সাজা কমের সুযোগে বাড়ছে কিশোর অপরাধী

প্রতীকী ছবি

দেশে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নানা অপরাধের মূলহোতারা কিশোর অপরাধের সাজা কম হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের ব্যবহার করছে। তাই এসব অপরাধ নির্মূলে কিশোর অপরাধীদের সাজা বাড়ানো উচিত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে দেশে কিশোর অপরাধের হার কমবে।

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায়ের পর্যবেক্ষণে এমনই মন্তব্য করেছে আদালত। মঙ্গলবার বরগুনা শিশু আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘রায়ের পর্যবেক্ষণে শুধু কিশোর অপরাধীদের নিয়ে নয়, নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়েও মন্তব্য করেছেন আদালত।’

পিপি বলেন, ‘রায়ের পর্যবেক্ষণে কিশোর অপরাধ দমনে আদালত যে মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গে আমিও একমত পোষণ করছি। কারণ, কিশোর অপরাধীদের শাস্তি বৃদ্ধি করা না হলে এদের অপরাধের পরিমাণ দিন দিন বাড়বে। পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা ও মৌলিক শিক্ষার অভাবে এই কিশোররা বিপথগামী হয়েছে। তাই এই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে দেশে কিশোর অপরাধের সংখ্যা এবং কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলেও মন্তব্য করেন আদালত।’

মিন্নির বিষয়ে আদালতে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘আদালত বলেছেন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মিন্নির অনৈতিক ও বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে রিফাত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এই কিশোর আসামিরা প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে।’

আলোচিত এ হত্যা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ছয় জনকে ১০ বছর, চার জনকে পাঁচ বছর ও একজনকে তিন বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। আর বেকসুর খালাস পেয়েছে তিনজন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

১০ বছর সাজা পেয়েছে মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী (১৭), মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মো. আবু আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান (১৬), মো. ওলিউল্লাহ অলি (১৬), মো. নাইম (১৭), মো. তানভীর হোসেন (১৭)। পাঁচ বছর সাজা হয়েছে, জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লার (১৭)। তিন বছর কারাদ- পেয়েছে প্রিন্স মোল্লা (১৫)। খালাস দেওয়া হয়েছে আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬), রাতুল সিকদার জয় (১৬), মারুফ মল্লিককে (১৭)।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। ৭৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর ১৪ অক্টোবর বরগুনা শিশু আদালত রায়ের দিন ধার্য করেন। মঙ্গলবার বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর এই মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় হয়। রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নিসহ ছয় জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। বাকি চার আসামিকে খালাস দেয়া হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন বিকালেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২৭ জুন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। রিফাতের ওপর হামলার ছয়দিন পর ২ জুলাই ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড নিহত হন।

(ঢাকাটাইমস/২৭অক্টোবর/ডিএম/জেবি)