কুমারী পূজা

সুব্রত বিশ্বাস (শুভ্র)
| আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২০, ১৪:০২ | প্রকাশিত : ২৪ অক্টোবর ২০২০, ১২:৩০

কুমারী পূজা হলো এক বিশেষ ধরনের পূজা, যে পূজায় এক কিশোরী কন্যাকে দেবীর আসনে বসিয়ে মাতৃরূপে পূজা-অর্চনা করা হয়। শঙ্খের ধ্বনি, কাঁসর ঘণ্টা, ঢাকের বাদ্য, উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে কুমারী মাকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে দেওয়া হয়। অষ্টমী তিথির পূজা শেষে হয় কুমারী পূজা। অষ্টমী ছাড়াও অনেক জায়গায় নবমীর দিনেও করা হয় কুমারী পূজা। কালী পূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, অন্নপূর্ণা পূজা, এমনকি শক্তি পূজাতেও কুমারী পূজা করা হয়।

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, মা কালীর হাতে কলাসুর বধের প্রতীকী হলো কুমারী পূজা। কথিত রয়েছে, কলাসুর স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করে নিয়েছিল। দেবতারা মা কালীর কাছে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করেন। তাদের আর্তি শুনে মা কালী আবার জন্ম নেন শিশুকন্যারূপে এবং কলাসুরকে বধ করেন।

এই পূজার বৈশিষ্ট্য হলো কুমারীকে পূজা করার সময় দেখা হয় না তার ধর্ম, জাত-পাত। এখনো ঋতুবতী হয়নি ০১ থেকে ১৬ বছর বয়সী যেকোনো মেয়েই কুমারী হতে পারে। এমনকি বারবনিতার সন্তানও কুমারীরূপে পূজিত হতে পারে। বয়স অনুযায়ী কুমারীদের ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। ১ বছর বয়সী কন্যাকে সন্ধ্যা, ২ বছর বয়সী কন্যাকে সরস্বতী, ৩ বছর বয়সী কন্যাকে ত্রিধামূর্তি, ৪ বছর বয়সী কন্যাকে কালিকা, ৫ বছর বয়সী কন্যাকে সুভগা, ৬ বছর বয়সী কন্যাকে উমা, ৭ বছর বয়সী কন্যাকে মালিনী, ৮ বছর বয়সী কন্যাকে কুব্জিকা, ৯ বছর বয়সী কন্যাকে কালসন্দর্ভা, ১০ বছর বয়সী কন্যাকে অপরাজিতা, ১১ বছর বয়সী কন্যাকে রুদ্রানী, ১২ বছর বয়সী কন্যাকে ভৈরবী, ১৩ বছর বয়সী কন্যাকে মহালপ্তী, ১৪ বছর বয়সী কন্যাকে পীঠনায়িকা, ১৫ বছর বয়সী কন্যাকে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ১৬ বছর বয়সী কন্যাকে অন্নদা বা অম্বিকা বলা হয়।

কুমারী দেবী ভগবতীর অতি সাত্ত্বিক রূপ। জগন্মাতা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্ত্রী হয়েও চিরকুমারী। কুমারী আদ্যশক্তির মহামায়ার প্রতীক। দেবী দুর্গার আরেক নাম কুমারী। বিশ্বাস করা হয় কুমারী পূজা করলে সব বিপদ কেটে যায়। দার্শনিক মতে, কুমারী পূজা সমাজে মেয়েদের মূল্য প্রতিষ্ঠা করে। কুমারীত্বকে মনে করা হয় শক্তির বীজ, সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের প্রতীক। নারীত্ব ও প্রকৃতির প্রতীক কুমারীত্ব। মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তবরূপ কুমারী পূজা। মনে করা হয় কুমারীর মধ্যেই নেমে আসেন মা।

কালের আবর্তে দুর্গাপূজায় কুমারী পূজা হারিয়ে গেলেও স্বামী বিবেকানন্দ মাতৃজাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ১৯০১ সালে বেলুর মঠে শ্রীরামকৃষ্ণ ও মা সারদাদেবীর অনুমতিক্রমে কুমারী পূজার পুনঃপ্রচলন করেন। তবে সব পূজামণ্ডপে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয় না। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল ও যশোরের মঠের বিভিন্ন শাখায় কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে করোনা মহামারির কারণে জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবার কোনো মন্দিরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে না।

লেখক: কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :