এলাকায় তিনি বসবাস করতেন সেই আখালিয়া নেহারিপাড়ার কবরস্থানে বৃহস্পতিবার ছিল স্থানীয়দের উপচেপড়া ভিড়।

রায়হানের মরদেহ কবর থেকে তোলার কাজ শুরু হয় সকাল নয়টার দিকে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলছেন, মরদেহটি পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহটির সুরতহাল করা হয়েছে। মরদেহটি পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য ৩ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

রায়হান আহমেদের মামাতো ভাই আব্দুর রহমান বলছেন, বুধবার পরিবারের পক্ষ থেকে মরদেহ কবর থেকে তোলার ব্যাপারে আপত্তি করা হলেও পরে তারা আপত্তি প্রত্যাহার করে।

কেন রায়হান আহমদকে ১০ তারিখ রাতে আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তর তার পরিবারের এখনো অজানা।

তার মামাতো ভাই আব্দুর রহমান বলেন, এই বিষয়টা নিয়ে আমরাও চিন্তিত, উনি গেল কিভাবে পুলিশের কাছে। আমরাও এখনো কনফিউজড।

পুলিশ যখন বলেছে কাষ্টঘর থেকে তাকে ধরা হয়েছে তখন আমরা সেখানে যাই, এলাকার দোকানদার, সেখানকার স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বললাম। কেউ কিছু বলতে পারে না।

আমাদের পক্ষে এখনও বোঝা সম্ভব হয়নি পুলিশ কেন তাকে ধরেছিল। শনিবার রাতে সিলেটের কাষ্টঘর এলাকা থেকে রায়হান আহমেদকে আটক করে বন্দরবাজার এলাকায় পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়।

আব্দুর রহমান বলছেন, ভোরের দিকে অপরিচিত একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে তার পরিবারের কাছে রায়হানের ফোন আসে। তিনি বলছেন, ভোর ৪টা তেত্রিশ মিনিটে আমার ভাই ফোন দিয়েছিল বাসায়। বলেছিল, টাকা নিয়ে তাড়াতাড়ি বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আসেন। তা না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

আঙ্কেল (রায়হানের বাবা) টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে গেলে বলা হয় যে রায়হান ঘুমিয়ে পড়েছে। যারা তাকে নিয়ে আসছে তারাও ঘুমিয়ে পড়েছে। আপনি সকাল ৯-১০টার দিকে আসেন। টাকা ১০ হাজার সাথে করে নিয়ে আসবেন। সকাল বেলা রায়হানের বাবাকে ফাঁড়ি থেকে হাসপাতালে যেতে বলা হয়। সেখানে গিয়ে মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তিনি।

রায়হান আহমেদের মৃত্যু সম্পর্কে ফাঁড়ির পুলিশের দাবি, ছিনতাইয়ের অভিযোগে এলাকাবাসী গণপিটুনি দিলে তারা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমেও প্রথমে এমন খবর প্রকাশিত হয়।

কিন্তু সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে কোনো গণপিটুনি দেখা যায়নি। এই ফুটেজ প্রকাশিত হলে ঘটনার মোড় ঘুরে যায়।

রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে হেফাজতে থাকাকালীন পুলিশের নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ তোলা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের দায়ী করে একটি মামলা করা হয়।

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশের পর ঘটনার বিচারের দাবিতে ফাঁড়িটির আশপাশে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শুরু হয়।

সোমবার ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক আকবর হোসেনসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু আকবর হোসেন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। রায়হান আহমেদের উপরে নির্যাতনের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে।

সিলেটের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত বন্দরবাজার সেখানকার কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম বলেন, বন্দরবাজার এলাকায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে।

তিনি বলছেন, বন্দরবাজার যে ফাঁড়িটা এটার অধীনেই কিন্তু জিন্দাবাজার, বন্দর। সিলেটের ব্যবসা বাণিজ্য কিন্তু এই এলাকা। সেখানকার ব্যবসায়ীরা সেদিন মানববন্ধনে অনেক কিছু বলেছে। সবার বক্তব্য শুনে, আর তার কাণ্ডকারখানা দেখে মনে হচ্ছে কেমন প্রভাব তার।

তিনি বলছেন, আকবর হোসেন ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে চাঁদাবাজি করতো। বিশেষ করে লকডাউনের সময় দোকান খোলা রাখার সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে তিনি অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন।

আমরা যানজট মুক্ত করার জন্য রাস্তা হকার মুক্ত রাখতে চাইতাম। আর তিনি চাঁদা নিয়ে হকারদের বসার ব্যবস্থা করে দিতেন। এসব নিয়ে আমরা অনেকেই ক্ষুব্ধ। অনেক সময় বলতে চেয়েছি। তিনি একটা দায়িত্বশীল পদে আছেন। তাকে না ধরলে মানুষের স্বস্তি আসবে না।

এদিকে এসআই আকবর যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য দেশের সকল ইমিগ্রেশনকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছে ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সূত্র: বিবিসি

ঢাকাটইমস/১৬অক্টোবর/কেআর