২৮ দিনে কমেছে ১৪ কেজি: অবিশ্বাস্য পরিবর্তন আবু হুরায়রার

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৩২

অনেকেই এখন ওজন বেশি হওয়ার সমস্যাই ভুগছেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ না করার ফলে ওজন কমাতে পারেন না। আবার অনেকেই আছেন যারা ওজন কমাতে চাইলেও সে বিষয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেন। কারণ ওজন কমানোর যাত্রা বেশ কঠিন।

তবে এমন অনেক লোক রয়েছেন যারা এই সমস্যার সমাধানে শুধু ইচ্ছা পোষণ করেই বসে থাকেন না। তারা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদের উদ্দেশ্য সফল করেন। শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তা আবু হুরায়রা তাদেরই একজন। তিনি ঢাকা টাইমসে লিখেছেন তার ওজন কমানোর গল্প। যারা ওজন কমাতে চান তারা আবু হুরায়রার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পারেন।

পরিচয়

নাম: আবু হুরায়রা

পেশা: শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তা, জয়েন্ট ডিরেক্টর (বহুবচন গ্রুপ)

বয়স: ২৩

উচ্চতা: ৫'৫"

সর্বাধিক ওজন: ৭৬ কেজি

বর্তমান ওজন: ৬২ কেজি

ওজন কমেছে: ১৪ কেজি

সময় লেগেছে: ২৮ দিন

টার্নিং পয়েন্ট: আসলে আমি ছোটবেলা থেকেই মোটা ছিলাম। সেজন্য স্কুলে, কোচিংয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো। তখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনোরকম খারাপ লাগা কাজ করতো না। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি, এই স্থূলতা আমার জীবনযাত্রায় মানসিক এবং শারীরিক উভয়ভাবে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। যেমন- কোথাও গেলে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে হয়, পাছে আবার কেউ হাসাহাসি করে কি না। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগতো, যখন নিজের কাছে নিজেকে অসুন্দর লাগতো শুধু স্থূলতার কারণে।

শারীরিকভাবেও অনেক রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও কোনো শারীরিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারতাম না। সবাই মাঠে খেলছে আমি বসে বসে দেখছি। অল্পতেই হাঁপিয়ে যাই বলে আমাকে কোনো খেলায় নেওয়া হতো না বা কেউ নিতে চাইতো না।

এসব আমাকে প্রতিনিয়ত খুব কষ্ট দিত। একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম, যেভাবেই হোক আমি আমার স্বাস্থ্য কমাবো। এরপর থেকে শরীরচর্চা এবং ডায়েট শুরু করি। কিন্তু কোনো নিয়ম ফলো না করার কারণে উপকৃত হচ্ছিলাম না। তাছাড়া এইসব ডায়েট, ব্যায়াম ছিল অনিয়মিত। একদিন করি তো অন্যদিন করি না। শেষ পর্যন্ত ধরে নিলাম যে, আমি কখনো স্লিম হতে পারবো না।

খুব ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। আল্লাহর মেহেরবানীই বলবো হঠাৎ একদিন ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে একটা ভিডিও দেখি। ভিডিওতে আমারই ক্লাস শিক্ষক মুহাদ্দিস জিকরুল্লাহ খান সাহেব ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। তিনি বলছিলেন, জাহাঙ্গীর কবিরের ভিডিও দেখে সফল হবার গল্প।

আমি খুব অবাক হই, এত দ্রুত এত সুন্দরভাবে ওজন কমানো যায়! আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। কিন্তু আমি খুব আনন্দ অনুভব করছিলাম। আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল এবার আমি সফল হবই ইনশা আল্লাহ। আমার ৭/৮ বছরের সেই স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারবো। তারপর স্যারের ভিডিও ফলো করে আমি আমার ডায়েট শুরু করি। প্রথম প্রথম কিছুটা ভয় হত, সফল হবো তো? আবার আশাও ছাড়িনি।

ডায়েট শুরু করার আগের দিন ওজন মাপলাম ৭৬ কেজি। পরদিন ডায়েট শুরু করলাম। এক সপ্তাহ ওজন মাপিনি। ভয় লাগতো, যদি দেখি ওজন কমেনি, তাহলে তো মন ভেঙে যাবে। এভাবে একসপ্তাহ গেলো। একসপ্তাহ পর ওজন মাপলাম। ওজন দেখে আমার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না। এটা কিভাবে সম্ভব! আমার ওজন ৭০ কেজি ৬ শ গ্রাম। ১ সপ্তাহে ৫ কেজি ৪শ গ্রাম ওজন কমেছে! আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। গেলাম বাসার পাশের ফার্মেসিতে সেখানে আবার ওয়েট মাপলাম। দেখি, ঠিকই আছে ৭০ কেজি ৫/৬ শ গ্রাম। এত খুশি লেগেছিল, আমি বোঝাতে পারবো না!

