টমটম চালকদের মনগড়া ভাড়া আদায়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
| আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৩৪ | প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর ২০২০, ১৮:২৬

কক্সবাজার শহরে দিন দিন বেড়েই চলছে টমটম চালকদের নৈরাজ্য। যেখানে সেখানে পার্কিং, ওভারটেকিং, যাত্রীদের সঙ্গে অসাদাচরণ, তুচ্ছ অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যাত্রীদের অভিযোগ, এ নিয়ে প্রায়ই চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের কথা কাটাকাটিসহ হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এসব চালকদের সঙ্গে রামদা ও চাকু থাকে। সুযোগ বুঝে ছিনতাইও করে তারা।

অভিযোগ আছে, এ বিষয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে জানা গেছে, এসব চালকদের অনেকেই অবৈধভাবে তাদের টমটম চালাচ্ছেন।

ঢাকার আশুলিয়া থেকে কক্সবাজারে আসা পর্যটক শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, এখানকার টমটম চালকরা বাইরে থেকে আসা সাধারণদের থেকে অতিরিক্ত ৫ টাকার ভাড়া ২০ টাকা দাবি করে থাকেন।

যাত্রীদের অভিযোগ, সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ না থাকার অজুহাতে ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা আবার ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা দাবি করেন এখানকার টমটম চালকরা। এ নিয়ে প্রায়ই চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের কথা কাটাকাটিসহ হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। শুধু অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নয়, তুচ্ছ যেকোন বিষয় নিয়েই টমটম চালকরা যাত্রীদের উপর চড়াও হয়। এমনকি প্রতিবাদ করলে নাজেহাল হয়ে হামলারও শিকার হয়েছে। বিশেষ করে শহরের পাহাড়তলী, ঘোনারপাড়া, সমিতিপাড়া ও বাসটার্মিনাল এলাকার টমটম চালকরা যাত্রীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

অনেক যাত্রী অভিযোগ করেন, এলাকার টমটম চালকরা অনেকটা আনাড়ী এবং অদক্ষ। তাদের গাড়িতে সঙ্গে রামদা ও চাকু থাকে। সুযোগ বুঝে ছিনতাইও করে তারা।

জানা গেছে, কক্সবাজার পৌর এলাকার যেকোন স্থানে উঠা নামার জন্য ৫ টাকা ও পৌর এলাকার যেকোন স্থান থেকে শহরতলী বাসটার্মিনাল পর্যন্ত ১০ টাকার ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চালকরা বিভিন্ন সময় ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং পরে তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। যেখানে ভাড়া নেওয়ার কথা ৫ টাকা সেখানে কক্সবাজার শহরের আসা বহিরাগতদের থেকে ভাড়া আদায় করছে ২০ টাকা। আবার কারো থেকে ১০ টাকা। এছাড়া রাত ১০টার পর থেকে ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা আবার ১০ টাকা ও ১০ টাকার ভাড়া ২৫/৩০ টাকা নিচ্ছেন তারা।

চালকরা জানান, পৌরসভার হুকুমেই তারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বিদ্যুতের সমস্যা, গাড়ির অতিরিক্ত দাম, লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি, নবায়ন ফি ও রাস্তা খারাপের কারণে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন বলে জানান।

শহরের বাজারঘাটা মসজিদ রোডের টমটম যাত্রী সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি প্রতিদিন বাজারঘাটা থেকে লালদীঘিপাড় আসি ৫ টাকা দিয়ে। কিন্তু এখন ১০ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। কিছু বললেই আমাদের উপর চড়াও হয়। তাই নিজের সম্মানের ভয়ে আমরা কোন প্রতিবাদ না করে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হই।’

একই রোডের সাফওয়ান আজিজ জানান, রাত ১০ টা হতে না হতেই ৫ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা। আবার কখনো কখনো ২০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে চালকরা। এ ব্যাপারে পৌরসভা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এদিকে টমটম চালক রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘শহরের রোড ভাঙা। চার্জ ভাড়াও বেশি। তাই এখন আগের মতো ৫ টাকার ভাড়া নেই। আবার টমটমের কথিত সমিতি ও বিভিন্নজনকে চাঁদা দিতে হয়। পৌরসভার ভাড়া তালিকায় আমাদের হয়না তাই মনগড়া ভাড়া নিচ্ছি।’

যাত্রীদের অভিযোগ, রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন পৌরবাসী।

এদিকে সূত্র জানায়, গত ১০ বছরে ভিন্ন ভিন্ন নামে একাধিক ব্যক্তি নানা নামে সংগঠন আত্মপ্রকাশের নামে চাঁদাবাজির চেষ্টা করলেও বিগত পৌর প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে কোনো সংগঠনই সফল হতে পারেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক টমটম চালক বলছেন, ‘টমটম চলাচলের অনুমতি দিয়েছে পৌর এলাকায় ভাড়া নির্ধারণ করবে পৌর কর্তৃপক্ষই। যেখানে পৌরসভার মেয়র বলছেন ৫/১০ টাকা ভাড়ায় চলবে টমটম। অপরদিকে কিছু ভুইফোড় টমটম মালিক-চালকদের সংগঠনের নামে পৌরসভার সিদ্ধান্তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে তারা নিজেরা একটি মনগড়া ভাড়ার তালিকা তৈরি করে। ওই তালিকা অনুযায়ী যাত্রীদের থেকে ভাড়া আদায় করছে তারা।’

এদিকে মনগড়া তালিকা দিয়ে ভাড়া আদায় করায় যাত্রীদের সাথে দিনভর বাকবিতন্ডার লেগেই থাকে। এ অবস্থায় টমটম ও অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :