লুইস গ্লিক: মিথ ও মনোচৈতন্যের কবি

শহিদুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর ২০২০, ১৬:২৬

২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লুইস এলিজাবেথ গ্লিক (Louise Elisabeth Gluck) প্রধানত একজন কবি। তিনি একজন প্রাবন্ধিকও। তার ÔFor Her Unmistakable Poetic Voice That With Austere Beauty Makes Individual Existence Universal’-এর জন্য সুইডিস নোবেল কমিটি তাকে এবারের পুরস্কারে নির্বাচন করে। ১৯৪৩ সালের ২২ এপ্রিল আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে জন্ম নেওয়া গ্লিক ইয়েল বিশ^বিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক।

ব্যবসায়ী বাবা ড্যানিয়েল গ্লিক এবং মা বিয়েত্রিস গ্লিকের বড় মেয়ে লুইস গ্লিকের স্কুলজীবন কাটে নিউইয়র্কের জর্জ ডব্লিউ হিউলেট হাই স্কুলে। সারাহ লরেন্স কলেজ শেষ করে তিনি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেও কোনো ডিগ্রি না নিয়েই বিদায় নেন সেখান থেকে। ১৯৬৭ সালে তিনি প্রথম বিয়ে করেন, পরবর্তী সময়ে যার বিচ্ছেদ হয়।

গ্লিকের প্রথম কবিতার বই `First Born’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্র্রন্থের মধ্যে আছে- ÔThe Triumph Of Achilles’ (1985), ‘The Wild Iris’ (1992), ‘Averno’ (2006), `A Village Life’ (2009), `Faithful And Virtuous Night’ (2014). তার গদ্যের বই ÔAmirican Originility’.

লুইস গ্লিক তাঁর বইতে মৃত্যু, নিসর্গ ও পৌরাণিকতার কথা ফুটিয়ে তুলেছেন। ব্যক্তির অনুভূতি সরল প্রকৃতির কথা তার কাব্য-সাহিত্যে উল্লেখিত হয়েছে।

এক সন্তানের মা গ্লিক শিক্ষকতা করেন লরেঞ্জ কলেজ, উইলিয়াম কলেজ, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পুলিৎজারসহ (১৯৯৩) বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন। তার অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে Bollingen prize (2001), US poet laureate (2003-2004), National book award (2014), National Humanities Medal (2015) প্রভৃতি।

বিখ্যাত লেখক অ্যালান উইলিয়ামসন বলেন, ÔWhen you love the world you hear celestial music or when in the wild lris the deity speaks Through changes in weather.’

নোবেল কমিটির মহাসচিব অধ্যাপক ম্যাটস মাম এক সংবাদ সম্মেলনে পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষইা করেন। সুইডিশ একাডেমির পক্ষ থেকে তাদের রীতি অনুযায়ী ভোর সাড়ে ছয়টার সময় গ্লিককে ফোন করে। যখন গ্লিকের ফোন বেজে উঠল তখন তিনি আনন্দের সাথে বিরক্তও বোধ করেছিলেন। এবং দুই মিনিটের বেশি কথা বলতে পারবেন না বলে জানান। পরে কথা বলতে বলতে দুই মিনিট পার হলে তিনি ফোনটা রেখে দেন।

আমেরিকান মহিলা কবি টনি মরিসনের পরে গত ২৭ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো আমেরিকান নারী কবি নোবেল পেলেন। একজন আত্নজৈবনিক, অবেগময়, ইতিহাস সচেতন, প্রকৃতি ও মনোচৈতন্যের কবি লুইস গ্লিক। শব্দের কারিগর হিসেবে তিনি মিথ ও মৃত্যুকে নিয়ে ভেবেছেন এবং হয়েছেন অপরাজিত কবি।

গ্লিকের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন হাঙ্গেরিয়ান ইহুদি। তিনি স্কুলজীবনে মানসিক রোগে ভোগেন এবং মনোচিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন। এক সময় তার এমন হয়েছিল যে তিনি আশা করতেন না, তিনি বেঁচে থাকবেন পৃথিবীর বুকে, হাঁটবেন, অনুভব করবেন জগতের রূপ-রস-গন্ধ।

লুইস গ্লিক স্বপ্ন ও বাস্তবতার মধ্যে বসবাস করেন। তিনি শব্দকে শিল্পে রূপ দেন এবং বুদ্ধিবৃত্তিকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেন। আর এই বুদ্ধি তাকে টেনে নিয়ে গেছে গন্তব্যে। শব্দ, ছন্দ, অন্তমিল, উপায়, অলংকার ব্যবহারে মাধুর্য তাকে অন্যান্য কবি ও কাব্য থেকে স্বতন্ত্র রূপ দিয়েছে। তাঁর একটি কবিতা এখানে উল্লেখ্য:

My soul has been so fearful, so violent:

forgive its brutality,

As though it were that soul, my hand moves

over your cautiously,

Not wishing to give offense

But eager, finally, to achieve expression

as substance…

(ক্রসরোডস- A village life)

লেখক: প্রভাষক, দর্শন বিভাগ, সরকারি ইস্পাহানী কলেজ, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :