দিনভর বৃষ্টির পূর্বাভাস, সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর সতর্কতা বহাল

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১০:০০ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১০:০৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে বৃষ্টি হচ্ছে, যা শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বহাল আছে। বৃষ্টিতে নাকাল রাজধানীবাসীর জন্য আপাতত সুখবর নেই। কারণ আজও সারাদিন এমন বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে দেখানো ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত এখনো বহাল আছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে নিম্নচাপের প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি এবং দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।

এদিকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। পদ্মা উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া রুটেও সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঝড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টির কারণে শুক্রবার সকাল থেকে নৌরুটটিতে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিএ’র কাঁঠালবাড়ী ঘাট সূত্রে জানা যায়, বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ফলে উত্তাল হয়ে উঠেছে পদ্মা। মাঝ পদ্মায় প্রচণ্ড ঢেউ থাকায় ঝুঁকি এড়াতে ভোর থেকেই লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করায় জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে একতলা বিশিষ্ট লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন বিআইডব্লিউটিএ। শুক্রবার সকালে লঞ্চ চলাচল বন্ধের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান।

তিনি জানান, বৈরি আবহাওয়া বিরাজ ও বরিশাল নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করায় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) রাত থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে একতলা বিশিষ্ট সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা বহাল থাকবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটির ক্রমেই শক্তি বাড়ছে। ইতোমধ্যে নিম্নচাপটি পরিণত হয়েছে গভীর নিম্নচাপে। ঘনীভূত নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। যা আজ সকালে মোংলা বন্দর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপরিশ্চমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।

গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে বাড়তে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছাকাছি সাগর উত্তাল রয়েছে।

শুক্রবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার বিকাল বা রাতে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নিম্নচাপটি স্থলভূমি অতিক্রম করতে পারে। অর্থাৎ গত ২০ মে যে জায়গা দিয়ে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান স্থলভূমিতে ঢুকেছিল, এই অতি গভীর নিম্নচাপটি ঠিক সেই পথই অনুসরণ করতে পারে। এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এক ঊর্ধ্বতন আবহাওয়াবিদ জানান, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী নিম্নচাপ ঘনীভূত হলে ঘূর্ণিঝড় হয়। কিন্তু এই নিম্নচাপ যেহেতু আগে থেকেই বৃষ্টি ঝরাচ্ছে, সেকারণে এর শক্তি কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় নাও হতে পারে। তবে যদি এটি আরো শক্তি সঞ্চয় করে তাহলে আজ দুপুরনাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। তখন এর নাম হবে ‘গতি’।

নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির এই প্রবণতা আগামী দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/কেআর)