ধর্ম ও রাজনীতি রেষারেষিমুক্ত সমাজ প্রয়োজন

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৫৩

আসিফ আকবর

আমাদের দেশের মানুষের কিছু ইউনিক ব্যাপার আছে যা বিশ্বে বিরল। প্রতিটি ধর্মীয় সামাজিক রাষ্ট্রীয় উৎসব এদেশের মানুষ খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে। সেই ছোটবেলা থেকেই অশান্তি দেখে দেখে বড় হয়েছি। শত দুর্যোগ-দুর্বিপাক কোনো উৎসবকেই আজ পর্যন্ত দমিয়ে রাখতে পারেনি।

এ বছর করোনা-বন্যাও পরাস্ত হয়েছে এদেশের মানুষের নাড়ির টানের কাছে। এই যে ম্যারাথন বন্যা চলছে, মানুষের কাছে তেমন অর্থকড়িও জমা নেই, তবুও উৎসব চলছে। কিসের মাস্ক, কিসের স্যানিটাইজার, জাতি ছুটছে আপন গতিতে। আতঙ্কটা হালকা কেটে গেলে এদেশে আতঙ্ক নিজেই আতঙ্কিত হয়ে যায়।

দুটো ঈদ দেখলাম। আমি ভেবেছিলাম এবার হয়তো জাতি দমে যাবে একটু। ঠাট্টা মশকরা যেটাকে ইংরেজিতে বলে ট্রল, এগুলোকে কেয়ার করার মতো টাইমই নেই আমাদের। বরং যারা ট্রলের আশ্রয় নিয়ে মানুষের আবেগকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো ফেসবুকে, তারা নিজেরাই এখন বড় পর্যটক। নিজেও কয়দিন স্টে হোম লিখে বেআক্কেল হয়ে গেছি। ভুলেই গিয়েছিলাম আমিও এই জাতির হিস্যা, কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারবে না আমাদের।

দেশজুড়ে প্রতিনিয়ত নানা রকম সার্কাস হচ্ছে। আমরা একেক সময় একেকটা ইস্যু নিয়ে জলে স্থলে অন্তরীক্ষে ব্যস্ত হয়ে যাই। আর ফেসবুক আসার পর তো কোনো কথাই নেই, আপডেটের পর আপডেট। শেষ পর্যন্ত একটা ইস্যুই টিকে থাকে, আর সেটা হচ্ছে উৎসব। আমারও খুব ভালো লাগে এই উচ্ছ্বাস। দুনিয়ার বহু দেশ ঘুরে জেনেছি, দেখেছি ক্যালেন্ডারের দরকার নেই, সুযোগ পাওয়া মাত্রই পার্টিমুডে থাকা একমাত্র জাতি আমরা বাংলাদেশিরাই।

বছর ঘুরে আবার এলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব। বেড়ে উঠেছি এক চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ ধর্মীয় সংস্কৃতিতে। প্রতিটি ধর্মীয় উৎসবকে দেখে এসেছি সামাজিক উৎসব হিসেবেই। এবার সীমিত আকারে পূজার অনুষ্ঠান চললেও জাতি আছে পার্টিমুডে। ফেসবুকজুড়ে সবাই সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, এটাই বাংলাদেশ। ডিভাইড অ্যান্ড রুল পদ্ধতিতে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে বিভক্ত করার প্রয়াস আগেও ছিল এখনো আছে।

আমি সবসময় চাই জাতি উৎসবমুখর থাকুক। আমরা যেভাবে উৎসব পালন করি সেভাবে দেশপ্রেমটা সবার অন্তরের গভীরে প্রোথিত হোক। ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষ রুখতে হবে আমাদের সবার স্বার্থে। আমরা সবাই আগে মানুষ, এটাই চিরন্তন সত্য। মনুষ্যত্বের জয়গান বাজতে থাকুক প্রতিটি প্রাণে।

হাসি খুশি আনন্দে বেড়ে উঠুক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ধর্ম আর রাজনীতি রেষারেষিমুক্ত একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের, তা হলেই উৎসবমুখর জাতির আনন্দ হবে মজবুত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য রইলো শারদীয় শুভেচ্ছা। আসুন আমরা সবাই মিলেমিশে ভালো থাকি।

লেখক: কণ্ঠশিল্পী

ঢাকাটাইমস/২৪অক্টোবর/এসকেএস