যেভাবে রান্না করলে খাবারের পুষ্টিমান বজায় থাকে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০২০, ১০:৫৮

শরীরের পুষ্টির পরিমান বাড়ানোর জন্য খাবারের কোন বিকল্প নেই। খাবার আপনাকে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়, শরীরকে ভিতর থেকে শক্তপোক্ত করে তোলে। তাই যারা অতি মাত্রায় স্বাস্থ্যসচেতন, তারা সবার আগে কী খাচ্ছেন সেদিকে নজর দেন। খাবারই যে কেবল স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে তা নয়, কী উপায়ে ও কীভাবে তা রান্না হচ্ছে, তারও গুরুত্ব রয়েছে। কোন খাবার কীভাবে রান্না করলে তার পুষ্টিমান অক্ষুণ্ন থাকে, তা জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। ফল বা স্যালাড যেহেতু কাঁচাই খাওয়া যায়, তাই তা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সচেতন হয়ে রান্না করলেই হয়তো আশানুরূপ পুষ্টি পাওয়া সম্ভব। ঠিক কীভাবে রাঁধলে খাবারের পুষ্টিগুণ পুরোমাত্রায় বজায় থাকবে চলুন দেখে নেয়া যাক।

অনেকে শাকসবজি কেটে তারপর ধুয়ে নেন, যা কখনো ঠিক নয়। পুষ্টিমান ঠিক রাখতে আগে ভাল ভাবে ধুয়ে নিন তারপর কেটে রান্না শুরু করুন। সবজি একেবারে ছোট ছোট করে না কেটে কিছুটা বড় টুকরো করে কাটুন। টুকরো গুলো একই সাইজে রাখার চেষ্টা করুন। তাতে সেদ্ধ হতে একই সময় লাগবে আর পুষ্টিমানও ভাল থাকবে। সবজি কাটার সময় খেয়াল রাখুন যতটা সম্ভব খোসা সহ কাটতে। কারণ খোসার নিচেই বেশিরভাগ পুষ্টিমান থাকে।

রান্নার সময় ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন। এতে যেমন তাড়াতাড়ি রান্না হবে তেমন পুষ্টিগুণও বজায় থাকবে। কেননা অক্সিজেন খাদ্যের সংস্পর্শে আসার ফলে ভিটামিন বেশি নষ্ট হয়।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা প্রেশার কুকারে রান্না করলে তুলনামূলকভাবে বেশি পুষ্টি উপাদান বজায় থাকে। কেননা এতে ঢাকনা ব্যবহার করা হয় ও দ্রুত আঁচে রান্না হয়। পরিমাণ মত পানি দিয়ে ভাত রান্না করুন। যেন ভাতের পুষ্টিকর মাড় ফেলে দিতে না হয়।

নরম সবজি যেমন-ব্রোকলি, ফুলকপি, গাজর ও শতমূলী সিদ্ধ করার চেয়ে ভাপে রান্না করলে এর স্বাদ বাড়ে। আবার মাছও ভাপে রান্না করলে এর গুণ ঠিক থাকে ও সুস্বাদু হয়। আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মাছ, ইলিশ আর চিংড়িই তো ভাপিয়ে খেতে পছন্দ করি! ভেটকির পাতুরি যদি ছাঁকা তেলে না ভেজে ভাপিয়ে নেন, তা হলেও ভারী চমৎকার লাগে খেতে। ইন ফ্যাক্ট, যে কোনও গ্রেভিতে কাঁচা মাছ ছেড়ে রান্না করলে তা ভাপানোর পর্যায়েই পড়ে।

আপনার পছন্দের যে কোনও মাছ-মাংস-সবজি ভালো করে ধুয়ে নিয়ে নুন-গোলমরিচ-লেবুর রস বা আদা-কাঁচালঙ্কা-টক দই ইত্যাদি মাখিয়ে রেখে দিন খানিকক্ষণ। ম্যারিনেশনে একটি টকজাতীয় উপাদান থাকা আবশ্যক, তা প্রোটিনের তন্তুগুলোকে নরম করে দেবে। তার পর টগবগিয়ে পানি ফোটান একটি পাত্রে, অন্য পাত্রে বা কলার পাতায় মুড়ে টিফিনবাক্সে ভরে ভাপিয়ে নিন আপনার মাছ বা মাংস।

মাংস রান্নার ভালো পদ্ধতি এটি। মাংস, সবজি ও অন্যান্য উপাদান ৪০-৬০ মিনিট রান্না করতে পারেন। গ্রিল করলে মাংস থেকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমে যায়। খেয়াল রাখুন যে রান্না পদ্ধতি আপনি ব্যবহার করছেন, তা যেন হয় সর্বোচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যের উপযোগী। ওই একই পদ্ধতিতে ম্যারিনেট করে নিন প্রথমে, তার পর ভাপানোর বদলে আভেনে বা নন-স্টিক ফ্রাই প্যানে খাবারটি গ্রিল করে নিন। খাদ্যবস্তু নিজের আর্দ্রতাতেই সিদ্ধ হবে, একান্ত প্রয়োজন পড়লে সামান্য ফ্যাট যোগ করতে পারেন গ্রিল করার সময়ে।

সিদ্ধ খাবার তো আমাদের দৈনিক খাদ্যতালিকারই অঙ্গ! নানা রকম ডাল সিদ্ধ, বা আলু-গাজর-কড়াইশুঁটি সেদ্ধ সামান্য নুন-মরিচ আর অল্প ঘি-তেল বা মাখন দিয়ে খেতে দিব্য উপাদেয় লাগে। স্যুপও মূলত সেদ্ধই। চিকেন বা ডিম সিদ্ধ দিয়ে দারুণ স্বাদু স্যালাড বানিয়ে নেওয়া সম্ভব। সিদ্ধ করে খাবার তৈরি করলে এর পুষ্টিমান বজায় থাকে। কিন্তু বেশি সিদ্ধ করলে খাবারের পুষ্টি চলে যায়। সব খাবার আবার সিদ্ধ করে রান্না করা উচিত নয়। যেমন-আলু, বিট, ডাল ও মটরশুঁটি সিদ্ধ করা যেতে পারে। তবে নরম সবজি যেমন— ব্রোকলি, শতমূলী ও শিম এই সবজিগুলোর খাদ্য উপাদান পানিতে ছড়িয়ে পড়ে তাই বেশিক্ষণ পানিতে না রাখাই ভালো। আবার খোসাযুক্ত সবজি যেমন মটর ডাল ও ভুট্টা বেশ কিছুক্ষণ সিদ্ধ করা যেতে পারে।

ছাঁকা তেলে ভাজার চেয়ে নন-স্টিক কড়ায় অল্প তেল ছড়িয়ে চড়া আঁচে ভেজে নেওয়াটাই হচ্ছে স্টার ফ্রাই। স্বাদ বাড়ানোর জন্য পছন্দের সস যোগ করতে পারেন। যে কোনও সবজি, চিকেন বা মাছের স্টার ফ্রাই করা সম্ভব। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে রান্নায় তেল ব্যবহার যতটা কম ব্যবহার করা যাবে ততটাই ভালো। বেশি তাপে ও অল্প তেলে দ্রুত রান্না করলে খাবারের রঙ ও গন্ধ ঠিক রাখা যায়। সেক্ষেত্রে ব্যবহার করুন উদ্ভিজ্জ তেল। যেমন-অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার ওয়েল।

উচ্চতাপ বা চড়া আঁচে খাবার তৈরি করলে এর পুষ্টিগুণ কমে যায়। তবে শাক, টমেটো হাইফেমে সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে ফেললে পুষ্টি, রঙ ও বুনন ঠিক থাকে।

পুষ্টিমান বজায় রেখে রান্না করা আমাদের দায়িত্ব। পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর জন্যই এই রান্নার যত আয়োজন, যা খেয়ে পরিবারের সবাই সুস্থ ও সবল থাকবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮ অক্টোবর/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :