তৃতীয় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৫৯

অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে রোবটিক্সের প্রতি আগ্রহী করে তোলার মধ্য দিয়েই শেষ হলো তৃতীয় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২০। ১৮ অক্টোবর অনলাইনে এ অলিম্পিয়াডের সমাপনী এবং ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত ৯,১০,১৬ এবং ১৭ অক্টোবর তারিখে অনলাইনেই এ অলিম্পিয়াড আয়োজিত হয়।

তৃতীয় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২০-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।

অনলাইনে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে খুবই ইতিবাচক উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন,রোবট মানেই সবকিছু কন্ট্রোল করা নয়। এর মূল কাজ হচ্ছে মানুষের কার্যক্রম সহজ করা। এমনকি মানবতার প্রয়োজনেও রোবটের প্রয়োজনীয়তা আছে।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন,বর্তমান প্রজন্ম যারা রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশের মান উজ্জ্বল করছে তারাই যদি রোবট তৈরি করে তাহলে আর বিদেশ থেকে কোন রোবট আমদানির প্রয়োজন পড়বে না।

তিনি আরো বলেন, ছোট থেকেই ছেলেমেয়েদের রোবটিক্সের সঙ্গে পরিচিত করতে পারলে ছেলেমেয়েরা আরো সৃজনশীল হয়ে উঠতে পারবে। ভবিষ্যতের সৃজনশীল শিক্ষা যেন আনন্দের হয়। শুধু সার্টিফিকেটের জন্য যেন তারা না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

তৃতীয় রোবট অলিম্পিয়াডের আয়োজনে সার্বিক সন্তোষ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন,বাংলাদেশ খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের আয়োজক দেশ হতে পারবে। এ ক্ষেত্রে আইসিটি ডিভিশন সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে।

সমাপনী এবং ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) ড.এ এস এম মাকসুদ কামাল বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, একটা সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদেরকেই সুযোগ খুঁজতে হতো,এখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলো সুযোগ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে।

তিনি আরো বলেন,তরুণরা কর্মউদ্দীপনায় পরিপূর্ন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে উত্তীর্ণ হতে সরকারের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা বাস্তবায়নে এই তরুণ সমাজ সব থেকে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার বক্তব্যের শুরুতেই কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,অনলাইনে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার কারনে বিজয়ীদের উল্লাস বা কিছুটা পিছিয়ে পড়াদের মৌনতা কোনটাই উপলব্ধি করতে পারছেন না। তবে তিনি এবছরের অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। প্রথম বারেই আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ দলের সাফল্যের ধারাবাহিকতা আগামীতেও বজায় থাকবে বলেও তিনি আশা করেন।

অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন,ভবিষ্যতে আরো ছাত্র-ছাত্রী যাতে উৎসাহ নিয়ে প্রযুক্তির পথে চলতে শুরু করে সে জন্য তিনি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনির পাঠ্যবই-এ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের ছবি সংযুক্ত করেছেন। সর্বোপরি,এ ধরনের উৎসাহমূলক কাজের উদ্যোগ নেয়ার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে ধন্যবাদ জানান।

সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব বলেন,জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অঙ্গীকারবদ্ধ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় আমাদের তরুন সমাজকে প্রস্তুত করতে আমরা রোবটিক্স এর পাশাপাশি বিগ ডেটা,আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স,রোবটিক্স প্রসেস অটোমেশন ইত্যাদি বিষয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজন বুঝে প্রশিক্ষন দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তি নির্ভর যেখানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে আমাদের এই ক্ষুদে রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়াররা। সব দেশকে পেছনে ফেলে রোবট অলিম্পিয়াডের এই ইতিবাচক প্রতিযোগিতা বাংলাদেশকে সেই পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উই রোবটিক্স এর নির্বাহী পরিচালক এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিক মায়ার তার বক্তব্যের শুরুতে তৃতীয় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২০ এ অংশ নেয়া সকল প্রতিযোগীদের অভিনন্দন জানান ।এছাড়া বিশ্বের প্রায় ৩০টির ও বেশি দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ ফ্ল্যাইং ল্যাবস এর কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেন।

এ সময় অলিম্পিয়াডের অন্যতম আয়োজক বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারন সম্পাদক মুনির হাসান রোবট অলিম্পিয়াডে আমাদের শিক্ষার্থীদের সাফল্যের উল্লেখ করার পাশাপাশি মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষায় স্ক্যাচ প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে রোবট সম্পর্কে পড়াশুনা করতে পারবে বলে আশা করেন।

সমাপনীর স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ এনামুল কবির সকল অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন,যেহেতু বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড এবং ইন্টারন্যাশনাল রোবট অলিম্পিয়াড পরিচালনা -কার্যক্রম একই,সেহেতু বিডিআরও বাংলাদেশের ক্ষুদে আবিষ্কারকদের নিজেদেরকে আরো ভালোভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

তিনি আরও জানান যে, প্রতি বছর বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড (বিডিআরও) এ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা শতকরা ৮০% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এবছর ৭৩১ জন অংশগ্রহনকারীর মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশই বালিকা।

সমগ্র ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল। এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড.শামীম আহমেদ দেওয়ান।

এবছর জাতীয় পর্বে দেশের ৬২টি জেলা থেকে ৭৩১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ বছর রোবট অলিম্পিয়াডে ক্রিয়েটিভ ক্যাটেগরি,রোবট ইন মুভি,রোবট গ্যাদারিং এবং রোবটিক বুদ্ধি (কুইজ প্রতিযোগিতা) এই মোট চারটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। গত ৯ তারিখে রোবট ইন মুভি এবং ১০ তারিখে রোবট গ্যাদারিং ও রোবটিক্স কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এবং গত ১৬,১৭ তারিখে ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরির প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

অনলাইনে রোবট অলিম্পিয়াডের এই চার ক্যাটাগরি থেকে মোট ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। জাতীয় পর্বে বিজয়ীদের মধ্য থেকে পরবর্তীতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরাই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।এই তিনটি প্রতিযোগিতা দক্ষিণ কোরিয়ার দ্যেগু শহরে অনুষ্ঠিতব্য ২২তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের দল গঠনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পর্বের নিয়ম অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়।প্রতিটি প্রতিযোগিতায় জুনিয়র এবং চ্যালেঞ্জ (সিনিয়র) এই দুইটি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা