মোস্তাক ভাই নেই, চোখ ভিজে যাচ্ছে বারবার

জিয়া হক
| আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২০, ২০:৩২ | প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর ২০২০, ২০:১৬

বিশ্বাস করতে পারছি না! কী দেখছি! কী শুনছি! মৃত্যু এমনই, তবুও মানতে কষ্ট হচ্ছে।

দীর্ঘদিন তার সাথে সাংবাদিকতা করেছি। পাশাপাশি ডেস্কে বসেছি প্রায় চার বছর। কী অসাধারণ মানুষ তিনি। কী স্বাস্থ্য সচেতন, ভাবাই যায় না। অফিস থেকে বের হলে তার সাথে হেঁটে পারতাম না। আমার দৌড়াতে হতো প্রায়। বলতেন, ‘ব্যায়াম করতে হবে। শরীর ঠিক রাখতে হবে।’

অফিসে পাশাপাশি বসায় তার সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তার অফিসে গেছি বহুদিন। কখনো খালি মুখে আসতে পারিনি। অফিস বলতে তার ব্যক্তিগত প্রেস। আমারবাগের প্রেস। প্রেসের দোতলা থেকে নেমে রিকশায় তুলে দিছেন অনেকবার।

প্রেসে বইয়ের কাজ করাতাম। টাকা বকেয়া থাকতো। কোনোদিন ভুলেও টাকার কথা বলতেন না। দেয়ার সময় হাসতেন। বলতেন, ‘দরকার নাই। পরে দিয়েন। আপনার সমস্যা নাই তো?’

কত কথা যে বলতেন আমার সাথে। বয়সে আমার দ্বিগুণ হলেও কখনো বুঝিনি তার আচরণে। আপনি করে বলতেন। কী যে বিনয়ী ছিলেন। 'জিয়া ভাই, জিয়া ভাই' করতেন। নিউজে কোনো ভুল হলে শুধরে দিতেন। বানান ঠিক করে দিতেন। কখনো কোনো আদেশ দিতেন না। দিতেন পরামর্শ। করতেন অনুরোধ।

ছুটিতে আমি বাড়ি গেলে তিনি বলতেন, ‘যান, যান। রিফ্রেশমেন্টের দরকার আছে! আমি আপনার কাজ করে দিবো। নিউজ বেশি হলে করে দিবো, ভয় নাই। যান, বাবা-মাকে সময় দিয়ে আসেন।’

ভার্সিটিতে পরীক্ষার সময়ও তিনি বলতেন, 'পড়েন, পড়েন। অফিসের চাপ কম নেন। আমরা তো আছিই।’

কত যে মধুর স্মৃতি তার সাথে। কত যে মধুর দিন কেটেছে তার সান্নিধ্যে। এমন মানুষ সত্যিই বিরল! সত্যিকার ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায়, তিনি তা-ই ছিলেন।

চার বছর আগে আমার বিয়ের সময় অমূল্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে নানা পরামর্শ দিতেন। দারুণ অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ সব।

কিছু দিন আগে একটা জরুরি কাজে ফোন করি। তিনি যথাসাথ্য হেল্প করেছেন। প্রয়াত বন্ধু তাজুলের ক্যানসারের সময় অনেকবার টাকা-পয়সা দিয়ে আমাদের হেল্প করেছেন। সময় দিয়েছেন। বিভিন্নভাবে আমাদের পাশে ছিলেন সব সময়।

নামাজ-রোজা ও ধর্মীয় কাজে তিনি ছিলেন সবার আগে। সবার আগে ছিলেন নিজের দায়িত্ব পালনেও। মেঘ-বৃষ্টি, জ্যাম-জট হলেও তিনি টাইমলি অফিসে থাকতেন। কখনো আসতে দেরি হলে আগেই জানাতেন। সময়-জ্ঞান ছিল সত্যিই অসাধারণ!

সত্যিকার একজন ভালো মানুষকে হারালাম আমরা। হারালাম একজন আপন অভিভাবক। আপন মানুষ। হৃদয়ের মানুষ।

এই ধরনের সত্যিকার মানুষের জন্যই পৃথিবী এত মায়াময়! এত প্রেমময়!

চোখ ভিজে যাচ্ছে বারবার। সত্যিই কি মোস্তাক ভাই আর নেই! বেঁচে নেই আমাদের মাঝে! আর কখনো হাসবেন না মোস্তাক ভাই। বলবেন না, ‘জিয়া ভাই, অসাধারণ হইছে আপনার কবিতা। অসাধারণ!’

কবিতাময় জান্নাতে আপনি হাসবেন। হাসছেন। সেই আলোকিত মুখই দেখছি এখন। দেখছি এই মুহূর্তে। প্রতি মুহূর্তে।

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :