‘এমআরপি এবং ওয়ারেন্টি নীতি বাস্তবায়ন হলে প্রযুক্তি ব্যবসায়ে শৃঙ্খলা ফিরবে’

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২০, ০৯:০৫ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০, ১১:২৪

আসাদুজ্জামান

সারা দেশে কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, পরিবেশক, খুচরা বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ২০১৮ সালের ২২ জুলাই এমআরপি ও ওয়ারেন্টি নীতিমালা কার্যকর করে বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি (বিসিএস)। এ নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে কম্পিউটার পণ্যের দাম ও বিক্রয়োত্তর সেবা নিয়ে প্রতারিত হবেন না ক্রেতারা। পাশাপাশি বিক্রেতারাও উপকৃত হবেন।

দেড় বছরে সংগঠনটির বাস্তবায়নকৃত দুটি নীতিমালা ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করার পর ক্রেতা-ভোক্তা এবং সংগঠনের সদস্যদের কতটা উপকার হয়েছে এসব বিষয়সহ আইসিটি সেক্টরের সমসাময়িক নানা দিক নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা হয় বিসিএস-এর সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসাদুজ্জামান।

দেশের আইসিটি খাতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

মো. শাহিদ-উল-মুনীর: সারা পৃথিবী এখন সংকটময় সময় অতিবাহিত করছে। অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব লক্ষণীয়। আমাদের দেশও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। শুধু আইসিটি নয়, সব ব্যবসাতেই কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীন সর্বপ্রথম আক্রান্ত হওয়াতে ডিসেম্বর মাসে চীনের বাজারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এসময় অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এলসি করতে পারেনি। চীননির্ভর প্রযুক্তি বাজারে লকডাউনের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়। লকডাউনের সময় প্রযুক্তি বিপণন কেন্দ্রগুলো পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এসময় প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা এবং অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হওয়ার কারণে ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। তবে সরকারি বা কর্পোরেট পর্যায়ে এখনো আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি। তবে আমরা আশাবাদী। সরকারের প্রযুক্তি বিভাগ এবং ব্যাংকগুলো যেভাবে আইসিটি শিল্পকে সহযোগিতা করেছে, সে হিসেবে শিগগিরই প্রযুক্তি পণ্যের বাজার পুরোপুরিভাবে চাঙ্গা হবে।

বিসিএস-এর পক্ষ থেকে কম্পিউটার পণ্য কেনাবেচায় এমআরপি ওয়ারেন্টি নীতিমালা করা হয়েছিল। বাজারে এর প্রয়োগের শেষ অবস্থা জানতে চাই।

মো. শাহিদ-উল-মুনীর: এমআরপি ও ওয়ারেন্টি নীতিমালা নিয়ে বিসিএস কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এমআরপি এবং ওয়ারেন্টি নীতি পুরোপুরি অনুসরণ করছে। যেখানে এখনো বাস্তবায়ন হয়নি সেখানে বাস্তবায়নের জন্য আমাদের টিম কাজ করছে। প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায় এই নীতি পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করার জন্য বিসিএস আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

সমিতির সদস্যরা এটি প্রয়োগের ফলে তাদের হার্ডওয়ার ব্যবসায় কতটা লাভবান হচ্ছে?

মো. শাহিদ-উল-মুনীর: এমআরপি এবং ওয়ারেন্টি নীতি বাস্তবায়ন হলে প্রযুক্তি ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে আমদানিকারক পর্যন্ত সবাই লাভবান হবেন। ক্রেতাদের স্বার্থও পুরোপুরি সংরক্ষিত হবে।

আইটি খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিসিএস কী কী ভূমিকা পালন করছে?

মো. শাহিদ-উল-মুনীর: তথ্য প্রযুক্তি খাতে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার রূপকল্প ২০২১-২০৪১ হাতে নিয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তর করার কার্যকরী হাতিয়ার হলো তথ্যপ্রযুক্তি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। পৃথিবীর তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রথম সারির দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের চেষ্টা চলমান।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিক্স, আইওটি, বিগ ডাটা এবং ব্লকচেইনে দক্ষ জনশক্তি গড়তে ইতোমধ্যেই বিসিএস প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই প্রযুক্তিগুলো সম্পর্কে যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে বিসিএসের শিক্ষা, গবেষণা এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন উপকমিটি কাজ করে যাচ্ছে। যে দেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ যুবশক্তি রয়েছে সেদেশের যুবকদের প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করতে পারলেই আমাদের সফলতা নিশ্চিত। আমরা এখনো যুবসমাজকে পরিপূর্ণভাবে প্রযুক্তিশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারিনি। পর্যাপ্ত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা দেশের যুবসমাজকে প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।

প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বেশ কিছু অন্তরায় রয়েছে। এগুলো দূর করার উপায় কী?

মো. শাহিদ-উল-মুনীর: আইসিটি খাতে উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকার বরাবরের মতো আন্তরিক। বিসিএসও এই সেক্টরের বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনশক্তির পাশাপাশি কাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিক কর্মক্ষেত্র, পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সুবিধা, দেশি-বিদেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের কাজ করার সুযোগ, আইসিটি ব্যবসায়ীদের বিনা জামানতে ঋণ সুবিধা, দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে পারলে তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় সহজেই পৌঁছানো যাবে।

সংগঠনের সদস্যদের গতিশীলতার জন্য আপনার পরিকল্পনা কী কী?

মো. শাহিদ-উল-মুনীর: চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে দাপটের সঙ্গে প্রযুক্তি বাজারের পরিধি প্রসারিত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি যথা- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিক্স, আইওটি, বিগ ডাটা এবং ব্লকচেইনে প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে অনেক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিসিএস সদস্যদের জন্য প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, সেমিনার এবং হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ তৈরি করছি। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে বিসিএস সদস্যরা যেন সর্বাধিক গুরুত্ব পান সেজন্য আমাদের চেষ্টা চলমান থাকবে। মোট কথা, আমরা চাই প্রযুক্তিনির্ভর দেশে ব্যবসায়ীরা যেন নিজেদের দক্ষ করে গ্রাহকদের পরিপূর্ণ সেবা দিয়ে  সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করতে পারেন।

আপনার মেয়াদ শেষে বিসিএসকে কোথায় দেখতে চান?

মো. শাহিদ-উল-মুনীর: ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রযুক্তির অলিম্পিক খ্যাত ডব্লিউসিআইটি অনুষ্ঠিত হবে। সারা পৃথিবী থেকে প্রযুক্তি বিশারদ, সংবাদকর্মী এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠানে আমরা আইসিটি শিল্পে আমাদের অগ্রগতি বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করতে পারবো। আমরা চাই, এই উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত এবং সুসংগঠিত হোক। আমাদের এগিয়ে চলার পথ ভবিষ্যতের কাজ নির্ধারণ করে দিবে। মেড ইন বাংলাদেশের পণ্য ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। মানুষ গর্ব করে বলবে, আমি যে প্রযুক্তি পণ্যটি ব্যবহার করি, তা বাংলাদেশের তৈরি। সুশৃঙ্খল আইসিটি বাজার শুরু হবে। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগগুলো সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাবে। সরকারের সহযোগিতায় আইসিটি খাত হবে বেসরকারি উদ্যোগ এবং বিনিয়োগের অন্যতম স্থান। বিসিএস এই খাতগুলোতে নেতৃত্ব দিবে বলেই আমার বিশ্বাস।

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

মো. শাহিদ-উল-মুনীর: ঢাকাটাইমস এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/এজেড)