বিড়ম্বনায় ঢাবির সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা

মনিরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১১:৪৩ | প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১০:২৬

মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে খালি করে দেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। তড়িঘড়ি করে বাড়িতে চলে যান অনেক শিক্ষার্থী। এ ছুটি স্বল্প সময়ের হবে মনে করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হলেই রেখে যান। কিন্তু বন্ধ বাড়তে থাকলে হলে রেখে যাওয়া পোশাক-পরিচ্ছেদ, সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র ইঁদুর, তেলাপোকায় নষ্ট করে ফেলবে এমন আশঙ্কায় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যেতে জুনের শেষে হলে প্রবেশের অনুমতি দেয় প্রতিটি হল কর্তৃপক্ষ। তবে শুধু দুই-একটা কাপড় ও কাগজপত্র ছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় অন্য কিছু নিতে দিচ্ছে না কবি সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রুম থেকে কাপড় নিতে সময় দেয়া হচ্ছে মাত্র ১০ মিনিট। এর ভেতর রুম থেকে বের না হলে শিক্ষকদের কাছ থেকে এমনকি হলের কর্মচারীদের মুখ থেকেও শুনতে হচ্ছে বকাঝকা। শিক্ষার্থীরা বলছেন এটি তাদের জন্য বিব্রতকর ও অপমানজনক।

অন্যান্য হল থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছু নেয়া গেলেও সুফিয়া কামাল হল কেন দিচ্ছে না- আবাসিক শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নের উত্তরে খারাপ আচরণ এমনকি সিট ছেড়ে দেয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে হলের একজন আবাসিক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে।

চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। বেশ কিছুদিন আগে হলে যাই আমার জিনিসপত্র নিতে। ফর্ম পূরণ করলাম, কী কী জিনিসপত্র লাগবে সে অংশে জামাকাপড়সহ যা যা প্রয়োজন সব কিছু লিখেছি। এরপর ফ্লোর ম্যামের কাছে সাইন করাতে গেলে তিনি শুধু আমাকে একটা শীতের কাপড় এবং একটা পরিধানের কাপড় নেয়ার পারমিশন দিলেন। একটা জুতো নিয়েছিলাম, যেটা শীতে পরি; কিন্তু তিনি আমাকে তা আনতে দেননি। এসব জিনিস আমার খুব দরকার। আমি ম্যামকে সেটি বলেছি।’

ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘অন্যান্য হলে প্রয়োজনীয় সবকিছু নিতে দিচ্ছে আমাদের হলে দিচ্ছে না কেন, জানতে চাইলে তিনি আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলেন। আরও বলেন অন্যান্য হলে দিচ্ছে যখন সেখানে গিয়ে থাক।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘রুমের অবস্থা অনেক খারাপ। জামা-কাপড়ে সাদা সাদা তিলা ধরেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার প্রায় সব পোশাক টিউশনির টাকা জমিয়ে কেনা। আমার শখের পোশাক যে নষ্ট হচ্ছে উনারা কেউ আমাদের কিনে দেবেন?’

এই শিক্ষার্থী তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ দিয়ে হলের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপে লিখলে সেখানে প্রয়োজনীয় কাপড়, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিতে দূর দূরান্ত থেকে হলে যাওয়া প্রায় শিক্ষার্থীই একই অভিযোগ করেছেন।

হলের শিক্ষার্থী মুমতাহিনা লেখেন, ‘আমাকেও একইরকমভাবে কিছু নিতে দেয়নি। আমরা যদিও কয়েকজন রুমমেটসহ যাই। তারপরও বইপত্র আর দুটি শীতের কাপড় নেয়ার পারমিশন দিয়েছে। এর বাইরে আমাকে আর কিছু নিতে দেয়নি৷ বেশি কাপড় নিতে চাওয়ার জন্য উল্টো বকাঝকা করে। বাধ্য হয়ে শীতের কাপড়, জুতাসহ সব কিছু হলে রেখে আসতে হয়।’

