দূরত্বের দ্বৈরথ
তবে তাই হোক; যে দেশেই যেতে বলো
চলে যাবো নির্বিবাদেই,
লোকান্তরে হলেও ক্ষতি নেই, তবু ভাববো;
অন্তত: দেহান্তরিত হয়েছি তোমার ইচ্ছাতেই।
এতো-যে দূরত্ব বেড়েছে এখানে ওখানে,
তবু কি সব প্রাণি বসত গেঁড়েছে গোর বা শ্মশানে?
মাঠ থেকে দূরত্ব বেড়েছে ফসলের,
ওলান থেকে দূরত্ব বেড়েছে দুধের।
মসজিদ থেকে দূরত্ব বেড়েছে মুসুল্লির,
মন্দির থেকে দূরত্ব বেড়েছে পূজারীর।
সাধু থেকে দূরত্ব বেড়েছে ভক্তের,
হৃদয় থেকে দূরত্ব বেড়েছে প্রেমের।
গুরু থেকে দূরত্ব বেড়েছে শিষ্যের,
পালিত থেকে দূরত্ব বেড়েছে পোষ্যের।
ছায়া থেকে দূরত্ব বেড়েছে বৃক্ষের,
শিক্ষা থেকে দূরত্ব বেড়েছে দীক্ষার।
নেতা থেকে দূরত্ব বেড়েছে কর্মীর,
ফুল থেকে দূরত্ব বেড়েছে প্রজাপতির।
বিচার থেকে দূরত্ব বেড়েছে সাজার,
প্রজা থেকে দূরত্ব বেড়েছে রাজার।
অক্ষর থেকে দূরত্ব বেড়েছে হসন্তের,
কোকিল থেকে দূরত্ব বেড়েছে বসন্তের।
কপাল থেকে দূরত্ব বেড়েছে সিঁদুরের,
পদ্মা থেকে দূরত্ব বেড়েছে ইলিশের।
ভাইরাস থেকে দূরত্ব বেড়েছে নাশকের,
সেবা থেকে দূরত্ব বেড়েছে শাসকের।
শ্যামা থেকে দূরত্ব বেড়েছে রাইয়ের,
রাখি থেকে দূরত্ব বেড়েছে ভাইয়ের।
নদী থেকে দূরত্ব বেড়েছে জলের,
আদর্শ থেকে দূরত্ব বেড়েছে দলের।
চোখ থেকে দূরত্ব বেড়েছে দৃষ্টির,
চরকা থেকে দূরত্ব বেড়েছে বুড়ির।
স্বপ্ন থেকে দূরত্ব বেড়েছে খোয়াব নামার,
খোকন সোনা থেকে দূরত্ব বেড়েছে চাঁদ মামার,
আকাশ থেকে দূরত্ব বেড়েছে মেঘের,
মা থেকে দূরত্ব বেড়েছে মাণিকের।
সুতো থেকে দূরত্ব বেড়েছে মালার,
কুলসুম থেকে দূরত্ব বেড়েছে কালার।
তবে হ্যাঁ, হ্রাস বৃদ্ধি দুই’ই আছে দূরত্ব দ্বৈরথে:
মন ও মত থেকে যদিও দূরত্ব বেড়েছে
মনান্তর আর মতান্তরের, তবে
মানুষ থেকে দূরত্ব কমেছে মন্বন্তরের।
বৃক্ষ থেকে দূরত্ব কমেছে কুঠার-করাতের,
বালাই থেকে দূরত্ব কমেছে বদ্যির,
মৃত্যু থেকে দূরত্ব কমেছে জীবনের;
লোকান্তর থেকে দূরত্ব কমেছে
অতৃপ্ত প্রেম আর প্রেম উপেক্ষিতের।