বাদামি ঘাস ফড়িংয়ের আক্রমণে দিশেহারা কৃষক

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২০, ১৫:৫০ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০, ১৬:০০

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে আমনক্ষেতে ব্যাপক হারে বাদামি ঘাস ফড়িং তথা  কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। একাধিকবার বিষ প্রয়োগ করেও পোকা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। অনেকে ধান কেটে ফেললেও আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না। এতে এ বছর আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় এক লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়। এর মধ্যে দেশীয় উদ্ভাবিত স্বল্প জীবন কালের ধান বিনা-৭, ব্রি ধান ৩৩ ও বিভিন্ন প্রকার উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছে। যা মোট আবাদের শতকরা ১০ ভাগ।

জানা গেছে, এবার মৌসুম জুড়ে বৃষ্টিপাত থাকায় আমনের বাম্পার ফলন হওয়ার কথা। কিন্তু ঘনঘন বৃষ্টিপাতের কারণে স্যাঁতস্যাতে আবহাওয়ায়  আমন ক্ষেতে ব্যাপক হারে বাদামি ঘাস ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকরা পোকার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে একাধিকবার বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ প্রয়োগ করে চলেছেন। বিঘাপ্রতি দুই হাজার টাকা ব্যয় হলেও তেমন কোন কাজে আসছে না বলে জানান চাষিরা। এ অবস্থায় অনেকে জমির ধান কেটে ফেলছেন। কিন্তু তাতে আশানুরূপ ফলন মিলছে না। এক বিঘা জমিতে স্বাভাবিকভাবে ২৫-৩০ মন ধান ফলনের কথা থাকলেও এবার পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ মন। এতে চাষিরা লোকসান গুণছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চতুরাখোর পাঠানপাড়া গ্রামের কৃষক হায়দার বলেন, ‘আমি ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। কিন্তু কারেন্ট পোকার কারণে অসময়ে ধান কেটে ফেলতে হচ্ছে।’

আখানগর গ্রামের আবুল হোসেন নামে এক চাষি বলেন, ‘আমি ৩ একর জমিতে ধান লাগাই। প্রথমদিন দেখি এক বিঘা জমির একটি কোণায় কারেন্ট পোকা। পরদিন গিয়ে দেখি অর্ধেক জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে। কারেন্ট পোকা ধান গাছের ডগা হতে রস শুষে নিয়ে গাছপালা খড়ে পরিণত করে ফেলে।’

মন্ডলাদাম গ্রামের কৃষক কাইমুল ইসলাম বলেন, ‘কারেন্ট পোকা দমনে প্রতি বিঘায় কমপক্ষে দুই হাজার টাকার ওষুধ স্প্রে করেছি। তারপরও পোকা দমন করা যাচ্ছে না। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের মাঠে পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।’

১২ নং সালন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মুকুল বলেন, ‘কারেন্ট পোকার আক্রমনে তার ইউনিয়নের এমন কোন জমি নেই যেখানে আক্রান্ত হয়নি। এ অবস্থায় এবার আমন ধান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা চরমভাবে বিঘ্নিত হবে।’

এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ১০ হেক্টর জমিতে কারেন্ট পোকা আক্রমণের তথ্য আমরা পেয়েছি। এ অবস্থায় বাদামি গাছ ফড়িং পোকা শনাক্ত করতে মাঠ পর‌্যায়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও কৃষি কর্মকর্তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাট-বাজারে সর্বত্র উঠান বেঠকের মাধ্যমে কৃষকদের এই পোকা দমনে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।’

(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/পিএল)