ফেরেননি পিকে হালদার, পাচারের টাকা কি ফিরবে?

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০৮:০৮

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) রবিবার নির্ধারিত দিনে দেশে ফেরেননি৷ তিনি অসুস্থ এবং করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে বলে এক চিঠিতে জানিয়েছেন শনিবার৷

তবে তিনি কবে আদালতের নির্দেশনা মেনে বাংলাদেশে আসবেন তা জানাননি৷ বলেছেন, তার সুবিধামত সময়ে আসার চেষ্টা করবেন৷ দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম বলেছেন, ‘তার চিঠি এবং ভাষা ঔদ্ধত্বপূর্ণ৷ তিনি আদালত অবমাননা করেছেন৷ আমরা তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনব৷’

সুপ্রিম কোর্টের আইজীবী মনজিল মোরসেদ বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘পিকে হালদার মনে করেছিলেন টাকার জোরে তিনি সুবিধা পাবেন৷ কিন্তু আদলত তাকে সেই সুবিধা দেয়নি৷ তাকে আত্মসমর্পণের সুযোগ না দিয়ে দেশে ফেরার পর পরই গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন৷ তিনি হয়তো সেই কারণেই আসেননি৷’

এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘তিনি নিজেই যেহেতু আদালতে আবেদন করেছেন তাই তাকে আদালতের নির্দেশে চলতে হবে৷ আদালত তো পুতুল নয়৷ তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা উচিত৷’

এই বিষয়ে পিকে হালদারের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান লিমনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তিনি পিকে হালদারের চিঠিটি অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে পাঠিয়েছেন৷

গত ৭ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক পিকে হালদারের পক্ষে আদালতে আবেদন করে বলা হয়, তিনি এখন দেশের বাইরে থাকলেও দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করে টাকা বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিতে চান৷

গত বুধবার তার আইনজীবী আদালতকে জানান পিকে হালদার ২৫ অক্টোবর সকাল ৮টায় অ্যামিরেটস এয়ালাইন্স-এর একটি বিমানে ঢাকায় আসবেন৷ আদালত তার আবেদনে সাড়া দিলেও আত্মসমর্পণ নয়, দেশে আসা মাত্র গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি এলেন না৷

দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম বলেন, ‘পিকে হালদার বলেছেন তিনি তার সুবিধামত সময়ে আসবেন৷ আবার দাবি করেছেন তিনি আদালতের আদেশ পাননি৷ তিনি তো একজন পলাতক আসামি৷ তার তো এত কিছু পাওয়ার সুযোগ নাই৷ তিনি তো এখন তার ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না৷ তিনি ফিরে না এলে আমরা আইনগতভাবে তাকে ও তার পাচার করা অর্থ ফেরত আনব৷’

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘দুদক তার পাচার করা অর্থ এবং তাকে ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়ার পরই সে আসলে দেশে ফিরে আসার আবেদন করেছিল৷ তার হয়তো ইচ্ছা ছিল পাচার করা প্রায় চার হাজার কোটি টাকার একটা অংশ ব্যবহার করে রেহাই পেয়ে যাবেন৷ কিন্তু সেটার আশা না দেখে এখন সে টালবাহানা করছে৷’

মোট তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা কানাডায় পাচার করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে৷ এনিয়ে কোম্পানি আইনে একাধিক মামলা হয়েছে৷ অন্যদিকে দুদকেও তার বিরুদ্ধে মামলা আছে৷ দুদক বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা তার ২৭৫ কোটি টাকা জব্দ করেছে৷ আরও কিছু সম্পদ জব্দ করা হলেও তার অর্থিক মূল্য এখনো দুদক নির্ণয় করেনি৷

পাচারের টাকা কতটা ফেরত আসে?

২০১২ এবং ২০১৩ সালে তিন দফায় সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে থাকা খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ২১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ফেরত আনতে পেরেছিল দুদক৷ পাশাপাশি যুক্তরাজ্যকে তিন লাখ মার্কিন ডলার উদ্ধার করে দিয়েছে বাংলাদেশ৷

ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ট্রুথ কমিশন গঠন করে ৩৪ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল৷ ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জরুরি অবস্থার সময় দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্স বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আরো এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়৷ তবে এরমধ্যে আবার ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দেশের সর্বোচ্চ আদালত মালিকদের ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়৷

অন্যদিকে ট্রুথ কমিশনকে আদালত অবৈধ ঘোষণা করলেও যারা টাকা জমা দিয়েছেন তাদের টাকা ফেরত দেয়ার কোনো নির্দেশ দেয়নি৷

দুদক জানায়, তাদের উদ্যোগের মধ্যে এখন এগিয়ে আছে মোরশেদ খান ও তার পরিবারের সদস্যদের হংকংয়ে পাচার করা ৩২১ কোটি টাকা ফেরত আনা৷ এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১৬ কোটি টাকা ফেরত আনার জন্য হংকংয়ের অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক৷

বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নয় কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে৷ গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং তার ভাই হাফিজ ইব্রাহিমের টাকাও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে৷ এদিকে হলমার্কের কাছ থেকে ১৩ কোটি টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুদক৷ তবে তা আইনি প্রক্রিয়ার কারণে আটকে আছে৷ দুদকের আইনজীবী দাবি করেন তারা এরকম আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন পাচারের টাকা ফেরত আনার৷

পিকে হালাদারের টাকা কি ফেরত আনা যাবে?

খুরশিদ আলম জানান, মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স আইন ২০১২ অনুযায়ী, ক্যানাডসহ পৃথিবীর ১৩২টি দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা যায়৷ পিকে হালদারের টাকাও ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হবে৷ আর আদালতে আবেদন করা হবে যাতে তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরত আনা যায়৷

তিনি বলেন, ‘পিকে হালদার ঠিক কোন দেশে আছে আমরা নিশ্চিত নই৷ তারা বলছেন ক্যানাডায় আছেন৷ একজন পলাতক আসামিকে আদালত যে সুযোগ দিয়েছেন তা সাধারণ আইনে পারেন না৷ হাইকোর্ট তার ইনহেরেন্ট পাওয়ারের কারণে দিয়েছে৷ এখন সেই সুবিধা পেয়ে উল্টো সে আদালতকে অবমাননা করছে৷’

মনজিল মোরসেদ বলে, ‘মানিলন্ডারিংকে সারাবিশ্বেই এখন গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে৷ দুদক যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে পিকে হালদারের পাচার করা টাকা এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব৷’-ডয়চে ভেলে

(ঢাকাটাইমস/২৬অক্টোবর/জেবি)