নেয়ামত ভূঁইয়া’র কবিতা: স্বপ্নের চিরকুট
আমার স্বপ্নের পুঁচকে চিরকুটের আকার নিত্যই দীর্ঘ হয়,
যদিওবা বার বার ঘটে যায় স্বপ্নের অকাল বিলয়।
যা ঘটে তার বিপরীতে,
কুটিল কুঠার হানে স্বপ্ন বুননের ভিতে।
আশার আহ্নিক নিহত হয়
তাই বার্ষিকের বরাতে নেই কোন সঞ্চয়।
যেখানে করাতের খাঁজ,সেখানেই আমার স্বপ্নের নানা কারুকাজ।
নসিবের নিদারুণ ফেরে
চিরকুটে যুৎসই তালি মেরে
নানা কৌশলে হালনাগাদ করে রাখতেই হয়
গায়ে যতটুকু সয়;
পাছে ঘটে যায় স্বপ্নের অভাবিত প্রমত্ত প্রলয়।
মানুন কিংবা না-ই মানুন
তবুও আমার স্বপ্নের ফিরিস্তিটা একবার প্রাণ পেতে-
হ্যাঁ, কান পেতে নয়; দয়া করে প্রাণ পেতে শুনুন!
পৃথিবীর সকল পরজীবী স্বর্ণলতার নাম হোক রাজন-লতিকা,
সকল কবিতার নাম হোক খেটে খাওয়া মানুষের জীবন কথিকা।
পৃথিবীর সকল রাখাল বালকের নাম হোক রাজপুত্তুর-শাহজাদা,
পৃথিবীর সবগুলো পায়রার পালক হোক ধবধবে দুধ-শাদা।
যমের পথের কাঁটা হয়ে প্রতিটি ভাইয়ের হাতে বাঁধা থাক
সোহাগি বোনের রাঙা রাখি,
প্রতিটি ঘরের নিকানো উঠোনে থাকুক
এক্কা-দোক্কার আঁকাআঁকি।
প্রতিটি বোন হোক স্বনির্ভর অবিচল স্বাধীন সত্ত্বা;
প্রতিটি ভাই হোক বোনের নিশ্চিত নিরাপত্তা।
কালো গোলাপের পাপড়িগুলো হোক
লাল মলাটের বইয়ের মতো আরক্ত,
অনুরাগের অণুতে অণুতে ভালোবাসা হোক
ফাল্গুনি রঙে আরো প্রেমাসক্ত।
প্রেমের পুলকে লাল লাল পাপড়িগুলো হোক আরো প্রসন্ন,
বিচ্ছেদের বিলাপে বিপন্ন বসুধা হোক আরো বিধুর বিষণ্ণ।
শান্তির সংকেত থাক শ্বেত গোলাপের পরাগে পরাগে,
মায়ের আঁচল হোক প্রতিবাদী ব্যানার মিছিলের অগ্রভাগে।
অপেক্ষাকে উপেক্ষা করে কেউ যেন নোঙ্গর না ফেলে
বেণিয়ার বন্দরে;
পথ চেয়ে জেগে আছে যার আকুল চোখ
প্রিতম যেন ফিরে আসে অতৃপ্ত অন্তরে।
ফুটফুটে খুকুর গায়ের টুকটুকে লাল জামার মতো
ফুর ফুরে মেজাজে থাকুক সবগুলো আশা,
রাজনীতির মঞ্চের নায়ক হোক কামার কুমার শ্রমিক চর্মকার
মেহনতি মানুষ আর সঞ্জীবনি চাষা।
মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে জীবনানন্দে উড়াউড়ি করুক
মিহি পালকের মতো ডানামেলা গণতন্ত্র,
পরমতের কাছে হার মেনে মহত্বে বিজয়ী হোক সহিষ্ণু স্বতন্ত্র।
পৃথিবীর সবগুলো প্যারেড গ্রাউন্ড হোক শস্যের বীজতলা,
পৃথিবীর সবগুলো কলম অসুর নিধনে হোক বারুদের শলা,
পৃথিবীর সবগুলো বন্দুকের নল হোক লাঙ্গলের চকচকে ফলা।