সবই ছিলো, ছিলো না ভোটারের উপস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২০, ২২:০৪ | প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০২০, ২১:৪৬
  • উপ-নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ কম থাকে: সিইসি
  • দুই আসনেই বিএনপি সমর্থিত প্রাথীর ভোট বর্জন

যথারীতি নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত ভোট কর্মকর্তারা। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সময়মতোই পৌঁছে ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম। মেশিনে ত্রুটি হলে ঠিক করতে প্রস্তুত ছিলো কারিগরি দল। নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক কেন্দ্রে মোতায়েন ছিলো পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। র‌্যাব ও বিজেবির সদস্যরাও ছিলেন টহলে। করোনার সংক্রমণ এড়াতে কেন্দ্রে রাখা ছিল স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী।

এত সব আয়োজন ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনকে ঘিরে।

কিন্ত শনিবার এই দুটি সংসদীয় আসনে যাদের জন্য এত আয়োজন; বলতে গেলে সেই ভোটারদের উপস্থিতিই ছিলো না। ভোটগ্রহণ শুরু থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় একটি কেন্দ্রে মাত্র দুই ভোট পড়েছে এমন তথ্যও জানা গেছে।

ভোট শুরু আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা এই আসনে উপনির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম হবে না বলে তার ধারণা জানান। তবে ভোটের শেষে সিইসি বলেছেন, কেন্দ্রে ভোটারদের কম উপস্থিতির জন্য উপনির্বাচনে তাদের আগ্রহ কম থাকাই দায়ী। যেহেতু উপনির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় না, সেজন্য ভোটাররা খণ্ড-খণ্ড নির্বাচনে তেমন আগ্রহ দেখান না বলেই মন্তব্য সিইসির।

দুই আসনেই ভোট সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কোথাও অসুবিধার সৃষ্টি হয়নি। আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ নেই।’

যদিও ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনে বিএনপি সমর্থিত দুই প্রার্থীই এজেন্টদের বের করে দেয়া, ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধাসহ কারচুপির অভিযোগ এনেছেন। তারা দুজনই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

শনিবার ঢাকা-৫ এর নির্বাচনী এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক কেন্দ্র ঘুরে কোনও কেন্দ্রেই ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। দুই একজন ভোটার বিছিন্নভাবে এসে ভোট দিয়ে চলে গেছেন। ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করেছেন ভোট কর্মকর্তারা।

গত ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপ নির্বাচনে মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। যদিও মহামারির মধ্যে ঢাকার বাইরে ব্যালট পেপারে একাধিক উপনির্বাচনে ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। সে কারণে এবার দুই উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোটের হার কেমন হয় তা নিয়ে নজর ছিল পর্যবেক্ষকদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই দুই আসনে ভোটারদের তেমন সাড়া মেলেনি। ভোট শেষে রাতে দুই আসনেই বড় ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসন সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য হয়। এই আসনে প্রার্থী ছিলেন- আওয়ামী লীগের কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় পার্টির মীর আব্দুস সবুর, এনপিপির আরিফুর রহমান এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের আনছার রহমান শিকদার। ঢাকার এই আসনে মোট ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৭১ হাজার ১২৯ জন।

অন্যদিকে ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে নওগাঁ-৬ আসন শূন্য হয়। রাণীনগর উপজেলা ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৭২৫ জন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল, বিএনপির শেখ রেজাউল ইসলাম, এনপিপির মো. খন্দকার ইন্তেখাব আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

ঢাকা-৫ এর কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিন দেখা গেছে, একজন প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দায়িত্ব পালন করেছেন। সব বুথে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এজেন্টদের পাওয়া গেলেও বিএনপির প্রার্থীর পক্ষের কোনো এজেন্টকে পাওয়া যায়নি। হাতেগোনা কিছু কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর এজেন্টদের পাওয়া গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও খোঁজ পাওয়া যায়নি। যদিও নির্বাচনের আগের দিন রাতেই বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেন তার এজেন্টদের কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ভোটের দিন সকালে অনেক কেন্দ্রে তার এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি, কোথাও আবার বের করে দেয়া হয়েছে বলেও তার অভিযোগ ছিল।

তবে একাধিক কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসের কাছে দাবি করেছেন, ধানের শীষের প্রার্থীর কোনো এজেন্ট তাদের কাছে আসেননি। এলে তারা অবশ্যই বুথে বসার ব্যবস্থা করতেন।

কেন্দ্র-বুথে দিনভর ছিলো বহিরাগতরা

বেলা ১২টার দিকে মাতুয়াইলের শামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের মূল ফটকে ঢুকতেই মানুষের জটলা চোখে পড়ে। কাছে গিয়ে দেখা যায় সবার গায়ে নৌকার প্রার্থীর টি শার্ট, বুকে ঝুলছে ব্যাজ। ভেতরে ঢুকে মাঠের চারপাশে দেখা যায় একই প্রার্থীর লোকজনের ভিড়। বুথের ভেতরে বাইরেও দেখা যায় মনিরুল ইসলাম মনুর ব্যাজ পড়া লোকদের ভিড়। এই প্রতিষ্ঠানটিতে চারটি কেন্দ্র। সবগুলোতেই একই চিত্র দেখা গেছে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা এদের নিয়ে বিরক্ত হলেও নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলেছেন। পুলিশ সদস্যদের কিছু সময় বাদে বাদে বাঁশি ফুঁকে সবাইকে বের হতে বললেও এদের কাউকে সরে যেতে দেখা যায়নি।

এরমধ্যে ১টার দিকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রে আসেন। তখন সবাই তটস্থ হয়ে পড়েন। অবশ্য বহিরাগতদের যেন ঢুকতে না দেয়া হয় সেজন্য পুলিশ সদস্যদের তিনি কড়া নির্দেশ দিয়ে চলে যান। তখনও অবশ্য কাউকে বের হতে দেখা যায়নি। এমন চিত্র ছিলো এই আসনের সবখানেই। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাও বিব্রতবোধ করেন। লতিফ ভুঁইয়া স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের সামনে আব্দুল আজিজ নামের একজন ভোটার ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা কেমন ভোট? বাধাও দেয় আবার ভেতরে গিয়ে এরাই টিপ দিয়ে দেয়।’

ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি শুরু

ঢাকায় কর দিয়ে ২৬৮০ বিয়ে 

সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্যেও সংখ্যায় এগিয়ে ব্যবসায়ীরা: সুজন

মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: ড. কামাল উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :