স্টেজ ফোর ক্যানসারের রোগী কতদিন বাঁচে?

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২০, ১৬:০১ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২০, ১৬:০৩

ডা. হাসান শাহরিয়ার কল্লোল

ক্যানসার রোগীদের একটা গ্রুপে একজন রোগীর আত্মীয় আলোচনা করছিলেন একটা কমন বিষয় নিয়ে। তার রোগীকে বাংলাদেশের ডাক্তাররা বলেছিলেন আর ছয় মাস বাঁচতে পারেন কিন্তু তিনি কয়েক বছর বেঁচে আছেন।

কেন এমনটি ঘটে? কিসের ভিত্তিতেই বা ডাক্তাররা বলেন যে রোগী কতদিন বেঁচে থাকতে পারে? শুরুতে তাহলে জানি স্টেজ ফোর ক্যানসার কি? স্টেজ ফোর ক্যানসার হচ্ছে সেই ক্যানসার যা তার মূল যে অঙ্গে তৈরি হয়েছে সেখান থেকে রক্ত প্রবাহ, লসিকা গ্রন্থি বা অন্য কোনো উপায় অন্য কোনো একটি অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে যেই অঙ্গটি ওই ক্যানসার আক্রান্ত অঙ্গের আশপাশে সংযুক্ত অবস্থায় নেই।

স্টেজ ফোর ক্যানসারে অনেক সময় প্যালিয়েটিভ থেরাপিতেও মানুষ অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। যেমন- কতগুলো জায়গায় মেটাসটেসিস হেয়েছে, প্যালিয়েটিভ থেরাপি দেয়ার পর টিউমারটি কেমন রেসপন্স করছে, রোগীর শারীরিক শক্তি কেমন, টিউমারটি এর বায়োলজিক্যাল ক্যারেক্টার বা জৈবিক বৈশিষ্ট্য কেমন ইত্যাদি।

সুতরাং আমরা সাধারণত রোগীদেরকে যেই পরিসংখ্যানগুলো দেই সেটা হচ্ছে একটা জেনারেল পরিসংখ্যান। ধরুন আপনার চিকিৎসক যদি আপনাকে বলে যে স্টেজ ৪ ক্যানসারে সারভাইভাল ৬ মাস। তার মানে হচ্ছে অধিকাংশ রোগী ছয় মাসের মধ্যে মারা যাবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সবাই ছয় মাসের মধ্যে মারা যাবে।

আমরা সাধারণত ক্যানসার চিকিৎসার ফলাফলকে ‘ওভার অল সারভাইভাল’ দিয়ে মেপে থাকি। অর্থাৎ চিকিৎসার পর যদি শতকরা ১০০ ভাগ রোগী পাঁচ বছর বেঁচে থাকে, তাহলে আমরা বলি ‘ফাইভ ইয়ার্স সারভাইভাল’ ১০০%। আবার যদি দেখা যায় কোনো একটি চিকিৎসার পর ৫০ ভাগ রোগী ৫ বছর বেঁচে থাকে সে ক্ষেত্রে এর সারভাইভাল হবে ফিফটি পার্সেন্ট। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জন রোগী পাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকবে কিন্তু বাকি ৫০ জন কিন্তু তার আগেই মারা যাবে। এবং সেই বেঁচে থাকা কিংবা মারা যাওয়াটা নির্ভর করবে আগে বলা নিয়ামকগুলোর ওপর।

সেজন্য সারভাইভাল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করাটা একটু কঠিন এবং সেটা না করাটাই আমি পছন্দ করি। সুতরাং ক্যানসারের রোগীদের জন্য আমি বলব, হতাশ হবেন না, চিকিৎসা চালিয়ে যান। আমি আমার রোগীদের যে কথাটা বলে থাকি (যেটা অবশ্য আমি আমার মেন্টর Prof Melissa Teo-র কাছ থেকে শিখেছিলাম)... ক্যানসারের চিকিৎসা হচ্ছে একটা ‘লম্বা পথচলা’র মতো, এটা কোনো গন্তব্য নয় (Cancer treatment is not a destination, it's a journey)... এটা চলতেই থাকে। এটাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সার্জারি, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল