অবহেলায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে লাল শাপলার বিকি বিল
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল গ্রামের পাশে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন লাল শাপলার বিল। জেলা প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্পট বিকি বিল নামে পরিচিত। গত কয়েক বছর ধরে এ বিলের লাল শাপলা ও দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির সুর স্বাগত জানিয়ে আসছে প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীসহ সবাইকে।
সম্প্রতি কয়েক দফা বন্যায় মেঘালয় পাহাড় সংলগ্ন এ বিকি বিলের সৌন্দর্যের উপর প্রভাব পড়ে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের লোকজন গরু-মহিষের খাদ্যের জোগান দেওয়ায় জন্য অবাধে বিল থেকে প্রতিদিন লাল শাপলার ডাটা উপড়ে নিলেও জমির মালিক কিংবা প্রশাসন কেউই বাধা দিচ্ছে না। এতে দৃষ্টিনন্দন লাল শাপলার বিল হারাচ্ছে সৌন্দর্য। ফলে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা।
জানা গেছে, লাল শাপলার বিকি বিল হাওর পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এলাকা হিসাবে গত আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ। পরে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য নতুন এলাকা হিসেবে বিকি বিলে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। বিলটি প্রায় ১৪.৯৫ একর জায়গা নিয়ে গঠিত। বছরের ছয় মাস লাল শাপলার পাশাপাশি এখানে জন্মে সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন জানান, পূর্ব আকাশের সূর্যের আলোকেও হার মানিয়ে মেঘালয় পাহাড়ের পাশেই হাওরের চারপাশে ফুটছে রক্তিম লাল শাপলা ফুল। তবে এখন কম হলেও কিছু দিনের মধ্যেই ফুল ফুটতে শুরু করবে। কোন রকম চাষাবাদ ছাড়াই যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া লাল শাপলার বিপুল সমারোহে হাওরের প্রকৃতি এক অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করে। কিন্তু এ বছর বিকি বিলের এমন সৌন্দর্যে ভাটা পড়েছে মাবনসৃষ্ট নানা কারণে।
উপজেলার সচেতন মহল জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নৌকায় অবাধে শাপলার ডাটা নৌকা লোড করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়রা। বাঁধা দিলেও কেউ শুনছে না। বিলে গত বছর যে পরিমাণ শাপলা ফুটেছে, এবছর তা আর দেখা মিলছে না। বিলের যে সৌন্দর্য ছিল, সে পরিবেশটাও এখন নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও এখানে আসার সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে এবার পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে আশঙ্কা তাদের।
স্থানীয় সমাজসেবক মাসুক মিয়া জানান, লাল শাপলার বিকি বিল পর্যটনের সম্ভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কিন্তু ভোরে ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই লাল শাপলা তুলে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। এই কারণে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে সৌর্ন্দযে মুগ্ধ হওয়ার পরিবর্তে রুগ্নদশা দেখে কষ্ট পাচ্ছে আগত পর্যটক ও স্থানীয়রা।
বিকি বিলের সৌন্দর্য রক্ষা করে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম।
তিনি জানান, বিলের সৌর্ন্দয নষ্ট করতেই গরু মহিষের খাবার হিসেবে শাপলার ডাটা উপড়ে ফেলা হচ্ছে, অনেকেই বাড়িতেও নিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান, বিকি বিলের লাল শাপলার ডাটা গরু মহিষের খাবারের যোগান হিসেবে ব্যবহার করে এর সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। দৃষ্টিনন্দন এ পর্যটন স্পটের সৌন্দর্য রক্ষায় খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/পিএল)