তাসফিয়া নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘আমি এইসব ফালতু নিয়ম দেখে আমার সব জিনিসপত্র আল্লাহর নামে ছেড়ে দিয়েছি। কারণ জানি, এই ১০ মিনিটের নামে যে পাঁচ মিনিট দেবে তাতে আমি আমার ড্রয়ারের চাবিটাও খুঁজে পাবো না। এইসব নিয়মের প্রতিবাদ জানাই।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, হল বন্ধ রয়েছে প্রায় সাতমাস। এতদিন বন্ধ থাকবে সেটি আমরা কল্পনাও করিনি। তাই কয়েকটা কাপড় নিয়ে বাড়িতে যাই। এই সাতমাসে কয়েকটা কাপড় দিয়ে চলা অসম্ভব। এই করোনাকালে সবার আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্যও অনেকের নেই। আর আমাদের কাপড় আমরা নেব হল কর্তৃপক্ষ আটকানোর কে?

তবে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামীম বানু বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই এটি করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সব কাপড় আনতে দিলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাপড় চুরি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই এই নিয়ম।

ঢাকা টাইমসকে শামীম বানু বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দুইটা কাপড়, ল্যাপটপ, বই, কাগজপত্র নিতে দিচ্ছি। সামনে শীতকাল। তাই আমরা একটা করে শীতকালীন কাপড়ও নিতে দিচ্ছি। তবে সব কিছু আমরা দিতে পারবো না। সব কিছু নিতে দিলে হলের অন্য মেয়েদের জিনিসপত্রের সিকিউরিটির অসুবিধা হবে৷ ওদের জিনিসপত্র ওদের দিতে পারলে আমাদের আরও ভালো লাগতো। কিন্তু শুধু প্রশাসনিক নিরাপত্তার কারণেই আমরা এটি করতে পারছি না। এটা করলে আমাদের অসুবিধা হবে।

প্রশাসন অন্যের কাপড় চুরি হওয়ার যে আশঙ্কা প্রকাশ করছে সে বিষয়ে রুকাইয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, যেসব পোশাক হল প্রশাসন আনতে দিচ্ছে সেসবও তো অন্যের হতে পারে। মানুষ চুরি করলে যেকোনোভাবেই করতে পারে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে হল পরিবারের ফেসবুক গ্রুপে হলের শিক্ষার্থী উর্মী লেখেন, দরকার হলে আমাদের থেকে লিখিত নেয়া হোক, আমাদের জিনিস চুরি হলে হল কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। তারপরও আমাদেরকে আমাদের কাপড় আনতে দিক। আমাদের জিনিসপত্র নষ্ট হলে তারা তো ক্ষতিপূরণ দেবে না।

হলের নিচ তলায় থাকেন নুসরাত সাদিয়া। সাত মাস হলে না থাকায় তার সব কাপড়, কিছু বইখাতা উইপোকা, ইঁদুর কেটে ফেলেছে। তাকে এসব পরিষ্কার করার সময়ও দেননি হলের আবাসিক শিক্ষক৷ তিনি বলেন, আমি এগুলো পরিষ্কারও করতে পারিনি। মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময় দিয়েছে। আমি এগুলো ওইভাবে রেখে চলে আসছি।

সময় বেধে দেয়ার বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, আমাদের আবাসিক শিক্ষকরা প্রতি সপ্তাহে এক ঘণ্টা করে বসেন। তার ফ্লোরের মেয়েরা সেখানে এসে তাকে দেখিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে যায়৷ তার কাছে যতজন মেয়ে আসে এই সময়টা প্রত্যকেজনকে ভাগ করে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এরকম তো হওয়ার কথা নয়। এতটুকু সহযোগিতা শিক্ষার্থীদের করা প্রয়োজন। বিষয়টা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হলো না। আমি এটা খোঁজ নিচ্ছি।’

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন

ববির মেডিকেলে  চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলা, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্সের বিবিএ ১৫তম ব্যাচের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

এবার কুবির আরেক সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

গুচ্ছের হাবিপ্রবি কেন্দ্রে তিন ইউনিটে পরীক্ষার্থী ১২৩৪১ জন

জাবি অধ্যাপক তারেক চৌধুরীর গবেষণা জালিয়াতিতে তদন্ত কমিটি

বিএসএমএমইউর ১২৪ শিক্ষক-চিকিৎসক ‘গবেষণা অনুদান’ পেলেন সাড়ে ৪ কোটি টাকা

ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন

বুয়েটে রাজনীতি: হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পর আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা

মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেওয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :