স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্ব চায় রায়গঞ্জ উপজেলা আ.লীগ

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ
| আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২০, ১৫:০৩ | প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৩৯

আগামী ২৯ অক্টোবর রায়গঞ্জ উপজেলা সম্মেলনকে ঘিরে মহাসড়ক-আঞ্চলিক সড়কে টানানো হয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন। তাতে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় চার নেতার ছবি।

দীর্ঘ আট বছর পর রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। কাউন্সিলরদের মাধ্যমে দলে স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছেন তারা। তবে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠিত হবে এমন আশা দলের জ্যেষ্ঠদের।

এদিকে সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে উপজেলার নিমগাছী ডিগ্রি কলেজ মাঠে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় রাজপথ দখলসহ রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। অবশ্য টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে দলে। তবে তাদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলনে সেই নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে উপজেলাজুড়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা ও সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম টিপু।

তবে এ সম্মেলনে কে হচ্ছেন সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক? এ প্রশ্নকে ঘিরেই সবার আগ্রহ আগামী ২৯ অক্টোবরের দিকে।

সর্বশেষ রায়গঞ্জ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেইবার সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল হাদি আল-মাজী জিন্নাহ ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শরিফ উল আলম শরিফ।

অভিযোগ ওঠেছে, দীর্ঘ সময় সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছিল। জাতীয় দিবস, বিশেষ দিবস, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলোও পালন করা হয়েছে দায়সাড়াভাবে। এছাড়া দীর্ঘদিন মূল দলের সম্মেলন না হওয়ায় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে, এসব কারণে দলে বড় ধরনের কোন বিশৃঙ্খলা দেখা না দিলেও এবারের সম্মেলনে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।

এদিকে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সম্মেলনের ঘোষণার পর থেকে উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে, সম্মেলনে কাউন্সিলদের চুড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশকারীরা।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে কৌশলে ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে কাউন্সিলর তালিকায় তাদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন বলে জানা যায়। অথচ তালিকায় নেই দলের নিবেদিত ও ত্যাগী নেতারা।

উপজেলার ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এসএম আজিমুদ্দিন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘১৯৭২ সালে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হাত মেলাতে পারলেও ৪৮ বছর পর নিজ উপজেলার সম্মেলনে কাউন্সিলর হতে পারলাম না। অথচ, বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে কাউন্সিলর বানানো হয়েছে। এমনকি একই বাড়ি থেকে ৫-৬ জনকে কাউন্সিলর বানানো হয়েছে।’

আক্ষেপ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিন বারের সিনিয়ির সহসভাপতি আব্দুর রহিম মাস্টার বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের লোকজনসহ অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাউন্সিলর বানানো হলেও আমাকে বাদ করা হয়েছে।’

তার মতো অনেককেই কাউন্সিলর বানানো হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। এতে দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সমালোচনার মুখে পরেছেন তারা।

জানা গেছে, আট বছর পর সম্মেলন হচ্ছে তাই নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। নতুন করে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের মধ্যে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নতুন করে দলের নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন করে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

জানা গেছে, তারা নির্বাচিত হতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাত-দিন কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন উপর মহলে। তবে, সভাপতি পদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছেন সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনের সাবেক এমপি মরহুম গাজী ইসহাক হোসেন তালুকদারের ছেলে জেলা আ. লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হোসেন তালুকদার ইমন। পিতার ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগিয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তার প্রতি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। কর্মীবান্ধব এবং দলের প্রতি অনুগত হওয়ায় তার গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। তিনিই রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে আসীন হতে পারেন বলে অধিকাংশ নেতাকর্মীর ধারণা।

একই পদের অপরপ্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাদী আল মাজী জিন্নাহ। তিনি জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হওয়ায় বিগত আট বছরে দলীয় কার্যক্রমে ও নেতাকর্মীদের জন্য প্রত্যাশিত সময় দিতে পারেন নি। এ কারণে তৃণমূলের কাছে তিনি ঘেঁষতে পারছেন না বলে জানান অনেকেই।

তবে জিন্নাহ বলেন, ‘এক বাড়িতে ৫-১০ জন যোগ্য লোক থাকলে তারা কাউন্সিলর হতেই পারেন। এটি দোষের কিছু না।’

এদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদেও নতুন নেতৃত্ব আসা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেতারা। এ পদেও যোগ্য এবং ত্যাগী প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে ভালো সাড়া পাচ্ছেন উপজেলা আ. লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয়। তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক ও সমাজসেবক হিসেবে নেতাকর্মীদের কাছে সুপরিচিত। আপদে বিপদে সব সময় কাছে তাকে পেয়েছেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/২৬অক্টোবর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :