চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জুলুসে লাখো মানুষের ঢল

প্রকাশ | ৩০ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৪৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

চট্টগ্রামের জশনে জুলুসে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জন্মদিবস উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুসে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) এই শোভাযাত্রায় করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ অংশ নিতে দেখা যায়। সবার মুখে ছিল হামদ, নাত, দরূদ আর স্লোগান। কারো হাতে লাল সবুজের পতাকা।

তবে এবারের জুলুসটা যখন উদযাপিত হচ্ছে তখন কিন্তু রাসূল প্রেমীদের আন্দোলনে উত্তাল পুরো মুসলিম বিশ্ব। তার উপস্থিতি ছিল চট্টগ্রামের মিলাদুন্নবীর (সা.) এ শোভাযাত্রায়ও। কারো হাতে ছিল ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের আহ্বান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, কিংবা কারো হাতে রাসুল (সা.) এর নামে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদী শ্লোগান।

আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে এ জশনে জুলুস (র‌্যালি) বের করা হয়। এটি বিবিরহাট থেকে মুরাদপুর হয়ে ২ নম্বর গেইট মোড় প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মুরাদপুর মোড় হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা মাঠ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

এবারের ৪৮তম পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে জুলুস প্রাঙ্গণ। পরে জামেয়ার মাঠে মাহফিল অুনষ্ঠিত হয়। মাহফিলে দেশবরেণ্য আলেম-ওলামারা বক্তব্য দেন। জুলুস ময়দানে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় শেষে দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

শুরুতে করোনা মহামারির কারণে কর্মসূচি বাদ দেয়া হলেও প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে সীমিত আকারে ঐতিহাসিক জুলুস অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে জুলুস শুরু হতেই তাতে মানুষের ঢল নামে। করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে নবী প্রেমিক মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জুলুসে অংশ নেন।

জুলুসে নেতৃত্ব দেন আনজুমানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ, জামেয়ার অধ্যক্ষ মুফতি অছিউর রহমান আলকাদেরী প্রমুখ।

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ও শুক্রবার জুমার নামাজের কারণে এবার জুলুসের রোডম্যাপ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে এ জশনে জুলুস হয়ে আসছে। ওই বছর নগরীর বলুয়ার দীঘি খানকাহ থেকে আল্লামা তৈয়্যব শাহ (রহ.) এই জুলুসের সূচনা করেন।

আয়োজকরা জানান, স্বাস্থ্যবিধি ও জুলুসের শৃঙ্খলা এবং মাহফিলের আদব রক্ষায় আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের পাশাপাশি কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করেছেন। মুখে মাস্ক না থাকলে জুলুস বা মিলাদে অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে না। বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে কয়েক লাখ মাস্ক।

মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আঞ্জুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া ট্রাস্টের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুহাম্মদ মহসিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, আঞ্জুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি পেয়ার মুহাম্মদ কমিশনার, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়্যদ অছিয়র রহমান আল কাদেরীসহ আঞ্জুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া ট্রাস্ট ও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের নেতারা।

আলোচনা সভায় বক্তারা হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনাদর্শ, ঈদে মিলাদুন্নবীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য, মহামারি করোনাতে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের ভূমিকাসহ নানান বিষয়ে আলোকপাত করেন। পরে জুমার নামাজ শেষে আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।

(ঢাকাটাইমস/৩০অক্টোবর/কেএম)