তখন আমি ঢাকায়। আম্মু দেশের বাড়িতে। আম্মুকে ফোন দিয়ে বললাম আম্মু আমি ৫ কেজি কমেছি। আম্মু খুব অবাক হলো। হুট করে ফোন দিয়ে বলেছি আমি ৫ কেজি কমেছি। কারণ আম্মু জানত না আমি ডায়েট শুরু করেছি। আম্মুকে সব বুঝিয়ে বললাম। আম্মুও অনেক খুশি হলেন। তিনিও চাইতেন যে, আমি স্লিম হই। সেদিনের পর আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। ডায়েট চলতে থাকে। এরপর প্রতিদিন ওজন মাপি। কোন দিন ৬০০ গ্রাম, কোন দিন ৪০০/৫০০ গ্রাম করে ওজন কমছে। নিজের কাছেই নিজেকে অনেক ভালো লাগতে শুরু করে। ২৮ দিনের মাথায় আমার ওজন এসে দাড়ায় ৬২ কেজিতে। এখন আমি ৬৫ কেজি ওজনের মধ্যে থেকেই মেইনটেইন করতে চাই।

খাবার-

সকালের নাস্তা: বুলেট কফি, অ্যাপল সিডার ভিনেগার, ঘি দিয়ে ডিম ভাজি, গ্রিন টি।

দুপুরের খাবার: অ্যাপল সিডার ভিনেগার, সবুজ শাক-সবজি (অলিভ অয়েল দিয়ে) অথবা বাটার দিয়ে হালকা ফ্রাই করে মাংস/মাছ, কাজু/পেস্তা/চীনা বাদাম।

রাতের খাবার: অ্যাপল সিডার ভিনেগার, বাদাম, ঘী দিয়ে ডিম ভাজি, বুলেট কফি/ গ্রিন টি।

ব্যায়ামের আগের খাবার: বুলেট কফি।

ব্যায়ামের পরের খাবার: কচি ডাবের পানি।

ব্যায়াম: ইয়োগা/অ্যানোরিবিক জোনে হাঁটা/অল্প সময় হিট এক্সারসাইজ করা।

ফিটনেস সিক্রেট: ফিটনেস সিক্রেট বলতে আমার কাছে মনে হয়, সবগুলো কাজ ঠিকঠাক করার পর (যা আমাকে বেশি উপকৃত করেছে) সকাল ৬-৭ টার মধ্যকার সময়টাতে হাঁটা। অবশ্যই সেটা শরীরে সকালের রোদ গায়ে মেখে। এই সময়ের রোদ মেদ ঝরানোর জন্য খুব উপকারী। বিশেষ করে পেটের মেদের জন্য। আর রাতে ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে যাওয়া।

অনুভূতি: আলহামদুলিল্লাহ। আগের থেকে অনেক অনেক ভালো অনুভব করি। গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম ছিল, এখন নেই। আলসেমি লাগতো, নিজেকে এখন চনমনে মনে হয়। সবচেয়ে খারাপ একটি অভ্যাস ছিল যে, ঘুমের সময় নাক ডাকতাম। এটাও সেরে গেছে। সবাই বলে আগের থেকে এখন বয়স অনেক কম মনে হয়। আমারও এমনই লাগে।

পরামর্শ: যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তারা এখনই শুরু করতে পারেন। সর্বোপরি চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন। ওজন কমছে না কেন, এত কম কমছে কেনো, এইগুলো নিয়ে চিন্তা করবেন না। লাইফস্টাইল চেঞ্জ করুন। ইনশা আল্লাহ, অবশ্যই সফল হবেন।

ওজন কমানোর এমন গল্প যদি আপনার থাকে, তাহলে আপনিও লিখতে পারেন ঢাকা টাইমসে। ছবিসহ আপনার লেখা পাঠিয়ে দিন [email protected] এই ঠিকানায়।

ঢাকা টাইমস/১৮অক্টোবর/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :