রাবি উপাচার্যের সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের সুপারিশ

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২০, ১৪:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকাটাইমস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যদের বিরুদ্ধে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে (আচার্য) অসত্য তথ্য দেয়া, শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ইউজিসির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ইউজিসি ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল সবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হয়েছে।

জানা যায়, চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও ইউজিসিতে দাখিল করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ। 

পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযোগগুলো তদন্তে ইউজিসি একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমকে আহ্বায়ক এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরকে সদস্য করা হয়। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটি উভয় পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনে উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করে।

তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে সুপারিশসহ ৭৩৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এতে ৩৬ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং ৭০০ পৃষ্ঠার সংযোজনী প্রতিবেদন রয়েছে। প্রতিবেদনে তাদের সম্পদের উৎস খুঁজে বের করার পাশাপাশি‌ রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীকে অপসারণের সুপারিশও করা।

ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইউজিসিকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি।

তদন্তে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যদের বিরুদ্ধে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে (আচার্য) অসত্য তথ্য দেয়া, শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উপাচার্য শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা শিথিল করে নিজের মেয়ে এবং জামাতাকে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে ৩৪ জন অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি ১৮ মাস ধরে নানা অজুহাতে দখলে রাখেন। উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

তদন্ত প্রতিবেদনে রাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীকে অপসারণের সুপারিশ করে বলা হয়, তদন্ত কার্যক্রমের বিভিন্ন পর্যায়ে রেজিস্ট্রার তদন্ত কমিটিকে অসহযোগিতা করেছেন। তাই দ্রুত তাকে পদ থেকে অপসারণ করে শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করা হয়।

ইউজিসির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, তদন্ত কমিটি সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন গত মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বুধবার (২১ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দিয়েছে। তদন্তে আমরা রাবি প্রশাসনের বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি।

(ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/কেআর)