ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে পাঁচ দিনব্যাপী মাছধরা উৎসব

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০২০, ১৬:৫৮

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন টাঙ্গন ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়ায় শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী মাছধরা উৎসব। গত বুধবার রাতে শুরু হয় এ উৎসব। চলবে অঅগামী রবিবার পর‌্যন্ত।

বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসেছেন এ উৎসবে। এর মধ্যে কেউ এসেছেন মাছ ধরতে, কেউ এসেছেন মাছ কিনতে।

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের চাপাতি গ্রামে অবস্থিত টাঙ্গন ব্যারেজ। এটি মূলত শুষ্ক মৌসুমে জমিতে সেচ প্রদানের সুবিধার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ করে। প্রতিবছর ভরা মৌসুমে মৎস্য বিভাগের আওতায় এখানকার প্লাবন ভূমিতে সরকারিভাবে মাছ অবমুক্ত করা হয়।

তিন মাস পর মাছ বড় হলে ব্যারেজের গেট খুলে দিলে এখানে শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী মাছধরার এ উৎসব।

প্রতিবছরের মতো এবারও ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়ায় সদর উপজেলার চাপাতি, আটোয়ারী, উপজেলার সাতপাখি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নেমে গেছে। এরপর কম পানিতে চলছে মাছ শিকারের মহোৎসব। প্রতিবছরে এসময় এখানে মাছ শিকারী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলন মেলায় পরিণত হয়।

এবার ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ নীলফামারী জেলার মাছ শিকারীরা এখানে এসে তাবু গেঁড়ে করছে মাছ শিকার। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিকারীরা দেশীয় ফিকা ও লাফি জালসহ বিভিন্ন বাহারী জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে। দেখা গেছে, কেউ কেউ কলাগাছের ভেলা তৈরি করে বিস্তির্ণ এলাকায় মাছ শিকার করছে। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হচ্ছে।

এদিকে, শহরের চাইতে এখানকার মাছের দাম বেশি বলে জানালেন বেশিরভাগ ক্রেতা।

তারা জানান, এখানে প্রতি কেজি টেংরা, গচি, শিং, টনা মাছ ৩/৪’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর শোল ও রুই কাতল মাছ চাওয়া হচ্ছে ৪/৫’শ টাকা। প্রতিকেজি পুঁটি মাছ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে পঞ্চগড়ের বোদা এলাকা থেকে আসা একাধিক মাছ শিকারী বলেন, ‘এবছর মাছের পরিমাণ কম। গতকাল বিকাল থেকে এখন পর্যন্ত মাছ ধরেছি মাত্র দুই কেজি। তাও বড় আকারের মাছ ধরতে পারি নি। স্থানীয়রা কারেন্ট জাল ব্যবহার করে আগেই সব মাছ ধরে খেয়ে ফেলেছে।’

শরিফুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা জানান, এখানে বাজারের চাইতে মাছের দাম বেশি। শহরে যে মাছ ৩’শ টাকায় পাওয়া যায়, সেই মাছ এখানে বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫’শ টাকা কেজি দরে।

অভিযোগ রয়েছে, এখানে মাছ শিকারের সুযোগে ২/১ জন ব্যবসায়ী ঠাকুরগাঁও রোডের আড়ত থেকে মাছ নিয়ে এসে এখানে বেশি দামে বিক্রি করে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।

অন্যদিকে মাছ বিক্রেতা হায়দার আলী বলেন, ‘মাছ শিকারীদের বেশিরভাগই মাছ ধরার পরপরই বিক্রি করে দেয়। আমরা কেজি প্রতি ৫০-১০০ টাকা কম দামে কিনলেও ৫০-১০০ টাকা লাভ করে ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করি।’

টাঙ্গন ব্যারেজ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মোশারুল ইসলাম জানান, এ ব্যারেজে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫০ মণ দেশী মাছ ধরা পড়ে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার ৪৪ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে শুষ্ক মৌসুমে গম, বোরো, সরিষা ও আলু সম্পূরক সেচ প্রদানের উদ্দেশে পাউবো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চাপাতি গ্রামে টাঙ্গন নদীর ওপর এই ব্যারেজ স্থাপন করে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। ১৯৮৪-৮৫ অর্থ বছরে প্রকল্পটির বাস্তাবায়ন কাজ শুরু হয়ে ১৯৯২-৯৩ অর্থ বছরে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এখানে একটি ব্যারেজ, পাঁচটি রেডিয়াল গেট, ৯৮টি ব্রিজ কালভার্ট, দুইটি প্রধান রেগুলেটর গাইড বাঁধ ও সাড়ে তিন কিঃ মিঃ বিতরণ খাল খনন করা হয়। এছাড়া সেকেন্ডারি খাল ৪১ কিঃ মিঃ, টারসিয়ারি খাল ২.১ কিঃ মিঃ নির্মাণ করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/৩০অক্টোবর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :