একজন মানবিক বলাৎকারী!

মো. আনোয়ার হোসেন (শামীম আনোয়ার)
 | প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০২০, ১৪:০৫

‘স্যার, ওরা তো খুব ছোট। তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি, যেন ওরা বেশি ব্যথা না পায়। আমি তো ওদের শিক্ষক, ওরা ব্যথা পেয়ে কান্নাকাটি করলে আমার খুব কষ্ট লাগে।’ ভাষ্যটি চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার ৩৫ বছর বয়সী শিক্ষক নাছির উদ্দিনের। নিয়মিত অগণিত শিশুকে তার লালসার শিকারে পরিণত করলেও গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ধর্ষিতদের প্রতি এমনই সদয় তিনি!

নাছিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ফিরিস্তি শুনলে এই মায়াবাক্যকে আপনার কাছে পরিহাসই মনে হবে। মাদ্রাসার হোস্টেলের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে থাকার সুযোগ নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক শিশু ছাত্রকেই নিয়মিত বিছানার সঙ্গী করেন তিনি। ঘটনা সংক্রান্তে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে যা বের হয়ে আসে, তাতে শিউরে উঠবেন যেকোনো বিবেকবান মানুষই।

ধর্ষণ করার জন্য মূলত দশ বছরের নিচে বয়সী ছেলেশিশুদেরকেই টার্গেট করতেন তিনি। কোনো শিশু তার আহ্বানে সাড়া না দিলে তাকে বাধ্য করার জন্য কারণে অকারণে তাকে বেধড়ক মারধর করা হতো। যেহেতু সেখানে বেশিরভাগ শিশুই এতিম/দরিদ্র পরিবার থেকে আসা, শেষপর্যন্ত তার পক্ষে হুজুরের প্রস্তাবে হ্যাঁ বলা ভিন্ন কোনো উপায় থাকতো না। নাছিরের ছেলেশিশু আসক্তি এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল যে, বিষয়টি টের পেয়ে তার স্ত্রী তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যান।

ধর্ষিত শিশুর প্রতি সহমর্মী হওয়ার পাশাপাশি নাছির আবার ভীষণ রকম নিয়মনিষ্ঠও। বিশৃঙ্খলা তার একদমই নাপছন্দ। তাই তো তিনি একেবারে রুটিন করে দিয়েছেন, ওস্তাদের খেদমতে কবে কখন কোন শিশু হাজির হবে। যেন সেই গল্পের অত্যাচারী সিংহের মতো, যে কি না বনের পশুদের সাথে চুক্তি করেছিল যে, প্রতিদিন একটি করে প্রাণী খাবার হিসেবে তার নিকট চলে আসলে সে আর যারতার ওপর অত্যাচার করবে না। এই করে বেশ ভালো মতোই চলে আসছিল শিক্ষকতার আড়ালে তার বেপরোয়া বিকৃত যৌনজীবন। ছাত্ররাও মারধর, হুমকি-ধামকির ভয়ে নীরবে নিশ্চুপে সব সয়ে যাচ্ছিল।

ঝামেলা শুরু হয় গতকাল সন্ধ্যায়। এক অভিভাবকের কাছ থেকে প্রাথমিক অভিযোগ পাবার পর আমাদের বিশদ অনুসন্ধানে উঠে আসে বলাৎকারী নাছিরের গোপন বিকৃত যৌনজীবনের অবিশ্বাস্য সব খতিয়ান। তারপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের এবং মধ্যরাতে পরিচালিত আমাদের অভিযানে গ্রেপ্তার ভণ্ড হুজুর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন।

কিন্তু গ্রেপ্তারের পর রীতিমতো ভোল পালটে ফেলেন তিনি। বারবার আমাদের নিকট দাবি করতে থাকেন, তিনি নাকি কাউকে জোর করে বিছানায় নিতেন না, ছাত্ররাই নাকি স্বেচ্ছায় তার সঙ্গ নিতে আসতো। যদিও গরিব ঘরের অসহায় ছেলেগুলোর সাথে দিনের পর দিন কোন কৌশলে, কি কি ঘটিয়েছে নরপশু নাছির, তা আমাদের অজানা ছিল না।

সুখের বিষয় হলো, সকালে আদালতে পাঠানো হলে গ্রেপ্তারকৃত নাছির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত বলাৎকারের অভিযোগ স্বীকার করে নেন। পাশাপাশি বলাৎকারের শিকার শিশুদের মধ্যে চারজনও আদালতে উপস্থিত হয়ে তাদের ওপর চালানো নির্মমতার বর্ণনা দেয়। ইনশাআল্লাহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই হবে তার।

অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, আপনার শিশু ছেলে বা মেয়ে যাই হোক, তার নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় রাখুন। শিক্ষক হোক, আত্মীয় হোক কিংবা হোক প্রতিবেশী, আপনার সন্তানকে কারও অরক্ষিত শিকারে পরিণত হওয়ার সুযোগ দিবেন না প্লিজ।

লেখক: সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), রাঙ্গুনিয়া সার্কেল, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।

ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :