স্থায়ী ঘাট না থাকায় পর্যটকদের ভোগান্তি

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
 | প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০২০, ১৫:২৯

কক্সবাজার থেকে সাগর পথে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর দূরত্ব সাত কিলোমিটার। কক্সবাজার থেকে মহেশখালীতে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌপথ। কিন্তু এই পথে মহেশখালীতে জরাজীর্ণ একটি জেটিঘাট থাকলেও কক্সবাজার প্রান্তে নেই কোন স্থায়ী ঘাট। ফলে ভাটার সময় হাঁটু পানি ও কাঁদাপথ পাড়ি দিয়ে উঠতে হয় ট্রলার ও স্পিডবোটে। এতে দুর্ভোগে পড়েন প্রতিদিন যাতায়াত করা অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ।

কাঠের তৈরি সাঁকো আর সারিবদ্ধ নৌকা দিয়ে অস্থায়ী ঘাট তৈরি হলেও ভাটার সময় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় পর‌্যটকসহ অন্যান্য যাত্রীদের। এরমধ্যে আবার উপজেলা নির্বাহী সম্মেলনকক্ষে গণশুনানীতে ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন স্পিডবোট মালিক সমিতির নেতারা।

স্থানীয়রা বলেন, ‘ভাটার সময় বিশেষ করে মহিলা এবং বয়োবৃদ্ধদের পারাপার করতে অনেক কষ্ট হয়। এছাড়া ওই সময় নৌকা পাওয়া যায় না। মাঝ পথে নৌকা আটকে গেলে যাত্রীদের অনেক সমস্যা হয়। আমাদের থেকে সরকারি লোক টাকা নিলেও কোনও উন্নয়ন করছে না।’

অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার ঘাটে আসা-যাওয়ায় ১০ টাকা করে নিচ্ছেন টুল আদায়ের নামে চাঁদা। যার কোন স্বচ্ছতাও নেই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রফিক নামে এক ব্যক্তি এসব দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেত্বত্বে একটি সিন্ডিকেট এসব টাকা তুলে জেলা প্রশাসন ও পৌর সভাকে যা ইচ্ছা তাই প্রদান করেন বলে মহেশখালী-কক্সবাজারের একাধিক যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। অথচ এই উত্তোলনকৃত টাকা দিয়ে হলেও উভয়ঘাটের অনেক উন্নয়ন করতে পারবেন বলে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

এদিকে মহেশখালীর জনসাধারণ ও পর্যটকরা অভিযোগ করে জানান, নিয়মিত ড্রেজিং ও জেটি সংস্কারের মাধ্যমে এ দুর্ভোগের সমাধান করতে হবে। আর না হয় সেতু নির্মাণ করতেই হবে। মহেশখালী পৌরসভার পক্ষ থেকে একটির ড্রেজিং সংস্কার করলেও অন্য জেটির কাজের কোন খবর নেই। অথচ এই নৌ-রুটে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে অনেকের প্রাণহানী হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি স্থানীয় মানুষ সেতু নির্মাণের জন্য মানববন্ধন ও বিভিন্ন কর্মসূচীও বাস্তবায়ন করেছে। তারপরেও প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশান্বিত বাণী শোনা যায়নি। এদিকে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও নিশ্চুপ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জেটি ঘাটটি ১৯৮৯ সালে নির্মিত হলেও এখনো পর্যন্ত এর কোনো সংস্কার করা হয়নি।

স্থানীয়দের দাবি, শুধু আশ্বাস নয়, দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত জেটি ঘাটের সমস্যার সমাধান চান তারা।

অন্যদিকে, নানান দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানির জন্য ঘাটে দায়িত্বরতদের কাছে অভিযোগ করে উল্টো দ্বিগুণ হয়রানিতে পড়তে হয় বলে একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন।

ঢাকার আশুলিয়া থেকে আসা একদল সাংবাদিক মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরে ঘুরতে গেলে স্পিডবোট চালকের অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হন। স্পিডডবোটে লাইফ জ্যাকেট চাওয়ায় ও ভাড়া বৃদ্ধির কথা তুলে ধরায় তাদের মহেশখালী জেটিঘাটে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রাখা হয়। পরে ৬টার পর গালিগালাজ করে কক্সবাজার নিয়ে আসে।

ঢাকা থেকে আসা সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান জানান, কত সুন্দর মহেশখালী দ্বীপ। প্রাণজুড়ে যায় দেখলে, একদম সুন্দরবনের মতো। কিন্তু জেটির অবস্থা দেখলে কোনো পর্যটক একবার এলে জীবনেও আর আসবে না। অথচ স্বপ্নের এই বিশাল দ্বীপ উপজেলাকে সরকার পরিকল্পিত উন্নয়ন করলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে অনেক লাভবান হতে পারবেন।’

মহেশখালী হোয়ানকের আমির উদ্দিন বলেন, ‘মহেশখালী উপজেলা থেকে জেলা সদরে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম এই নৌপথ। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরেও কক্সবাজার ৬ নং ও মহেশখালী নৌঘাটে কোন ধরনের পরিবর্তন আসে নি। বরং দিন দিন নতুন নতুন পন্থায় যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে। মনগড়া ঘাট ভাড়া, মালামাল ভাড়াসহ বোট ভাড়া আদায় করে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে, স্পিডবোটে প্রতিজন ৭৫ টাকা এবং কাঠের বোটে প্রতিজন ৩০ টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলেও অনেক সময় যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা প্রতিদিনের নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ শিক্ষক জানান, মহেশখালী ঘাট থেকে বোট আসলে তাতে ঠেলাঠেলি করে অনেকটা প্রতিযোগীতার মত করে যাত্রীরা বোটে উঠার চেষ্টা করে। এসময় বোটে উঠতে গিয়ে ৪/৫ জন যাত্রী কাদায় পড়ে কোমর সমান পানিতে ডুবে যায়। এতে মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়।

এদিকে, জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার পৌরসভা ও মহেশখালী পৌরসভা সমন্বয় করে পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিলে জেটিঘাটের সমস্যা, অবৈধ টুল আদায় বন্ধ ও সেতু নির্মাণ করা কোন বিষয় না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কক্সবাজার ও মহেশখালীবাসী।

কক্সবাজার জেলা স্পিড মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটে ইজারা নেই। ২০১০ সালের জন্য ঘাটটি সর্বোচ্চ দরে ইজারা পেয়েছিলেন মহেশখালীর এক ব্যবসায়ী। সেই সময় ঘাটটির ইজারা বাবদ সরকার ১ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার রাজস্ব পেয়েছিলেন। নানা টানাপোড়নের জের ধরে পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের আদেশে ইজারা ও এই ইজারা পদ্ধতি বাতিল করা হয়।

সূত্র আরও জানায়, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় মন্ত্রণালয় শাখার মাধ্যমে খাস কালেকশন করা হচ্ছে। দীর্ঘ আট বছর ধরে এভাবে চলছে। জেলা প্রশাসনের লোকজন এই প্রক্রিয়া দেখাশোনা করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনজন ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :