‘দায়িত্ব অবহেলায়’ নবজাতকের মৃত্যু, আদালতে মামলা

নোয়াখালী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর ২০২০, ২০:৪৬

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও দায়িত্বরতদের অবহেলায় এক নবজাতকের (ছেলে) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মৃত নবজাতকের দাদি তাহের বেগম নয়ন (৫১) বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেছেন। আদালতের বিচারিক হাকিম সোয়েব উদ্দিন খান মামলাটি আমলে নিয়ে নির্দেশ পাওয়ার এক কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন দিতে হাসপাতালের আরএমও কে নির্দেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে নোয়াখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নয়জনকে আসামি করে এ মামলাটি করেন তিনি। মামলায় হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ২নং ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী হাওলাদার, গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. লাইনুন নাহার, ডা. নাছির (ইন্টার্নি), সিনিয়র নার্স সামছুন নাহার, মমতাজ বেগম, ম্যাটস ছাত্র নাঈম, আয়া পুতুল রানী, জুহুরা বেগম ও সারজাহানকে আসামি করা হয়েছে।

নিহত নবজাতক জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সরোয়ার মেম্বার বাড়ির জীবন উদ্দিন ও আসমা আক্তার দম্পতির সন্তান।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে আসমা আক্তারের প্রসব ব্যথা উঠলে তার শাশুড়ি তাহেরা বেগম নয়ন আসমাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ২নং ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করেন। ভর্তির পর গৃহবধূর শাশুড়ি নয়ন হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী হাওলাদারকে বারবার ডাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুম থেকে উঠেননি। কিছুক্ষণ পর নার্স বিথীকা ঘুম থেকে উঠে ইন্টার্নি ডা. নাছির ও আয়া মারজাহানের যোগসাজশে বলেন টাকা দিলে তারা বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি করার চেষ্টা করবেন। আর টাকা না দিলে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে সিজার করতে হবে। এসময় তাদের সাথে থাকা ম্যাটস ছাত্র নাঈম অন্তস্বত্ত্বার লজ্জাস্থানের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। শাশুড়ি নয়ন প্রতিবাদ করলে নাঈম বলে এ ভিডিও আমাদের ট্রেনিংয়ের জন্য লাগবে। নিরুপায় হয়ে শাশুড়ি নয়ন গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. লাইনুর নাহারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি হাসপাতালে আসেননি।

অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, হাসপাতালে ওই সময় সিনিয়র চিকিৎসক নার্স চার্জে থাকা সত্ত্বেও গৃহবধূকে আয়া ও ম্যাটসের ছাত্র দিয়ে ডেলিভারি করায়। ওই সময় তারা নবজাতকের ঘাড় ধরে জোরপূর্বক টেনে ডেলিভারি করানোর কারণে নবজাতকের মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কালো হয়ে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। টানা-হিঁচড়ার কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জীবিত নবজাতক প্রসব হওয়ার মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যে মারা যায়। ভিকটিমের শাশুড়ি তার পুত্রবধূর শরীর থেকে বাহির হওয়ার ছবি মোবাইলে তোলার চেষ্টা করলে তাকে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে তারা।

মামলার বাদী ও হাজীপুর ইউপির সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তাহের বেগম নয়ন বলেন, ওই দিন তারা লাশ নিয়ে বাড়ি এসে দাফন করেন। পরদিন ২২ অক্টোবর এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে হাসপাতালে গিয়েও তার আরএমও কে না পেয়ে ফিরে আসেন। এরপর দিন আবার হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টি জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের মৌখিক অভিযোগে ঘটনার পরদিন ২২ অক্টোবর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল আফসার, গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. হেমা সানজিদা ও নাসিং সুপারেন্টেন্ড বেবী সুলতানা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ওই তদন্ত কমিটি কোন লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সৈয়দ মো. আব্দুল আজিমের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তারা কেউই কল রিসিভ করেননি।

(ঢাকাটাইমস/২৭অক্টোবর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :