ক্ষুধা সূচকেও বাংলাদেশের পেছনে ভারত, বিশ্বে ৯৪তম

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৪০ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৫৫

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

সমরশক্তিতে চতুর্থ শক্তিশালী দেশ হলেও বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে অনেক দরিদ্র দেশের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে ভারত। ২০২০ সালের এই সূচকে দেশটির অবস্থান ১০৭টি দেশের মধ্যে ৯৪তম। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের চেয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশীয় দেশ বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেপাল।

শুধু ক্ষুধার সূচকই নয় ১৩৮ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের ১৪ শতাংশ মানুষই ভুগছেন অপুষ্টিতে আর চাইল্ড স্টান্টিং অর্থাৎ দেশটিতে রুগ্ন শিশুর হার ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেস্কের শুক্রবার প্রকাশিত সবশেষ প্রতবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সূচকে ক্ষুধা মেটানোর নিরিখে তালিকার ওপরের দিকে রয়েছে ভারতের অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি দেশ চীন। আর ক্ষুধার্থ মানুষের সংখ্যা কমিয়ে তালিকার বিশের মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছে ব্রাজিল, চিলি, কিউবা, আর্জেন্টিনাসহ লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ।

এ বছর মোট ১০৭টি দেশের ক্ষুধার সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ভারত রয়েছে ৯৪তম স্থানে। ২০১৯-এ ভারতের র‌্যাঙ্কিং ছিল ১০২। তালিকায় ৬৪তম স্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ৭৩, বাংলাদেশ ৭৫, পাকিস্তান ৮৮তম স্থানে।

অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু, পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুর উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের মতো কয়েকটি মাপকাঠিতে বিভিন্ন দেশকে বিচার করে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক।

ক্ষুধা মেটোনোর নিরিখে উদ্বেগজনক জায়গায় রয়েছে আফ্রিকার তিনটি দেশ— চাঁদ, মাদাগাস্কার এবং তিমর। আর সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে ১৭টি দেশ।

ক্ষুধা সূচকের চারটি মাপকাঠি স্থির করা হয়েছে। সেই মাপকাঠিতে কোনও দেশ ১০-এর নীচে থাকলে সেখানে অভুক্তের সংখ্যা ‘সবচেয়ে কম’। ১০-১৯.৯ এর মধ্যে থাকলে ‘মাঝারি’, ২০-৩৪.৯ বোঝাতে ‘গুরুতর’ এবং সেই মাপকাঠিতে ৩৫ থেকে ৫০-এর মধ্যে ‘উদ্বেগজনক’ এবং ৫০-এর ঊর্ধ্বে কোনও দেশ থাকলে সেখানে পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করা হয়।

ক্ষুধা সূচকের এই মাপকাঠির ৫০-এর মধ্যে ভারতের স্কোর ২৭.২। ফলে ‘গুরুতর’ জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত। এই মাপকাঠিতে ৫০-এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার স্কোর ১৬.৩ (মাঝারি), নেপাল ১৯.৫, বাংলাদেশ ২০.৪ এবং পাকিস্তান ২৪.৬।

তবে ২০০০, ২০০৬ এবং ২০১২-র তুলনায় এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১২ সালে ভারতের স্কোর ছিল ২৯.৩, ২০০৬-এ ৩৭.৫ এবং ২০০০ সালে ৩৮.৯।

শুধু ক্ষুধা সূচক নয়, সামাজিক অনেক সূচকেও বাংলাদেশের পেছনে আছে ভারত। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৭। ভারতে এই হার ৩২। বাংলাদেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৫৮ বছর যেখানে ভারতের গড় আয়ু ৬৮ দশমিক ৮ বছর।

শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নেও ভারতে চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া মেয়েদের উপবৃত্তিসহ স্কুলজীবনের সব পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে ৪ থেকে ৬ মাসের বেতনসহ মার্তৃকালীন ছুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তালাকপ্রাপ্ত ও নিঃস্ব নারীদের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে ৭০ শতাংশ এবং মৎস্যশিল্পে ৬০ শতাংশ নারী কাজ করছে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) র‍্যাংকিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জেন্ডার সমতা বিধানে শীর্ষস্থানে রয়েছে দেশটি।

দারিদ্র্য বিমোচনেও অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এখানে সাফল্য দেখিয়েছে ভারতও। রাজনীতিতে নারীদের উপস্থাপনে ডব্লিউইএফ সূচকে ৭ নম্বর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারত এখানে রয়েছে ১৫ নম্বর অবস্থানে।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের আসনের ১৪ শতাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত। অন্যদিকে ভারতে ১১ শতাংশ। দেশটিতে এখনও পর্যন্ত নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ আইন আলোর মুখ দেখেনি।

পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুর উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের বিষয়টি (চাইল্ড ওয়েস্টিং) সবচেয়ে বেশি প্রকট দক্ষিণ এশিয়ায়। ভারতে এই ধরনের ঘটনার হার ১৭.৩ শতাংশ। ২০১৯-এ যা ছিল ২০.৮ শতাংশ।

ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/ইএস