কক্সবাজারে অবশেষে উচ্ছেদ অবৈধ সেই ৫২ স্থাপনা, আহত ১০

কক্সবাজার প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:৫৮ | প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০২০, ১৮:২৩

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে ব্যবসায়ীদের মালামাল সরাতে সময় দিয়েও ‘শান্তিপূর্ণ’ উচ্ছেদ করতে পারেনি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সময় দেয়ার দুইদিন পার হলে শনিবার দুপুরে উচ্ছেদ অভিযানে গেলে অবৈধ দখলদার ব্যবসায়ীদের ‘ভাড়াটে’ লোকদের বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। এক সময় সেই বাধাই সংঘর্ষে রূপ নেয়। একদিকে ব্যবসায়ীদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, অন্যদিকে পুলিশের টিয়ারশেল। সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট হয়ে পড়ে ‘রণক্ষেত্র’। ভাঙচুর করা হয় বুলডোজার, ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি।

অবৈধ দখলদার ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে কউক ও জেলা প্রশাসন। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ ও কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তার। ওই সময় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সার্কেল পংকজ বড়ুয়া, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনির উল গিয়াস। সংঘর্ষ চলাকালে তিনজন সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।

৫২ জন অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করতে উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিয়েছে। সেই নির্দেশনা মতেই উচ্ছেদ অভিযানে গিয়েছিল কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযানে যাওয়ার আগেই দখলদার ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে ভাড়া করে কিছু মহিলাসহ শতাধিক মানুষ জড়ো করে রাখে। দখলদারদের নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন।

এরপর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে দখলকারীদের ইটপাটকেল-গুলির কারণে পুলিশ পিছু হটে। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ পৌঁছালে দখলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অবৈধ দখলদারদের ভাড়াটে লোকদের রাস্তায় সাদা কাপড় গায়ে দিয়ে শুয়ে রাখা হয়। ওই সময় দখলদারদের নেতারা উস্কানিমূলক বক্তব্য চালিয়ে যান। প্রশাসন উচ্ছেদ করতে চাইলে দখলদার ও ‘ভাড়াটে’ লোকজন হামলা চালায়। ওই সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।

প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত এই সংঘর্ষ চলে। পরে কউক ও জেলা প্রশাসন উচ্ছেদে নামে। এরপর কক্সবাজার পৌর সভার মেয়র মুজিবুর রহমান এসে দখলকারীদের সাথে কথা বলেন। তিনি তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন। তারপর কউকের আরেকটি বুলডোজার এনে পুরো স্থাপনা উচ্ছেদ করে।

সূত্র মতে, যমুনা টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি নুরুল করিম রাসেল, চ্যানেল এস‘র কক্সবাজার প্রতিনিধি স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী ও জিটিভির ক্যামরাপার্সন সাঈদুল ইসলামসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। ওই সময় পুলিশ অন্তত আটজনকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে যাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে; তারা হলেন- জেলা যুবদল নেতা আমিনুল ইসলাম মুকুল, জয়নাল, সরওয়ার, কাজল। বাকিদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) সচিব আবু জাফর রাশেদ সাংবাদিকদের জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কউক ও জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। ওই সময় বাধা দেয়ায় ও হামলা করায় পুলিশ আইন প্রয়োগ করেছে।

তিনি জানান, গত ১৫ অক্টোবর উচ্ছেদ অভিযানে গেলে দখলদার ব্যবসায়ীরা মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য একদিন সময় চেয়েছিলেন। মানবিক বিবেচনায় তাদের একদিন সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দুই দিন পর আবার উচ্ছেদ অভিযানে গেলে উচ্ছেদ টিমের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা।

প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের নির্দেশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ৫২ জন দখলদারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে গত ১৫ অক্টোবরও বাধার মুখে পড়েছিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ওই দিন দুপুর ১২টা থেকে দুইটা পর্যন্ত প্রশাসন বুলডোজার দিয়ে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের চেষ্টা করেও বাধার মুখে উচ্ছেদ করতে পারেনি। পরে অভিযান পরিচালনাকারী টিম অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেও একপর্যায়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই ফিরে আসতে হয়।

ওইদিন দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযানে গেলে কক্সবাজার জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুলের নেতৃত্বে প্রায় ১০০ জন ভাড়াটে লোক অভিযানে বাধা দেয়ার চেষ্টা চালায়। পাশাপাশি নানা অজুহাতে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতেও চেষ্টা চালান এই যুবদল নেতা।

জানা গেছে, আমিনের পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে নানা অপকৌশল অবলম্বন করেছিলেন ৫২ জনের সিন্ডিকেটের অন্যতম দখলদার ও রিটকারী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও আবদুর রহমান।

বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছিলেন কক্সবাজার সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তার। তিনি ওই দিন বলেছিলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে সুগন্ধা পয়েন্টে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিই আমরা। উচ্ছেদে এসে দোকানদারদের ঘণ্টাখানেক সময়ও দেয়া হয়, যাতে তারা নিজেদের মূল্যবান মালামাল সরিয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংও করা হয় মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু অবৈধ দখলদাররা তা না করে উল্টো বাধা দেয়ার জন্য পরিকল্পনা নেয়। পরে প্রশাসন হার্ডলাইনে গেলে তাদের অনুরোধের কারণে মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য একদিনের সময় দেয়া হয়েছে।’

এর আগে ১ অক্টোবর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে ৫২ জনের সিন্ডিকেটের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের দেওয়া রুল ও স্থগিতাদেশ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। ফলে ওই ৫২ ব্যক্তির স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো বাধা নেই বলে জানায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :