সিআইডির রিমান্ডে প্রতারক সিকদার লিটন

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০২০, ১৫:৪৩ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০, ১৫:৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অসংখ্য প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার প্রতারক সিকদার লিটনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বুধবার দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারাফুজ্জামান আনছারী তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে দুপুরে প্রতারক লিটনকে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সিআইডির সিনিয়র এএসপি (মিডিয়া) জিসানুল হক জিসান গণমাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রতারক লিটনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কলাবাগান থানায় হওয়া একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ আদালত পাঠানো হয়। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত লিটন দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর গত সোমবার ভোরে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। র‌্যাব-৮ এর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে। সেদিন দুপুরেই ঢাকায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় তাকে সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সিআইডি তাকে নিয়ে দুই দফা অভিযান চালায়। এসময় লিটনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ট্যাব, কম্পিউটার ও সীম উদ্ধার করে।

ভয়ঙ্কর প্রতারক লিটন গ্রেপ্তারের পর স্থানীয়রা গতকালও দ্বিতীয় দিনের মতো মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেছে। বিক্ষোভের সময় তারা লিটনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানায়।

লিটনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি মামলার চারটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এসব মামলার পর লিটন দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিল। এছাড়া ফরিদপুর, খুলনা ও পাবনায় চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকি, সাইবার অপরাধসহ প্রায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে অপপ্রচার করে ব্ল্যাকমেইলিং এবং গ্রামের সহজসরল অনেক মানুষের সঙ্গে সরাসরি প্রতারণার অভিযোগে ডিজিটাল অ্যাক্ট আইনে হওয়া মামলার আসামি তিনি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় সিকদার লিটন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়িত নয় সিকদার লিটন। চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকি, সাইবার অপরাধসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত প্রতারক লিটন। স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রতারক ও ছদ্মবেশী অপরাধী বলেই বেশি পরিচিত। এলাকার মানুষকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। চাকরি তো দূরের কথা, টাকা চাইতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এসব অপরাধের অভিযোগে একাধিক মামলাও আছে তার বিরুদ্ধে। এসব কারণে আলফাডাঙ্গা ও টগরবন্দ থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়। এরপর রাজধানী ছাড়াও খুলনার সীমান্ত এলাকা, পাবনাসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গেড়েছেন।

বিভিন্ন সময় সিকদার লিটন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়েছেন। বিশেষ করে- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি মো. আব্দুর রহমান, আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আকরাম হোসেন, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সাইফারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটান। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় সাইবার অপরাধে মামলাও হয়েছে।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনে (বিআইডব্লিউটিসি) চাকরি দেয়ার আশ্বাসে এক যুবকের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেন লিটন। দুই বছরেও তিনি টাকা ফেরত পাননি। গরু বিক্রি ও কিছু জমি বন্ধক রেখে তিনি লিটনকে টাকা দিয়েছিলেন। বর্তমানে অসহায় হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রতারিত হওয়া এই যুবক।

প্রায় দশবছর আগে বিয়ের প্রলোভনে ঢাকা থেকে এক তরুণীকে নড়াইলের লোহাগড়ায় আনে সিকদার লিটন। স্ত্রী পরিচয়ে সেখানে বসবাস শুরুর পর মেয়েটির পরিবার পুলিশ ও স্থানীয়দের মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করা হয়। আটক হয় লিটন। তরুণীর পরিবারের অনেক সম্পত্তি ছিল। সেই সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেই লিটন তরুনীর সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল।

ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/এসএস/এমআর