ক্রেতার পকেট পুড়ছে ভোজ্যতেলে

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২০, ২২:৩১

আল-আমিন রাজু, ঢাকাটাইমস

দেশে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির হয়ে পড়ছে। এক মাস ধরে দাম চড়ছে এই নিত্যপণ্যের। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশেও সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেশের বাজারে এখন প্রতিকেজি খোলা পাম তেল ৯০ টাকা আর সয়াবিন তেল ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বোতলজাত তেল ব্র্যান্ডভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা লিটার দরে। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ আর পাম তেলের বেড়েছে ৩২ শতাংশ।

মহামারিকালে তেল পরিশোধন ও বিপণন কোম্পানিগুলো আপতত দাম আর না বাড়ানোর বিষয়ে সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিল গেটে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৯০ টাকা আর পাম তেল ৮০ টাকা করে বিক্রির কথা জানিয়েছে তারা। তবে মিল মালিকরা গেটে বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন বলে পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতি ব্যারেল সয়াবিন তেলের দাম ১৭ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ প্রতি ব্যারেল ১৮ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। একটি সয়াবিন তেলের ব্যারেল বা ড্রামে ২০৪ লিটার তেল থাকে। সেই হিসাবে প্রতি লিটারের কেনা মূল্য পড়েছে প্রায় ৮৯ টাকা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে সবচেয়ে বেশি পাইকারি ভোজ্যতেল বিক্রি হয়। এই দুই বাজারের ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, সয়াবিন তেলের পাইকারি দাম এখনো তিন হাজার ৫৫০ টাকার মধ্যে আছে। কিন্তু মিল গেটে প্রতি মণের দাম চাওয়া হচ্ছে তিন হাজার ৭০০ টাকা করে। আবার কেনার পর তেলের সরবরাহ আদেশ পেতেও দুই থেকে তিন দিন দেরি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা পর্যায়ের বাজারে।

বুধবার মৌলভীবাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৮৮ টাকা ৭৫ পয়সা দরে। আর একইদিন তেল কিনতে মিল মালিকরা ৯২ টাকা ৫০ পয়সা নতুন দাম চাচ্ছেন বলে পাইকারদের দাবি। এর সঙ্গে আবার পরিবহন ব্যয় ও লভ্যাংশ যোগ হয়ে ক্রেতা পর্যায়ে গিয়ে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল পরিশোধনে যুক্ত এক ব্যবসায়ী জানান, দেশে সয়াবিন আর পাম তেলের দাম কমা-বাড়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির প্রভাব রয়েছে। সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর এই পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীল হলেই দেশের বাজার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

এদিকে বিশ্বে এবারের মৌসুমে সয়াবিনের মজুদ পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক কম বলে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর পেছনে লাতিন দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় সয়াবিনের মজুদ কমে যাওয়া ও খরায় নতুন আবাদ বিলম্বিত হওয়া এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে বিশ্বে তেলবীজ সানফ্লাওয়ার ও রাপিসিড উৎপাদনও প্রত্যাশার তুলনায় কম হওয়াকে দায়ী করা হয়েছে।

খুচরা বাজারের চিত্র যেমন

বুধবার রাজধানীর পলাশী, হাতিরপুল, ধানমন্ডি, মালিবাগ, খিলগাঁও বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন লিটার প্রতি দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। আবার বিভিন্ন ব্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলেও দাম বেড়েছে। সাধারণত বাজারে বোতলের গায়ে উল্লিখিত দামের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে বিক্রি হলেও এবার বাড়তি দাম রাখছেন তারা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফ্রেশ, রূপচাঁদা ও তীর কোম্পানির এক লিটার বোতলের তেল এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়, ২ লিটার ২২৫ টাকা এবং পাঁচ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ থেকে ৭০ টাকা। তবে প্রায় সব ব্র্যান্ডেরই এক লিটারের বোতল কম দেখা গেছে বাজারে।

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে বলেই দেশের বাজারেও দাম বেড়েছে।’

দেশে যেসব ব্যবসায়ী গ্রুপ সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি করে তারা বাড়িয়ে বিক্রি করলে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কোনো কিছু করার থাকে না উল্লেখ করে গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি আমদানিকারকদের ওপর নির্ভরশীল। তারা যদি লিটার প্রতি ২০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় সারাদেশের বাজারেও ২০ টাকা কমবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/ডিএম/জেবি)