লজ্জা নারীর ভূষণ আবার শত্রুও

আতিক খান
 | প্রকাশিত : ২২ অক্টোবর ২০২০, ১৩:৫৪

লজ্জা নারীর ভূষণ আবার লজ্জা নারীর শত্রুও। বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। আমাদের দেশের মেয়েরা লজ্জায় অসুস্থতা লুকিয়ে রাখেন। প্রথমে কিছুদিন এমনিতেই চেপে রাখেন। তারপর নিজে নিজে চিকিৎসা করেন। তারপর মা, কাছের কোনো বোন বা নারী আত্মীয় থাকলে তার সাথে শেয়ার করে বুদ্ধি নেন। এরপর হয়তো স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানান।

আর ততদিনে সমস্যা বাড়তে বাড়তে অনেক বড় হয়ে যায় কিংবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে আয়। অনেক সমস্যায় আবার মহিলা ডাক্তার পাওয়া না গেলে পুরুষ ডাক্তারের কাছে পুরোটা শেয়ার করেন না। বিশেষ করে গাইনী, পিরিয়ড কিংবা শরীরের প্রাইভেট কোনো অংশের সমস্যা।

পরিচিত সার্কেলেই দেখেছি, বাথরুম করতে ব্যথা অনুভূত হবার পরও ভদ্রমহিলা কাউকে বলেননি। স্বামী প্রবাসে ছিলেন। ছোট আকারের টিউমারটা পরে কোলন ক্যানসারে রূপ নেয়। দুটো বাচ্চা রেখে মাত্র ৩০ বছরে মারা যান।

ব্রেস্ট টিউমার সময়মতো না জানানোয় পরে ক্যানসারে রূপ নেয়। শুরুতে এটা ছিল সাধারণ সার্জারি, পরে ১৫-২০ লক্ষ টাকা খরচ করে ও বড় আকারের সার্জারিতে যেতে হয়। নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে গিয়েও লাভ হয় না, অনেক সময় উন্নত দেশে গিয়েও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

রান্নার সময় শাড়িতে আগুন লাগার পরও ৪-৫ ঘণ্টা শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে বসে ছিলেন। ফার্স্ট এইড না নেয়ায় পোড়া অংশ জুড়ে সব ফোস্কা পড়ে যায়, ইনফেকশন দেখা দেয়। ব্লাউজের নিচে পুড়েছিল তাই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। অথচ শুরুতেই কোনো হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে বার্নের চিকিৎসা নিলে এত কষ্ট পেতে হতো না। এক-দেড় মাসে সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগী কষ্ট পেয়েছেন প্রায় দুই বছর।

বগলে ছোট টিউমার নিয়ে কয়েক বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। পরে বড় হয়ে বার্স্ট হওয়ার উপক্রম হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছেন। ভাগ্য ভালো ক্যানসার হয়নি। কিন্তু মাইনর সার্জারি পরিণত হয়েছে মেজর অপারেশনে।

সাধারণ অসুস্থতাতেও চিকিৎসা বিলম্বে শুরু করাতে দীর্ঘ সময় কষ্ট পান অনেকে। যাচ্ছি, যাব, এই তো ভালো হয়ে যাচ্ছি করেও অসুস্থতা অনেক সময় নাগালের বাইরে চলে যায়।

গ্রাম এবং মফস্বলের পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ। ওখানকার নারীরা শুরুতে লুকিয়ে, পরে বেশি বিপদে পড়লে দৌড়ান কবিরাজ, ওঝা কিংবা হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে। এজন্য ডাক্তারি পেশায় বেশি বেশি মেয়েদের অংশগ্রহণ জরুরি। এতে মহিলা রোগীরাও অনেক ভালোভাবে এবং স্বচ্ছন্দে সমস্যা শেয়ার করতে পারবেন।

মেয়েরা মায়ের জাতি। সংসারের হাল ধরে রাখেন, সবার প্রতি খেয়াল রাখেন। অন্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হলে নিজের সুস্থতা সবার আগে জরুরি। একজন নারীর অবর্তমানে সংসার আর সংসার থাকে না, বাসা আর বাসা থাকে না। বাবা, ভাই কিংবা স্বামীরাও যদি বুঝতে পারেন ব্যাপারটা, পদক্ষেপ নিতে পারেন। লজ্জা ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োগ করুন। শারীরিক সুস্থতার কাছে লজ্জা বিসর্জন দিন!

লেখক: মাস্টার মেরিনার ও লেখক

ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :