চকবাজারে হাজী সেলিমপুত্র ইরফানের 'টর্চার সেল'

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২০, ২৩:৪১ | প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর ২০২০, ২৩:১৮

পুরান ঢাকার চকবাজারে সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা আশিক টাওয়ার ভবনের ছাদের একটি রুম থেকে হাতকড়া, হাড় ও ছোরাসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। এই কক্ষকে ইরফান সেলিম ‘নির্যাতন কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করতেন বলে র‍্যাবের ভাষ্য।

রাজধানীতে নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে ‘মারধরের’ ঘটনায় মামলার পর হাজি সেলিমের পুরান ঢাকার সোয়ারি ঘাটের বাড়িতে অভিযান শেষে চকবাজারের বাড়িতে ওই নির্যাতন কেন্দ্রের সন্ধানের কথা জানায় র‍্যাব।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. ক. আশিক বিল্লাহ বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল ওই কক্ষটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এরপর আমরা অভিযান চালিয়েছি।

র‍্যাবের এই মুখপাত্র বলন, টর্চার সেল থেকে হ্যান্ডকাফ, দড়ি, চাকুসহ আরও বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মানুষের হাড়ের বিষয়ে নিশ্চিত করে কোনও মন্তব্য করেননি কেউ। ফরেনসিক করার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের কর্মকর্তারা।

চকবাজারের আশিক টাওয়ার ভবনটি ১৬ তলা। পুরান ঢাকার সবচেয়ে বড় ভবন এটি। ভবনের ১৬ তলায় হাজি সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা ডেভেলপারের অফিস। এর ওপরেই ছাদ। আর ছাদের উপরেই এই টর্চার সেলের সন্ধান মিলেছে।

র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ইরফান ও জাহিদকে টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ইরফানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৬ তলা ওই ভবনের ছাদের একটি কক্ষে অভিযান চালানো হয়। সেখানে হকিস্টিক, হাতকড়া, ছোরা, মোটা দড়ি, গামছা, ইলেকট্রিক শক দেওয়ার তারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম এবং ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। “এখানে বিভিন্নজনকে এনে নির্যাতন করতেন ইরফান” বলেন তিনি।

রবিবার রাতে রাজধানীর কলাবাগানে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খানের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি। এরপর ওই গাড়ি থেকে কয়েকজন নেমে এসে ওই কর্মকর্তাকে মারধর করেন। নৌবাহিনী কর্মকর্তা নিজের পরিচয় দেয়ার পরও তাকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া সঙ্গে থাকা তার স্ত্রীকেও লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনায় সোমবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খান। সেই মামলায় এর আগে গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগের এই মামলায় সাংসদের ছেলেসহ চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম, প্রোটকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু, মোহাম্মদ জাহিদ ও মিজানুর রহমান।

মামলায় মোট পাঁচটি ফৌজদারি অপরাধের ধারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অপরাধগুলো হলো- দণ্ডবিধি ১৪৩ অনুযায়ী বেআইনি সমাবেশের সদস্য হয়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধমূলকভাবে বল প্রয়োগ করা, ৩৪১ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, ৩৩২ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার কাজে বাধাদানের উদ্দেশ্যে আহত করা, ৩৫৩ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার ওপর বল প্রয়োগ করা এবং ৫০৬ ধারায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়া।

পরে সোমবার দুপুরে পুরান ঢাকার চকবাজারের দেবীদাস ঘাট লেন এলাকায় হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়ে ইরফানকে আটক করে র‌্যাব-১০। পরে তাকে ও তার দেহরক্ষী জাহিদুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন র‍্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট।

ঢাকাটাইমস/২৬অক্টোবর/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :