সব চালককে ‘ডোপ টেস্ট’ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২০, ১৩:৩২ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০, ১৬:৪৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সব চালককে ডোপ টেস্টের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা গাড়ি চালাচ্ছে, তারা মাদক সেবন করে কিনা? তাদের ডোপ টেস্টের মাধ্যমে তা পরীক্ষার করা দরকার। প্রত্যেকটা চালকের এ পরীক্ষাটা একান্তভাবে অপরিহারর্য। এ পরীক্ষাটা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২০ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এসময় ফিটনেস ছাড়া গাড়ি যাতে রাস্তায় নামতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা। বলেন, গাড়ির ফিটনেস দরকার, সেগুলো বিশেষভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা।

সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের সকল চালকের পরিমিত বিশ্রাম নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চালকদের বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টর ও সরকারি সেক্টর সকলকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে। চালক বিশ্রাম নিলো কিনা, খাবার খেলো কি না এ বিষয়টা দেখতে হবে।
এসময় গাড়ি চালক এবং পথচারী সবাইকে ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলাচলের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলা এটা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। চালকদের পাশাপাশি পথচারীদেরও সচেতন থাকতে হবে। সেখানে সচেতনতার খুব অভাব।’
বক্তব্যে ট্রাফিক আইন সর্ম্পকে সবাইকে সচেতন করতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বার বার বলছি, এখনো বলছি স্কুল জীবন থেকে ছোট বাচ্চাদের থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা জায়গায় এই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া, সচেতন করা। প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত সব জায়গায় ঐ ট্রাফিক রুলের পোস্টার লাগিয়ে রাখা, যাতে মানুষ সচেতন হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুখে খুব বলে টলে যাই, কিন্তু কাজের বেলা আমরা কি দেখি? পাশেই ফুটওভার ব্রিজ, রাস্তার মধ্যখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একটা গাড়ি আসছে একটু হাত দেখিয়েই হাঁটা দিল। এটা একটা যান্ত্রিক ব্যাপার। ব্রেক কষলেও সেটা থামতে কিন্তু কিছু সময় লাগে। হাত দেখালেই থেমে যেতে পারে না। সে কথাটায় সবাইকে সচেতন করতে হবে। সেটা প্রচার করতে হবে, বলতেও হবে, মানুষকে জানাতে হবে।
সচেতনার অভাবে দুর্ঘটনা ঘটার উদাহরণ দিয়ে গাড়িচালকদের দোষ দেওয়ার প্রবণতার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কেন ড্রাইভারকে দোষ দেব? দোষ তো ওই মায়ের, যে বাচ্চাকে নিয়ে যাচ্ছে বা আরেকজন বাবা দেখলাম বুকের মধ্যে বাচ্চাকে নিয়ে যেখানে রাস্তায় গ্রিল দেওয়া গ্রিলের উপরে শার্প ইয়ে দেওয়া, সেটা পার হয়ে যাচ্ছে। একটু পা পিছলালে ওই শার্প নেইলটাতে বাচ্চা একদম ফুটো হয়ে যাবে। কাকে দোষ দেবে? সড়কের দোষ, সরকারের দোষ, আন্দোলন হবে সরকারের বিরুদ্ধে, সরকারের পদত্যাগ চাইবে কিন্তু দোষটা কার সেটা আর দেখবে না। এসব বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা আমাদের দেশে খুব বেশি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক সময় চালকরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে গাড়ি থামাতে চান না। এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা হলে চালকদের মারতে মারতে মেরে ফেলা, এর ফলাফলটা কি দাঁড়াচ্ছে। একজন হয়তো আবার ধাক্কা না দিলেও বেঁচে যেত। কিন্তু চালক মারের ভয়ে প্রাণের ভয়ে তার উপর দিয়ে চালিয়ে গেল। এর ফলে লোকটি মারা গেল।
শেখ হাসিনা বলেন, সেজন্য আমি বারবার জনগণকে সচেতন করেছি এখন আবারও বলব কোন দুর্ঘটনা হলে, কেউ চালকের গায়ে হাত দিবেন না, কেউ গাড়ি আক্রমণ করবেন না। বরং যে পড়ে গেছে তাকে উদ্ধার এবং হাসপাতালে নিয়ে যান,  ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা নিন। আমাদের পুলিশের সার্ভিস এখন খুবই ভালো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা হলে যদি চালকের দোষ হয় তাহলে আইন আছে। আইন তার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কেউ আইন তার হাতে তুলে নেবেন না। এ আইন হাতে তুলে নেওয়ার কারণে অনেক মানুষ কিন্তু মারা যায়। কারণ চালক সাহস পায় না গাড়িটা থামিয়ে ঐ লোকটাকে উদ্ধার করতে। তার ভয় হয় সে যদি গাড়ি থামাতে চায় বা সেই লোকটাকে উদ্ধার করতে চায় তাহলে সে পাবলিকের হাতে মার খাবে।

তিনি বলেন, এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে। আমাদের যারা নিরাপদ সড়ক নিয়ে আন্দোলন করে তাদেরকে আমি অনুরোধ করব এটা একটু ব্যাপক প্রচার করেন। বিচারের জন্য তো আইন আছে আদালত আছে। সেখানে বিচার হবে কাজে কেউ আপনারা নিজের হাতে আইন তুলে নিবেন না।

মাটির ধরনের কারণে সড়ক নির্মাণে বাংলাদেশে কখনো কখনো ব্যয় হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সড়ক নির্মাণের ব্যয় অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করেন তাদের বলবো- তুলনা করার আগে বাংলাদেশের মাটি পরীক্ষা করুন।

সড়ক নির্মাণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দেশে প্রচুর পরিমাণে সড়ক, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব নির্মাণে যেন প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষ যাতে এসব থেকে উপকৃত হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

অনুষ্ঠানে সড়কের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বলেন, রাজধানীর সঙ্গে দেশের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা করেছে সরকার। যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নয়নে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কের বাঁক কমানো হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সড়ক শুধু তৈরিই করিনি, সেই সড়ক নিরাপদ করারও চেষ্টা করেছি। কোথায় কোথায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে, কেন বেশি হচ্ছে সেসব নজর রেখেছি। মহাসড়কের যেখানে যেখানে দুর্ঘটনা হয়, সেই জায়গাগুলো নিরাপদ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/কেআর)