নেয়ামত ভূঁইয়া’র দুটি কবিতা

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০২০, ১৯:৩০

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

স্বাধীনতার স্বরলিপি

আমরা প্রাণ দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি

আমরা  মান দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি

এই দেশ এই মাটি

স্বর্গের চেয়ে খাঁটি

হৃদয়ের স্পন্দনে জেনেছি।

 

আমার ভায়ের বুকের খুনে সবুজের মাঠ রেঙেছে,

আমার বোনের আর্তনাদে জালিমের কারা ভেঙ্গেছে।

 শোকটাকে শক্তির শেলরূপে শানিয়ে শত্রুকে শরাঘাত হেনেছি-

আমরা প্রাণ দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি।

 

প্রাণরসে মুক্তোকে মরমে লালন করে শুক্তি,

আমরাও শোণিতের কণায় কণায় মেখে

জাগ্রত রাখবো এ-মুক্তি।

 

আমার দেশের মাটির টানে মমতায় মন ভরেছে,

আত্মদানের রক্ত গঙ্গায় স্মৃতির মিনার গড়েছে।

স্বদেশ মাতার আঁচলপাতা আশিসে

জীবনকে তুচ্ছই মেনেছি-

আমরা প্রাণ দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি

এই দেশ এই মাটি

স্বর্গের চেয়ে খাঁটি

হৃদয়ের স্পন্দনে জেনেছি।

-

পান্থজনের সখা

এখন আমি পথের টানেই ঘর ছেড়েছি একা ,

পথের মাঝের হরেক পথিক পান্থজনের সখা।

পথের বাঁকে পথ হারালে পথেই বাঁধি ঘর,

পথের মাঝেই দিন কেটে যায় পথেই দিনান্তর।

পথের শুরু কোথায় যে আর কোথায় পথের শেষ!

পথ জানেনা পথ হয়েছে পথেই নিরুদ্দেশ।

পথের দাবি পূরণ করেই চলছি পথে পথে ,

পথের ধূলো দেয় উপশম পায়ের ক্ষতে ক্ষতে।

 

পথের মাঝে কাটাই বেলা পথের মাঝেই বাঁচি,

পথের মাঝেই খেলছি শখের খেলা কানামাছি।

এই খেলা যে শখের খেলা সুখের খেলা নয়,

পাই না খুঁজে আসল খেলার পথের পরিচয়।

পথের মাঝে গোলক ধাঁধার মর্মে মরীচিকা ,

আলো-ছায়ার দৃশ্য যেন ধোঁকার পাদটীকা।

ফুলের শোভা,পাখির কূজন,নদীর কুলু কুলু,

পথে পথে আড়াল করে কুজ্ঝটিকার ধূলো।

 

মেঘের ডানা, পাখির ছানা, শাপলা বিলের ছবি,

পথের মাঝেই আঁকি আমি পথের বাউল কবি।

পথের মাঝেই মায়ের আঁচল মোছে আমার ঘাম,

পথের বুকে স্বপ্ন এঁকে লিখি মায়ের নাম ।

পথের মাঝের বৃন্দাবনই প্রেমের কুঞ্জবন,

পথের বনের অভিসারে হারাই দুটি মন।

শানাই বাজাই, বাসর সাজাই পথের ভাঁজে-ভাঁজে,

মন পবনের কিস্তি ভাসাই পথের বধুর লাজে।

 

মন মাতিয়ে জারি সারি ভাটিয়ালি গানে-

পথের ধারে সাজাই আসর শ্যামল মায়ার টানে।

পথের মাঝেই মশাল মিছিল অধিকারের দাবি,

পথের মাঝেই খুঁজি আমার মুক্তি−রথের চাবি।

পথের মাঝেই ছড়াই বাহার, ফলাই বাহাদুরি,

ছড়ি ঘুরাই,নাটাই ঘুরাই, উড়াই ইচ্ছে ঘুড়ি।

তন্ত্র-কথার লাল মলাটের বই পড়ি সেই পথে,

মতবাদের মন্ত্র শোনাই ভিন্নপথের মতে।

 

পথের প্রজা পথের মাঝেই সাজি পথের রাজা,

প্রাণ দিয়ে দেই, প্রাণ কেড়ে নেই, সদ্য তাজা তাজা।

পথের মাঝেই সময় ঘড়ি-- চন্দ্র, সূর্য, তারা ,

আহ্নিকে যার গুনতি শুরু, বার্ষিকে তার সাড়া।

সেই বলয়ে ঘটলে প্রলয় আরেক পথের দায়,

পথ বদলের তাগিদ জানায় পথের সীমানায়।

খেলাঘরের ভাংলে খেলা; লোকান্তরে বাঁক,

ভুবনজোড়া ভেঁপু বাজায় আরেক খেলার ডাক।

 

পথিক চলে পথের ঘোরে জানে না তার মানে,

পথের মহাজনই কেবল পথের খবর জানে।