বিস্কুটে ব্যবহৃত রং, কৃত্রিম ফ্লেভার ক্ষতিকর

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২০, ১২:০১ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০, ১২:২২

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

করোনাকালে বাইরের খাবার না খেয়ে অনেকেই হয়তো ব্যাগে কয়েক প্যাকেট বিস্কুট বা কেক রেখে দেন। ক্ষুধা পেলেই বিস্কুট খেয়ে সাময়িকভাবে ক্ষুধা নিবারণ করেন। অনেকেই আছেন, একটু ক্ষুধা অনুভব করলেই দুপুরের খাবারের আগে আগে দুটা বিস্কুট খেয়ে ফেলেন। তিনি হয়তো ভাবেন প্যাকেটবন্দি এই বস্তুটি সব দিক থেকেই খুব নিরাপদ। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তা নয়। বিস্কুট খেলে ঠিক কী কী ক্ষতি হয়, শুনলে চোখ কপালে উঠবে।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮ থেকে ৮০-এর নিত্যদিনের সঙ্গী বিস্কুট কিন্তু শরীরের কোনো ভালো করে না। উল্টে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। শুধু তাই নয়, ধীরে ধীরে দেহের অন্দরে নানাবিধ ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা বাড়িয়ে নানা সব জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পথকেও অনেকাংশে প্রশস্ত করে। ভাববেন না ক্ষতির খতিয়ান এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বাজার চলতি বেশির ভাগ জনপ্রিয় বিস্কুট বানাতেই ময়দা কাজে লাগানো হয়ে থাকে। রিফাইন্ড ময়দা কিন্তু শরীরের পক্ষে একেবারেই উপকারী নয়। কারণ ময়দা বানানোর সময় গমের অন্দরে থাকা পুষ্টিকর উপাদানগুলো ঝরে পড়ে যায়। ফলে ময়দা খেলে শরীরে উপকারে তো লাগেই না, উল্টো পেটের নানা ধরনের সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বদহজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, রিফাইন্ড ময়দা হঠাৎ করে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে আগামী সময়ে গিয়ে ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই তো চিকিৎসকেরা ময়দা দিয়ে বানানো যে কোনো খাবারকেই বিষের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। এবার তাহলে আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, বিস্কুট নামক বিষটা খাবেন, কী খাবেন না!

এছাড়া অতিরিক্ত বিস্কুট খেলে অ্যালার্জি হতে পারে। যাদের গ্লুটেন অ্যালার্জি আছে, তাদেরও হতে পারে একাধিক সমস্যা। বেশিরভাগ বিস্কুটেই থাকে প্রচুর ময়দা। যে কারণে অনেকের ক্ষেত্রে অর্শের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বিস্কুটে অত্যধিক ক্যালরি থাকে। থাকে চিনি এবং ফ্যাট। যা শরীরের পক্ষে ভালো নয়। প্রতিদিন পাঁচটি করে বিস্কুট বা কেক খেলেও তা স্মরণশক্তির উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

বেশির ভাগ বিস্কুটে হাইড্রোজেনেটেড অয়েল দেওয়া হয়। যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা ধীরে ধীরে বাজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। সেই সঙ্গে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও দেখা দেয়।

মিষ্টি জাতীয় বিস্কুট বানানোর সময় তাতে প্রচুর মাত্রায় চিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর ক্রিম বিস্কুটের কথা তো ছেড়েই দিন। এই পরিমাণ মিষ্টি জাতীয় বিস্কুট বানানোর সময় তাতে প্রচুর মাত্রায় চিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই পরিমাণ শর্করা রক্তে মিশলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে সুগার লেভেল বাড়তে শুরু করে। আর এমনটা দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। সেই কারণেই তো যাদের পরিবারে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত মিষ্টি বিস্কুট খেতে মানা করেন চিকিৎসকেরা।

অনেকেই মনে করেন বিস্কুট খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। এই ধারণা কিন্তু একেবারে ঠিক নয়। কারণ বিস্কুটে কম করে হলেও ৫৬ ক্যালরি থাকে। এই পরিমাণ ক্যালরি ঝরাতে প্রায় ৩০ মিনিট অ্যারবিক্স করার প্রয়োজন পরে, যা কেউই করেন না। ফলে মেদ বৃদ্ধি হতে শুরু করে। তাই এবার থেকে খিদের চোটে মুঠো মুঠো বিস্কুট খাওয়ার আগে একবার অন্তত ভাববেন, খিদে কমাতে গিয়ে ওজন বাড়াচ্ছেন না তো!

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রিম বিস্কুটে প্রচুর মাত্রায় চিনি থাকে। সেই সঙ্গে আর্টিফিশিয়াল রং-ব্যবহারও করা হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই শরীরে পেক্ষ ভালো হয় না। তাই সাবধান থাকাটা জরুরি।

বিস্কুটে ব্যবহৃত রং, কৃত্রিম ফ্লেভারও ভীষণ ক্ষতিকর। তাই বিস্কুট খাওয়ার আগে আরেকটু ভেবে নিন। কিংবা নিজেই ঘরে স্বাস্থ্যসম্মত উপাদান দিয়ে বিস্কুট তৈরি করে নেন। তবে বিস্কুট মাত্রই পরিত্যাজ্য নয়। ডাইজেস্টিভ জাতীয় বিস্কুটের বেশ কিছু উপকারিতাও আছে। এই বিস্কুট শরীরে অনেকটা এনার্জি এনে দেয়।

(ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/আরজেড/এজেড)